ইসলাম ডেস্ক: কুতুবে রব্বানি মাহবুবে সুবহানি শায়খ সাইয়্যিদ আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) (৪৭১-৫৬১ হিজরি) মুসলিম বিশ্বের পতন যুগে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইসলামের শাশ্বত আদর্শকে।
তার মাধ্যমেই ইসলাম পূর্বের অবস্থায় ফিরে এসেছিল। এ জন্যই তার উপাধি ছিল মুহীউদ্দীন। হজরত আলী (রা.)-এর শাহাদাতের ৭০০ বছর পর হজরত বড় পীরের মাধ্যমেই সেই জায়গা পূরণ হয়েছে।
১ রমজান ৪৭১ হিজরিতে ইরাকের অন্তর্গত জিলান জেলার কাসপিয়ান সমুদ্র উপকূলের নাইদ নামক স্থানে বড়পীর হজরত আবদুল কাদের জিলানী (র.) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হজরত আবু সালেহ মুছা জঙ্গি (র.) ও মাতার নাম সৈয়দা উম্মুল খায়ের ফাতেমা (র.)। স্রষ্টার চূড়ান্ত দীদার লাভের উদ্দেশ্যে ১১ রবিউস সানি ৫৬১ হিজরি রোজ সোমবার ইহজগৎ ত্যাগ করেন। বর্তমানে ইরাকের বাগদাদ শহরে তাঁর মাজার শরিফ রয়েছে। গাউসুল আজম বড়পীর হিসেবে তিনি সবার কাছে পরিচিত।
গাউসুল আযম বড় পীর হজরত আবদুল কাদের জিলানি (র.)-এর ওফাত দিবস বিশ্বের মুসলমানদের কাছে ‘ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম’ নামে পরিচিত।
‘ইয়াজদাহম’ ফারসি শব্দ, যার অর্থ এগারো। ‘ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম’ বলতে রবিউস সানি মাসের এগারো-এর ফাতেহা শরিফকে বোঝায়। এই পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম শরিফ ইমামুল আউলিয়া পীরানে পীর গাউসুল আযম দস্তগীর হজরত মুহিউদ্দিন আবদুল কাদের জিলানি (র.)-এর স্মরণে পালিত হয়। বাংলাদেশে আগামী সোমবার (৯ ডিসেম্বর) দেশে ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম পালিত হবে।
গাউসুল আজম আবদুল কাদের জিলানীকে (র.) একদা এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, ফকির সম্পর্কে। জবাবে তিনি বললেন, ফকির শব্দের ‘ফে’ হরফ বলে যে, তুমি মহান আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নিজেকে ফানা করে দাও এবং আল্লাহ ব্যতীত যাবতীয় সৃষ্ট বিষয়বস্তু হতে হৃদয়কে মুক্ত করে ফেল। ‘ক্বাফ’ হরফ বলে যে, তোমার কলবকে আল্লাহ-প্রেমের শক্তি দ্বারা মজবুত কর এবং তার সন্তুষ্টিতেই সদাসর্বদা নিয়োজিত থাক। ‘ইয়া’ বলে যে, প্রত্যাশা আল্লাহরই নিকট কর এবং তাঁরই অবলম্বন এবং লোভ-লালসা, কামনা-বাসনা প্রভৃতি হীন প্রবৃত্তি হতে নিজেকে মুক্ত করে আল্লাহর দিকে রুজু কর।
গাউসুল আজম আবদুল কাদের জিলানী (র.) হলেন ইসলাম ধর্মের অন্যতম প্রধান আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ইসলামের অন্যতম প্রচারক হিসেবে সুবিদিত। এ কারণে তাঁকে ‘গাউসুল আজম’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। তাকে ‘বড়পীর হজরত আবদুল কাদের জিলানী (র.)’ নামেও অভিহিত করা হয়। আধ্যাত্মিকতায় উচ্চমার্গের জন্য বড়পীর, ইরাকের অন্তর্গত ‘জিলান’ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করায় জিলানী, সম্মানিত হিসেবে আবু মোহাম্মদ মুহিউদ্দীন প্রভৃতি উপাধি ও নামেও তাকে সম্বোধন করা হয়। আবদুল কাদের জিলানী (র.) হিজরি ৪৭১ সনের রমজান মাসের ১ তারিখে ইরাকের জিলান শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবু সালেহ মুছা জঙ্গি এবং মাতার নাম সৈয়দা উম্মুল খায়ের ফাতেমা। তাঁর মাতা ছিলেন হাসান ইবনে আলীর বংশধর সৈয়দ আবদুল্লাহ সাওমেয়ির কন্যা।
