মাহে রমজানের সবচেয়ে মহিমান্বিত রাত ২৭ রমজানের রাত। এটি শবেকদর বা লাইলাতুল কদর হিসেবে পরিচিত। এ রাতকে বিশ্বের মুসলমানরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালন করেন। লাইলাতুল কদরের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো—এই গৌরবময় রাতে মানুষের সারা বছরের ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়। এ রাতে মানবজাতির মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ আল-কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।
এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। তুমি কি জানো লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ (সুরা কদর, আয়াত : ১-৩)
তাছাড়া হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ইবাদত করে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (মুসলিম, হাদিস নং: ৭৬০; বুখারি, হাদিস নং: ২০১৪)
লাইলাতুল কদর বোঝার কিছু আলামত হাদিসে বর্ণিত আছে। সেগুলো-
১. এ রাতটি রমজান মাসে। আর এ রাতের ফজিলত কিয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবে।
২. এ রাতটি রমজানের শেষ দশকে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের শেষ দশদিনে তোমরা কদরের রাত তালাশ কর।’ (সহিহ বোখারি)
৩. আর এটি রমজানের বেজোড় রাতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত খোঁজ কর। (বুখারি)
৪. এ রাত রমজানের শেষ সাত দিনে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর (কদরের রাত) অন্বেষণ করতে চায়, সে যেন রমজানের শেষ সাত রাতের মধ্য তা অন্বেষণ করে।’
৫. রমজানের ২৭ শে রজনী লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
ক. উবাই ইবনে কাব (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন , আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি যতদূর জানি রাসুল (সা.) আমাদেরকে যে রজনীকে কদরের রাত হিসেবে কিয়ামুল্লাইল করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন তা হল রমজানের ২৭ তম রাত।’ (সহিহ মুসলিম)
খ. আবদুল্লাহ বিন উমার থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কদরের রাত অর্জন করতে ইচ্ছুক, সে যেন তা রমজানের ২৭ রজনীতে অনুসন্ধান করে। (মুসনাদে আহমাদ)
গ. কদরের রাত হওয়ার ব্যাপারে সম্ভাবনার দিক থেকে পরবর্তী দ্বিতীয় সম্ভাবনা হল ২৫ তারিখ, তৃতীয় হল ২৯ তারিখে। চতুর্থ হল ২১ তারিখ। পঞ্চম হল ২৩ তারিখের রজনী।
৬. সর্বশেষ আরেকটি মত হলো- মহিমান্বিত এ রজনীটি স্থানান্তরশীল। অর্থাৎ প্রতি বৎসর একই তারিখে বা একই রজনীতে তা হয় না এবং শুধুমাত্র ২৭ তারিখেই এ রাতটি আসবে তা নির্ধারিত নয়। আল্লাহর হিকমত ও তার ইচ্ছায় কোনো বছর তা ২৫ তারিখে, কোনো বছর ২৩ তারিখে, কোনো বছর ২১ তারিখে, আবার কোনো বছর ২৯ তারিখেও হয়ে থাকে।
৭. এ রাত গভীর অন্ধকারে ছেয়ে যাবে না।
৮. নাতিশীতোষ্ণ হবে। অর্থাৎ গরম বা শীতের তীব্রতা থাকবে না।
৯. মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হতে থাকবে।
১০. সে রাতে ইবাদত করে মানুষ অপেক্ষাকৃত অধিক তৃপ্তিবোধ করবে।
১১. কোনো ঈমানদার ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা স্বপ্নে হয়তো জানিয়েও দিতে পারেন।
১২. ওই রাতে বৃষ্টি বর্ষণ হতে পারে।
১৩. সকালে হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে। দেখতে পূর্ণিমার চাঁদের মতো। (ইবনু খুজাইমা, হাদিস নং: ২১৯০; বুখারি, হাদিস নং: ২০২১; মুসলিম, হাদিস নং: ৭৬২)