ইসলাম ডেস্ক: মসজিদ মুসলমানদের ধর্মীয় কার্যাবলীর প্রাণকেন্দ্র। মসজিদের উৎকর্ষের ক্ষেত্রে, সেই সপ্তম শতাব্দির সাদাসিধে খোলা মসজিদে কাবা বা মসজিদে নববী থেকে বর্তমানে এর প্রভূত উন্নয়ন ঘটেছে।
বিশ্বে অনেক পুরনো মসজিদ এখনো অক্ষত রয়েছে। তাঁর মধ্যে চীনের ‘হুয়াইশেং মসজিদ’অন্যতম। চীনে ইসলামের প্রবেশ ঘটে ব্যবসায় ও ধর্মীয় প্রচারণার পথে। ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞান ও চায়নিজ স্বকীয়তায় এখানে মুসলমানরা দেশীয় নামে পরিচিত হয় বেশি। তাদের থাকে পারিবারিক পরিচিতিতে আরবি নাম। এতে বোঝা যায়, মুসলমানদের উদারতা ও মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা।
জ্ঞানের প্রয়োজনে চীন ভ্রমণের সুবাদেই চীনে ইসলাম বিস্তার সম্ভব হয়। একটি সূত্রে জানা যায়, খ্রিস্টীয় ৬২৬ বা তৃতীয় হিজরির কাছাকাছি সময়ে ইসলাম প্রচারকরা চীন উপকূলে অবতরণ করেন। তাদের দলনেতা ছিলেন হজরত আবু ওয়াক্কাস (রা.)। তার সঙ্গে আরো তিনজন বিশিষ্ট সাহাবি ছিলেন। তিনি ক্যান্টন বন্দরে অবস্থান করেন। তার প্রতিষ্ঠিত মসজিদটি এখনো সমুদ্রতীরে মিনার উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এবং এর অদূরেই রয়েছে তার ও কয়েকজন সাহাবির পবিত্র মাজার।
চীন বিশ্বের অন্যতম জনসংখ্যাবহুল দেশ। চীনে মুসলিমরা তৃতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জনগোষ্ঠী। কম-বেশি চীনের সবখানেই মুসলমান রয়েছে, তবে তাদের অধিকাংশের বাস সিন জিয়াংয়ে। তবে চীনের হুই, উইঘুর, কাজাক, উজবেক, তাজিক, তাতার, কিরগিজ, ডোংসিয়াং, সালার, বোনান প্রভৃতি সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মধ্যে ইসলামের অনুসারীর সংখ্যা বেশি। ইসলামের সূচনালগ্ন থেকে চীনের মুসলমানদের রয়েছে হাজার বছরের ঐতিহ্য এবং তারা চীনে ছোট-বড় নানা রকম মসজিদ তৈরি করেছেন। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী চীনে ৩০ হাজারের বেশি মসজিদ রয়েছে।
বিশিষ্ট সাহাবি আবু ওয়াক্কাস (রা.) নির্মিত হুয়াইশেং মসজিদ বিশ্বের প্রাচীনতম মসজিদগুলোর অন্যতম। মসজিদটি আনুমানিক ১৩০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন। চীনা ভাষায় হুয়াইশেং অর্থ ‘পবিত্রতাকে স্মরণ করুন’। এ জন্য মসজিদটিকে ‘স্মরণী মসজিদ’ বা Memorial Mosqueবলা হয়। মসজিদটি ‘নূর টাওয়ার মসজিদ’ নামেও সুপরিচিত। কেননা প্রাচীনকালে এ মসজিদের সুউচ্চ মিনারে স্থাপিত বাতি বা ফানুস দেখে পার্শ্ববর্তী ঝুজিয়াং নদীতে চলাচলকারী নাবিকরা নৌপথের নির্দেশনা পেতেন। এ জন্য মসজিদটিকে ‘বাতিঘর মসজিদ’ও বলা হয়। অগ্নিকাণ্ডসহ নানা বিপর্যয়ে হুয়াইশেং মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ১৩৫০ ও ১৬৯৫ সালে এটিকে পুনর্নির্মাণ করা হয়।