কথিত আছে যে, ভূমিষ্ঠ হয়েই রোজা রাখেন গাউসুল আজম আবদুল কাদের জিলানী (র.)। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় জিলানবাসীর কেউ রমজানের চাঁদ দেখতে পায়নি। সবাই রোজা রাখা না রাখার বিষয় নিয়ে সংশয়ের মধ্যে পড়ে গেলেন। এমতাবস্থায় রাতের শেষাংশে সুবহে সাদেকের আগে অর্থাৎ ১ রমজান পৃথিবীতে আসেন হজরত আবদুল কাদের জিলানী (র.)। শিশু আবদুল কাদের জিলানী (র.) জন্মের পর সুবহে সাদেকের আগ পর্যন্ত দুধ ও মধু পান করেন। কিন্তু সুবহে সাদেকের পর তাকে আর কিছু খাওয়ানো যায়নি। এ আশ্চর্যজনক খবর ছড়িয়ে পড়ে সব জায়গায়। সবাই বুঝতে পারে মাহে রমজান শুরু হয়েছে।
অনেকেই বলে থাকেন নবীজিকে স্বপ্নে দেখেছিলেন গাউসুল আজম আবদুল কাদের জিলানী (র.)। ৫২১ হিজরির ১৬ শাওয়াল রোজ মঙ্গলবার রসুল (সা.) স্বপ্নযোগে গাউসুল আজম আবদুল কাদের জিলানীকে (র.) বলেন, হে আবদুল কাদের! তুমি মানুষকে কেন আল্লাহর পথে আহ্বান করছ না। মানুষকে কেন বঞ্চিত করছ। আবদুল কাদের (র.) বলেন, আমি রসুল (সা.) ও আলীর (রা.) আওলাদ। আমি তো আরবি জানি না। যদি ইরাকের লোকজন তিরস্কার করেন।
তাত্ক্ষণিক রসুল (সা.) বলেন, আবদুল কাদের তুমি মুখ খোল। রসুল (সা.) কিছু একটা পড়ে ৬ বার মুখের মধ্যে ফুঁক দিলেন এবং রসুল (সা.)-এর মুখের লালা আবদুল কাদের জিলানীর মুখে লাগিয়ে দিলেন। অতঃপর বললেন, মানুষকে হিকমত এবং উত্তম উপদেশের মাধ্যমে তোমার প্রভুর পথে পরিচালিত কর।
সে সময় ইরাক শিক্ষা-দীক্ষা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে খুব উন্নত ছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে পড়াশোনা ও ব্যবসার জন্য মানুষ বাগদাদ আসত। পড়াশোনার উদ্দেশ্যে হজরত আবদুল কাদের জিলানী (র.) ব্যবসায়িক কাফেলার সঙ্গে বাগদাদ যাওয়ার পথে ডাকাতের কবলে পড়েন। তার মা সব সময় সত্যি কথা বলার নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাই তিনি ডাকাত দলের কাছে নিজের কাছে গচ্ছিত স্বর্ণ মুদ্রার কথা বলেন। ডাকাত সরদার আশ্চর্যান্বিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে যুবক! তুমি তো মিথ্যা কথা বলে আমার কাছ থেকে স্বর্ণ মুদ্রা লুকাতে পারতে।
হজরত আবদুল কাদের জিলানী (র.) বললেন, মিথ্যা কথা বলতে আমার মা নিষেধ করেছেন। এ কথা শুনে ডাকাত সরদার বললেন, মায়ের আদেশ যুবক তুমি এভাবে পালন কর। নিশ্চয়ই তুমি আল্লাহর আদেশ আরও যত্নের সঙ্গে পালন কর। আর আমি ও অন্য ডাকাতরা তো আল্লাহর আদেশই পালন করি না। মায়ের কথা তো অনেক দূরের কথা। এই বলে ডাকাত সরদার আফসোস করতে থাকেন ও বলেন, হে বালক! তুমি সাধারণ কোনো মানুষ নও। তুমি আমাকে কলেমা পড়াও। ডাকাত সরদারের সঙ্গে আরও ৬০ জন অশ্বারোহী ডাকাত ছিলেন। সবাই একসঙ্গে কলেমা পড়ে মুসলমান হয়ে যান।
গাউসুল আজম আবদুল কাদের জিলানী (র.) একাধারে ৪০ বছর পর্যন্ত এশার নামাজের অজু দিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করেছেন। তিনি প্রতি রাতের একটা সময় জিকির ও মোরাকাবা করে কাটাতেন।
যৌবনের অধিকাংশ সময় রোজা রেখে কাটিয়েছেন। যখন নফল নামাজ আদায় করতেন সূরা ফাতেহার পর সূরা আর রহমান, সূরা মুজাম্মিল কিংবা সূরা ইখলাস পড়তেন। তন্দ্রার ভাব এলে কোরআন তেলাওয়াত করতেন।
বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচার ও প্রসারে অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। কোরআন সুন্নাহ অনুযায়ী মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকেন। মানুষের অন্তরে আল্লাহ ও রসুল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা তৈরি করেছিলেন।
সঠিক পথে চলার জন্য মানুষকে বিভিন্ন আমল বাতলিয়ে দিতেন। হজরত আবদুল কাদের জিলানী (র.) যখন দুনিয়ার জীবন ত্যাগ করে পরপারে যান তখন হজরত আবদুল কাদের জিলানীর (র.) ভক্ত-অনুসারীরা তাঁর আমল ও চরিত্রকে সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে কাদেরীয়া তরিকা প্রবর্তন করেন।
ছোট থেকেই ছিলেন আধ্যাত্মিক ক্ষমতার অধিকারী
সত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র গাউসুল আজম আবদুল কাদের জিলানী (র.) শিশুকাল থেকেই ছিলেন আধ্যাত্মিক ক্ষমতার অধিকারী। জিলান নগরীর একটি মক্তবে শিক্ষা করার জন্য ভর্তি হন। ইসলামী জ্ঞানবিদদের দৃষ্টিকোণ থেকে একথাও জানা যায় যে, তাঁকে প্রথমে শিক্ষার উদ্দেশ্যে মক্তবে পাঠানো হলে যাত্রাপথে একদল ফেরেশতা এসে তাঁকে বেষ্টন করে রইলেন এবং তাঁকে বেষ্টন করে শিক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে গেলেন। এ কথাও অনেকে বলে থাকেন যে, গাউসুল আজম আবদুল কাদের জিলানী (র.)কে যখন মক্তবে নিয়ে যাওয়া হয় তখন মক্তবে ছাত্রদের সংখ্যা অনেক ছিল। বসার কোনো স্থান না থাকায় তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন তখন হঠাৎ তাঁর সঙ্গী ফেরেশতারা গায়েব হতে আওয়াজ দিলেন, তোমরা বিশ্বনিয়ন্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রিয় বান্দার বসার জন্য জায়গা করে দাও। সত্যি এহেন অদৃশ্য বাণী শুনে শিক্ষক-ছাত্ররা চমকে উঠেছিলেন। পরবর্তীতে ছাত্ররা গাউসুল আজম আবদুল কাদের জিলানী (র.)কে জায়গা করে দিলেন। একেবারে প্রাথমিক স্তরে পড়া অবস্থায়ই আলিফ-লাম-মীম হতে আরম্ভ করে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল-কোরআনের পনেরো পারার শেষ পর্যন্ত মুখস্থ পড়ে ফেলতে পারতেন। তাঁর এই প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে ওস্তাদজি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কীভাবে কার কাছ থেকে এত সুন্দরভাবে কোরআন পড়া শিখেছ এবং কীভাবে ১৫ পারা কোরআন শরিফ মুখস্থ করলে? এ কথার জবাবে গাউসুল আজম আবদুল কাদের জিলানী (র.) বলেছিলেন, আমি প্রতিদিন কোরআন তেলাওয়াত করে থাকি, গর্ভাবস্থায় মায়ের পেটের মধ্যে থেকে আমি মায়ের তেলাওয়াত শুনে শুনে আমারও মুখস্থ হয়ে গেছে। অর্থাৎ তিনি ১৫ পারা হাফেজ হয়েই পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হন।
যেভাবে শয়তানকে বোকা বানিয়েছিলেন
