বৃহস্পতিবার, ০৪ এপ্রিল, ২০১৯, ০২:৪১:৫৯

আশ্চর্যজনক হলেও সত্য বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর পবিত্র ‘মেরাজ’

আশ্চর্যজনক হলেও সত্য বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর পবিত্র ‘মেরাজ’

ইসলাম ডেস্ক:পৃথিবীর শুরু থেকে আজ অবধি যত আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে, এর মধ্যে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ঘটনা হচ্ছে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর পবিত্র ‘মিরাজ’। নবুওয়াতের দশম বছরে রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতের মধ্যপ্রহরে পবিত্র মিরাজ সংঘটিত হয়। বিখ্যাত সাহাবি হজরত ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, রজবের সাতাইশ তারিখ রাতে হঠাৎ আমার কাছে জিবরাইল (আ.) একটি সাদা রঙের ‘বোরাক’ নিয়ে উপস্থিত হলেন। (বোরাক হচ্ছে সাদা রঙের এক প্রকার আরোহণের যন্ত্র, সে প্রতিটি কদম ফেলে দৃষ্টির শেষ সীমানায়) রাসূল (সা.) বলেন, আমি এতে আরোহণ করলাম। এরপর মসজিদে প্রবেশ করলাম এবং সেখানে দু’রাকাত নামাজ আদায় করলাম। এরপর আমি মসজিদ থেকে বের হলে জিবরাঈল (আ.) একটি শরাব এবং একটি দুধের পাত্র নিয়ে আমার সামনে উপস্থিত হলেন। তখন আমি দুধের পাত্রটি গ্রহণ করলাম।

জিবরাঈল (আ.) বললেন, আপনি ফিতরাতকেই গ্রহণ করেছেন। (মুসলিম শরিফ ১ম, পৃ : ৯১) হাদিসে বলা হয়েছে সপ্তম আকাশে নবীজি বায়তুল মামুর দেখতে পান। এ বায়তুল মামুরে দৈনিক সত্তর হাজার ফেরেশতা প্রবেশ করেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত তারা (অর্থাৎ যারা একবার প্রবেশ করে) ফের প্রবেশ করতে পারবেন না। অতঃপর নবীজি ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ বা শেষ সীমা নির্দেশক কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছান। একে একে তিনি জান্নাত ও দোজখ পরিদর্শন করেন। সিদরাতুল মুনতাহায় গিয়ে বোরাকের গতি থেমে যায়। ফেরেশতা জিবরাঈল (আ.) আর এগুতে পারলেন না। সিদরাতুল মুনতাহার কাছেই সবুজ রঙের ‘রফরফ’ নামের একটি কুদরতি সিঁড়ি অপেক্ষমাণ ছিল। এতে চড়ে মহানবী (সা.) একাই আল্লাহ তায়ালার নিকটবর্তী হয়ে আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে একান্ত ভাবের আদান-প্রদান করেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রাসূল (সা.)কে সমগ্র সৃষ্টিজগতের রহস্য বুঝিয়ে দেন। সবশেষে নবীজি আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের বিধান নিয়ে কুদরতি বাহনে আরোহণ করে মাটির বুকে ফিরে আসেন।

এই যে বাইতুল্লাহ থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস, সেখান থেকে ঊর্ধ্বগমন, একে একে সাত আকাশ অতিক্রমসহ রহস্যজনক নানা ঘটনা ঘটেছে, এ সব ঘটেছে অতি অল্প সময়ে। রাতের কিছু অংশে। সে জন্যই এ মিরাজ অতি বিস্মিত এক ঘটনা। যে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিজেই ‘সুবহানাল্লাহ’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। তাফসিরবীদরা এর ব্যাখ্যায় বলেন, আল্লাহ তায়ালা এর মাধ্যমে মুমিনদেরকে বিস্মিত কোনো বিষয় বা ঘটনায় ‘সুবহানাল্লাহ’ বলার শিক্ষা দিয়েছেন।

মিরাজ বিস্ময়কর হলেও অবিশ্বাস্য নয়, তারই প্রমাণ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রজনীযোগে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায়, যার পরিবেশ আমি বরকতময় করেছিলাম, তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য, নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সূরা বনি ইসরাইল : ১)

রহস্যময় এ সফর নিয়ে ইসলামিক স্কলারদের অভিমত, হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর চাচা আবু তালিব ও জীবন সঙ্গিনী খাদিজার (রা.)-এর বিয়োগান্তক ঘটনার পর কুরাইশদের অত্যাচার ও নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই রাসূল (সা.) বাধ্য হয়ে তায়েফের পথে পা বাড়ান। কিš‘ সেখানকার নির্দয় লোকদের নির্মমতায় নবীজির দুঃখ আরও শতগুণ বাড়ে। এমনি এক পরি¯ি’তিতে তাঁর হৃদয় যাতনাকে হালকা করা, তাঁর প্রতি সমবেদনা জানানো, তাঁকে সম্মানিত করা। এছাড়াও আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন দেখিয়ে মহানবী (সা.)-এর হৃদয়ে দৃঢ়তা প্রতিষ্ঠা করার জন্য আল্লাহ তায়ালা নবীজিকে কাছে ডেকে নেন।

