ইসলাম ডেস্ক: মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর নিজ হাতে গড়া শ্রেষ্ঠ মানব ও মুসলিম জাহানের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা.)। যিনি ছিলেন বহুমুখী সৌরভ ও অতুলনীয় সব গুণের অধিকারী এবং তিনি বারে বারে ইসলামকে দিয়েছে নব-জীবন এবং টিকিয়ে রেখেছিলেন ইসলামের প্রকৃত প্রাণ ও চেতনা। এবার জেনে নিন, হযরত আলী (রা.) এর পূর্ণাঙ্গ জীবনী।
নাম ও বংশ পরিচয়:
নাম আলী, পিতার নাম আবু তালিব, মাতার নাম: ফাতিমা বিনতে আসাদ। ৬০০ খৃষ্টাব্দে তিনি মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন হযরত মুহাম্মদ সা. এর চাচাত ভাই। তার ডাক নাম আবু তোরাব ও আবুল হাসান।
ইসলাম গ্রহণ ও মদীনায় গমন:
রাসূল সা. এর নবুওয়াতের শুরুতেই হযরত আলী রা. ইসলাম গ্রহণ করেন। তখন আলী রা. এর বয়স ছিল মাত্র দশ বছর। বালকদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি আর্থিকভাবে অসচ্ছল থাকলেও অসি ও মসি দ্বারা ইসলামের প্রচুর খিদমত করেছেন। তিনিও মাহানবীর সাথে কুরাইশদের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। তিনিই সেই সৌভাগ্যবান সাহাবী আল্লাহর নবী হিজরত করার সময় যাকে মক্কায় তার আমানত আদায়ের জন্য রেখে যান। জীবনের মায়া ত্যাগ করে তিনি নবীজির বিছানায় শুয়ে ছিলেন। আর সবাই তার এই নবীপ্রেম দেখে আশ্চর্য হলো। পরবর্তীতে তিনিও মদীনায় হিজরত করেন। তার আগে তিনি নবীজির কাছে সবার গচ্ছিত আমানত ও পাওনা মিটিয়ে দেন।
আদর্শ ও চরিত্র:
মুসলিম জাহানের চতুর্থ খলীফা হযরত আলী রা. আল্লাহ ও তার রাসূলের একনিষ্ট প্রেমিক ছিলেন। দৃঢ় বিশ্বাসী, রণক্ষেত্রে সাহসী, ব্যক্তিগত আচরণে নম্র, আলোচনা ও বিচারকার্যে ছিলেন সুবিজ্ঞ। নিজের ভিতর ইসলামী গুণাবলীর মহান আদর্শ তিনি স্থাপন করেছিলেন নিজের ভিতর। ছিলেন নবীর প্রায় প্রতিটি যুদ্ধে তার বিশ্বস্ত সঙ্গি। পূর্ববর্তী খলীফাদের সহৃদ পরামর্শদাতা। মোটকথা, তিনি ছিলেন নবীর আদর্শ ও চরিত্রের রঙ্গে পুরো রঙ্গিণ ছিলেন।
আলী রা. এর বিবাহ:
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. হযরত আলী রা. এর সাথে নিজের আদরের কন্যা হযরত ফাতেমা রা. কে বিবাহ দেন। তাদের পরবর্তী দাম্পত্য জীবন ছিলো অত্যন্ত সুমধুর। হযরত ফাতেমার গর্ভে হাসান, হুাসাইন ও মুহসিন নামে তিনজন ছেলে এবং জয়নব ও উম্মে কলসুম নামে দুজন কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। মুহসিন ছোটকালেই ইন্তেকাল করেন। পরবর্তীতে হাসান হুসাইনের দ্বারাই তাদের ব্বংশ বিস্তৃত হয়। আর তারাই ইতিহাসে সৈয়দ নামে পরিচিত।
হযরত আলী রা. এর জ্ঞানের গভীরতা:
আলী রা. ছিলেন অসাধারণ আল্লাহ প্রদত্ব জ্ঞানের অধিকারী। স্মৃতিশক্তি ও জ্ঞান গরিমায় ভরপুর ছিলেন এই নবী জামাতা। কুরআন, হাদীস, কাব্য, দর্শণ ও আইনশাস্রে ছিল তার সর্বিক বিচরণ। নাহু শাস্রের প্রবক্তাও এই মুরতাযা। ছিলেন তাফসীরকারক। ফতোয়ার কাজও করতেন নবীর যামানায়। ওহি লিখকও ছিলেন এই খলীফা। লিখে শেষ করা যাবেনা তার জ্ঞান কীর্তি। কারণ নবী সা. নিজে বলেছেন, আমি জ্ঞানের নগরী আর আলী তার দরজা।
বীরত্ব ও সাহসিকতা:
ইসলামের জন্য হযরত আলী রা. এর অবদান ছিলো গুরুত্বপূর্ণ। তিনি তার সসীম শক্তি ও বীরত্বকে ইসলামের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। রাসূল সা. এর জীবনে প্রায় সব যুদ্ধেই তিনি অংশগ্রহণ করেন এবং প্রতিটি যুদ্ধে তিনি তার শৌর্যবির্যের পরিচয় দেন। বদরের যুদ্ধে তিনি মহানবী সা. এর পতাকা বহন করেন। এ যুদ্ধে তিনি কুরাইশদের বিখ্যাত বীর আমর ইবন আবুদ্দোজা কে পরাজিত ও নিহত করে। এ সময় বীরত্বের জন্য তিনি মহানবী সা. এর কাছ হতে জুলফিকার তরবারি লাভ করেছিলেন। এমনি ভাবে তিনি উহুদ, খন্দক, খায়বার যুদ্ধে শত্রুকে পরাজিত করে বিখ্যাত কামুস দূর্গ জয় করে অসাধারণ সৌর্য বীর্য প্রদর্শন করেন। তার বীরত্বে সন্তুষ্ট হয়ে মহানবী সা. তাকে আসাদুল্লাহ বা আল্লাহর বাঘ উপাধিাতে ভূষিত করেন।
হযরত আলী রা. শাহাদাত:
বিদ্রোহী খারেজীগণ হযরত আলী মুআবিয়া ও আমর ইবনুল আস রা. কে ইসলামের শান্তি শৃঙ্খলা বিনাসের কারণ বলে দায়ী করে। তাই তারা এ তিনজনকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে। সেমতে কুফা, দামেষ্ক ও ফুসতাত প্রত্যেকে নিজ নিজ মসজিদ হতে বের হওয়ার পথে তাদেরকে শেষ করে দেয়ার ইচ্ছা করে আততায়ীরা। সৌভাগ্যক্রমে আমর ইবনুল আস সেদিন অনুপস্থিত ছিলেন। মুআবিয়া রা. আততায়ীর হাতে আহত হলেও প্রাণে বেচে যায়। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা! আবদুর ইবনে মুলজামের খঞ্জরের আঘাতে হযরত আলী রা. গুরুতর আহত হন। সেই আঘাতেই ৬৬১ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ জানুয়ারী তিনি শাহাদাত লাভ করেন। আর এই মাহান খলীফার মৃত্যুর সাথে সাথেই সীরাতে মুস্তাকীমের উপর প্রতিষ্ঠিত খোলাফায়ে রাশেদীনের পবিত্র খেলাফতের পরিসমাপ্তি ঘটে।
২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/