গাউসুল আজম বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (র.) শয়তানকে বোকা বানিয়েছিলেন! কথিত আছে যে, একবার এক মরুপ্রান্তরে তিনি ভ্রমণ করছিলেন। ইবাদত-বন্দেগি ও ধ্যানসাধনার এক বিশেষ ক্ষণে অদৃশ্য কোনো স্থান থেকে আওয়াজ আসে, ‘হে আবদুল কাদের আমি তোমার প্রতি সন্তুষ্ট। সাধনার মাধ্যমে তুমি আজ এমন একপর্যায়ে উপনীত হয়েছ যে, আমি আল্লাহ তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেছি। অতএব, এখন থেকে শরিয়তের কোনো বিধান তোমার ওপর বাধ্যতামূলক নেই। তুমি ইবাদত কর বা না কর, এতে কিছু আসে যায় না। যে কোনো ধরনের কাজে তুমি এখন থেকে স্বাধীন।’ এ ধরনের কথা শুনে হজরত জিলানী (র.) খুব দৃঢ়তার সঙ্গে আল্লাহতায়ালার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। অদৃশ্য আওয়াজটি বন্ধ হয়ে যায়। তিনি বলতে থাকেন, ‘হে অভিশপ্ত শয়তান, তোর কুমন্ত্রণা থেকে আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করি। তোর এ প্রস্তাব শুনেই আমি বুঝতে পেরেছি যে, এ তোর ভয়াবহ কৌশল। আমাকে পথচ্যুত করার এক মারাত্মক কূটচাল। কেননা, সাধনার কোনো পর্যায়েই ইবাদত-বন্দেগির দায়িত্ব কারও ওপর থেকে তুলে নেওয়া হয় না। শরিয়ত অমান্য করার নির্দেশ আল্লাহ কখনো কোনো ব্যক্তিকে দেন না। তোর আওয়াজ শোনামাত্রই আমি বুঝতে পেরেছি যে, এমন বাণী আল্লাহর পক্ষ থেকে আসতে পারে না। এ নিশ্চয়ই শয়তানের কৌশল।’ এ কথা শুনে শয়তান বলল, ‘এ ধরনের কথা বলে এর আগে আমি এই প্রান্তরেই অন্তত ২৭ জন সাধকের সর্বনাশ করেছি। আজ আপনি নিজ প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও উচ্চপর্যায়ের সাধনাবলেই রক্ষা পেয়ে গেলেন, হে যুগশ্রেষ্ঠ ওলি।’ তখন তিনি বললেন, আল্লাহর খাস রহমত ছাড়া ধূর্ত প্রতারক শয়তান থেকে বেঁচে থাকার কোনো শক্তি ও ক্ষমতা আমার নেই।
গাউসুল আজম (র.) এর বাণীসমূহ
— একদল অজ্ঞ, মূর্খ এবং ভণ্ডপীর, ভণ্ডদরবেশ বলে বেড়ায় যে, ইলমে শরিয়ত এবং ইলমে তরিকত দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। এর একটির সঙ্গে অন্যটির কোনো সম্পর্ক নেই। এমন কি এরা মনে করে পরস্পরের সম্পর্কের কোনো প্রয়োজনও নেই। তারা শরিয়তের প্রয়োজনীয়তার ওপর তেমন গুরুত্ব দেয় না। শরিয়তকে তারা সব সময় অবজ্ঞা করে চলে। বলে বেড়ায়, আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য একমাত্র উপায় ইলমে তরিকতের অনুসারী হওয়া। তাদের প্রচারের ভাব-ভঙ্গিতে সাধারণ লোক মনে করে যে, তারা না জানি ইলমে তরিকত সম্পর্কে কত বিজ্ঞ। মূলত এরা সে সম্পর্কে কোনোই জ্ঞান রাখে না। তাদের এ কথা যে তাদের অজ্ঞতা ও মূর্খতা বৈ কিছুই নয়।
— নিজের কল্যাণের স্বার্থে এবং আজাব থেকে রেহাই পেতে যথাসম্ভব কম কথা বল। তুমি তোমার আমলনামার পাতাগুলো আড্ডাবাজি দিয়ে পূর্ণ কর না। কেন না, চূড়ান্ত হিসাব-নিকাশের দিনে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে তা হলো তোমার জীবনে আল্লাহকে স্মরণ করার মুহূর্তগুলো।
— আপনার বলা কথাগুলোই প্রকাশ করে দিবে আপনার অন্তরের গভীরে কী আছে।
— যখন কোনো বান্দা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, তা আসলে কেবল মুখে উচ্চারিত কোনো বিষয় থাকে না, বরং আল্লাহর করুণা ও রহমত প্রাপ্তির কৃতজ্ঞতা স্বীকার অন্তর থেকেও করা হয়।
মায়ের প্রভাব
সন্তানের ওপর মায়ের প্রভাবই থাকে সবচেয়ে বেশি। যে কারণে সন্তান যাতে সুসন্তান হয়ে গড়ে ওঠে তা একমাত্র মায়ের পক্ষেই নিশ্চিত করা সম্ভব। মুসলিম বিশ্বের অন্যতম বুজুর্গ হিসেবে হজরত আবদুল কাদের জিলানীর গড়ে ওঠার পেছনে মায়ের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। বলা হয়, হজরত আবদুল কাদের জিলানী (র.) যখন মাতৃগর্ভে ছিলেন, তখন তাঁর পুণ্যময়ী জননী কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করতেন। মাতৃগর্ভে থাকা শিশু তা মুখস্থ করে ফেলতেন। এভাবে জিলানী (র.) মায়ের গর্ভে থাকাবস্থায় পবিত্র কোরআন শরিফের একটা বড় অংশ মুখস্থ করে ফেলেন। জন্মের পরই তাঁর বাবা ইন্তেকাল করেন। তাঁর পুণ্যময়ী মা-ই তাকে লালন-পালন এবং প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করেন। সে শিক্ষার কারণেই পরবর্তী জীবনে উন্নতি সাধনে সক্ষম হন। মমতাময়ী জননী তাঁকে সদা সত্য কথা বলতে শিখিয়েছেন। উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য মা তাকে বাগদাদের উদ্দেশে পাঠান। তখন তাঁর জামার পকেটের নিচে ৪০টি স্বর্ণ মুদ্রা ভরে দিয়েছিলেন। কিশোর জিলানী (র.) এক যাত্রীদলের সঙ্গে বাগদাদে রওনা হলেন। পথিমধ্যে যাত্রীদের কাফেলা ডাকাত দলের দ্বারা আক্রান্ত হয়। ডাকাতরা যাত্রীদের কাছ থেকে মালামাল লুটে নেয়। অল্প বয়সের বালক হজরত আবদুল কাদের জিলানী (র.)-কে কিছু বলল না ডাকাত দল। একজন ডাকাত কৌতূহলবশত তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, হে বালক! তোমার কাছে কী আছে? উত্তরে তিনি বললেন, আমার কাছে ৪০টি স্বর্ণ মুদ্রা আছে। এই দেখ আমার জামার ভিতরে সেলাই করা আছে। তোমরা সেগুলো নিয়ে যাও। সে ডাকাত হজরত আবদুল কাদের জিলানী (র.)-কে তাদের সরদারের কাছে নিয়ে যায়। সরদার মুদ্রাগুলো বের করে হাতে নিয়ে বলল, হে বালক, তুমি যদি না বলতে তবে আমরা তোমার এ স্বর্ণ মুদ্রার খবর জানতাম না। তুমি কেন স্বর্ণ মুদ্রার কথা বললে। হজরত আবদুল কাদের জিলানী (র.) বললেন, আমার মা আমাকে মিথ্যা বলতে নিষেধ করেছেন। মায়ের কারণেই জগদ্বিখ্যাত বুজুর্গ হতে পেরেছিলেন তিনি।
গাউসুল আজমের বংশধর বাংলাদেশে
চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলাধীন শ্রীপুর গ্রামে হজরত রাস্তি শাহ (র.)-এর মাজার শরিফ অবস্থিত। এই মহান ইসলাম প্রচারক রাস্তি শাহ সম্পর্কে যতটুকু জানা যায়, তার জন্ম ইরাকের বাগদাদ শহরে। তিনি ছিলেন হজরত বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (র.)-এর বংশধর। তার পিতা ছিলেন বড়পীর সাহেবের ভাগিনা। মাজারে রক্ষিত একটি বোর্ড থেকে জানা যায়, তার জন্ম ১২৩৮ সালে এবং এদেশে আগমন করন ১৩৫১ সালে। বহু অলৌকিক ঘটনা এলাকাবাসীকে প্রত্যক্ষ করিয়ে তিনি ১৩৮৮ সালে ইন্তেকাল করেন। হজরত শাহজালালের সঙ্গে যে ১২ জন আউলিয়া এদেশে আসেন, তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম। তিনি যখন এদেশে আসেন তখন দিল্লির সুলতান ছিলেন ফিরোজ শাহ এবং বাংলার সুবেদার ছিলেন ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ। রাস্তি শাহর অন্যতম সহচর ছিলেন সৈয়দ আহমেদ তানভী। ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি প্রথম ইয়েমেন আসেন ৭৩৮ বঙ্গাব্দে। ইয়েমেন থেকে স্বপ্নাদেশপ্রাপ্ত হয়ে তিনি ইসলাম প্রচারে এদেশে এসেছিলেন।