নবীজির রহস্যময় এই মিরাজ নিয়ে অবিশ্বাসীদের তর্কের শেষ নেই। নবীজির সময়ে যেমন আবু জাহেলরা মিরাজকে নিয়ে ব্যঙ্গ করেছে, নানা প্রশ্ন উত্থাপন করেছে তেমনই আজকের বিজ্ঞানের যুগেও মিরাজকে অবান্তর বলে নানা থিউরি পেশ করছে। মজার ব্যাপার হ”েছ, তারা নিজেরাই তাদের ঠুনকো থিউরিতে পরাস্ত হচ্ছে। এই যেমন তাদের প্রশ্ন-

* মহানবী (সা.) কিভাবে ‘মাধ্যাকর্ষণ শক্তি’ অতিক্রম করলেন? * মহাশূন্যে বায়ুহীন, অগ্নি ইত্যাদির যে সব স্তর রয়েছে, রক্ত-মাংসে গড়া জড় পদার্থের মানুষের পক্ষে তা অতিক্রম করা কিভাবে সম্ভব হতে পারে? * তিনি কিভাবে এত অল্প সময়ে এত দীর্ঘ পথ অতিক্রম করলেন? * বৈজ্ঞানিক এ সব প্রশ্নের জবাব বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকেই দেয়া হল-

প্রথম প্রশ্ন হল, ‘মধ্যাকর্ষণ শক্তি’। অর্থাৎ পৃথিবী তার মধ্যাকর্ষণ শক্তির বলে সবকিছুকে নিজের দিকে টেনে নামায়। সুতরাং মহানবী (সা.)-এর ঊর্ধ্বাকাশ ভ্রমণ অসম্ভব। তাদের এমন জিজ্ঞাসার জবাব কোরআনের পাশাপাশি বিজ্ঞানেও রয়েছে। বিজ্ঞানই বলছে যে, পৃথিবীর বাইরে কোনো বস্তুকে পাঠাতে হলে তার গতি প্রতি সেকেন্টে ৩৬,৫০০ এমপিএইচ অর্থাৎ ১১.২ কি.মি. বা ৭ মাইল হতে হবে। এরকম গতি হলেই মধ্যাকর্ষণ শক্তিকে অতিক্রম করতে পারে। যেমন রকেটসহ মহাকাশে পাঠানো বিভিন্ন মহাযান। এ সব যানের গতি সেকেন্টে ৭ মাইল বা তারও বেশি। যদি ৭ মাইল গতি নিয়ে রকেট মাধ্যাকর্ষণ ভেদ করতে পারে, তবে এর চেয়ে অনেক অনেকগুণ বেশি গতি নিয়ে আল্লাহর কুদরতি বাহন বোরাক কি মধ্যাকর্ষণ শক্তিকে ভেদ করতে পৃথিবীও তার মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বলে সবকিছুকে নিজের দিকে টেনে নিতে পারে না। সুতরাং মহানবী (সা.)-এর ঊর্ধ্বাকাশ ভ্রমণ অসম্ভব তাদের এমন জিজ্ঞাসার জবাব কোরআনের পাশাপাশি বিজ্ঞানেও রয়েছে। এর চেয়ে অনেক অনেকগুণ বেশি গতি নিয়ে আল্লাহর কুদরতি বাহন বোরাক ও রফরফ মধ্যাকর্ষণ শক্তি ভেদ করেছে।

মিরাজের রাতে নবীজির তৃতীয় বক্ষ বিদারণ হয়। এর মাধ্যমে নবীজির অন্তরে ঊর্ধ্বব জগতের বিশেষ অবস্থা সহ্য করার মতো শক্তি, স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভের ক্ষমতা অর্জনের জন্য জান্নাত থেকে আনা ঈমানী নূর ও ঐশী শক্তি প্রবেশ করান হয়েছিল। আর নবীজি (সা.)-এর মিরাজ ভ্রমণে তামাম জাহানের কর্মকাণ্ড সাময়িকভাবে স্থগিত ছিল। রাব্বুল আলামিন যেখানে ‘কুন’ অর্থাৎ ‘হও’ বলার সঙ্গে সঙ্গে ‘ফায়াকুন’ অর্থাৎ হয়ে যায়, সেখানে না হওয়ার প্রশ্নই আসে না। আল্লাহ তায়ালা তার ঐশিক কুদরতেই এই দীর্ঘ সময়ের সফরকে মুহূর্তের মধ্যে সম্পূর্ণ করেছেন। আল্লাহ বান্দাদের মিরাজ বোঝার তৌফিক দিন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে