ইসলাম ডেস্ক : আমাদের প্রাণপ্রিয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম নিজ হাতে আজওয়া খেজুরের বীজ রোপণ করেছিলেন। এ খেজুরের বীজ রোপন ও জন্মের পেছনে রয়েছে বিশেষ কারণ। যার ফলে এ খেজুরের রয়েছে বিশেষ বরকত ও ফজিলত।
হযরত সালমান ফার্সীর (রা:) মালিক ছিল একজন ইয়াহুদী। হযরত সালমান ফার্সী যখন মুক্তি চাইল তখন ইয়াহুদী এই শর্তে তাকে মুক্তি দিতে চাইল যে, যদি তিনি নির্দিষ্ট কয়েক দিনের মধ্যে নগদ ৬০০ দিনার দেন এবং ত্রিশটি খেজুর গাছ রোপন করে আর খেজুর গাছে খেজুর ধরলে তবেই সে মুক্ত। আসলে ইহুদির মুক্তি দেবার ইচ্ছা ছিল না।
কেননা সালমান ফার্সীর(রা:) পক্ষে ৬০০ দিনার যোগাড় করা কঠিন ছিল। আর ৬০০ দিনার যোগাড় করলেও খেজুর গাছ রোপন করে তাতে ফল ধরে ফল পাকানো অনেক সময়ের ব্যাপার। যাক। হযরত সালমান ফার্সী(রা:) রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে ঘটনা বর্ণনা করলেন। রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৬০০ দিনারের ব্যবস্থা করলেন। তারপর হযরত আলী (রাঃ) কে সাথে নিয়ে গেলেন ইয়াহুদীর কাছে।
ইহুদী এক কাঁদি খেজুর দিয়ে বলল এই খেজুর থেকে চারা উৎপন্ন করে তবে ফল ফলাতে হবে। রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখলেন যে, ইহুদীর দেয়া খেজুরগুলো সে আগুনে পুড়িয়ে কয়লা করে ফেলছে যাতে চারা না উঠে। রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুরের কাঁদি হাতে নিয়ে আলী (রাঃ) কে গর্ত করতে বললেন আর সালমান ফার্সী (রা:) কে বললেন পানি আনতে।
আলী (রাঃ) গর্ত করলে রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে প্রতিটি গর্তে সেই পোড়া খেজুর রোপন করলেন। রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালমান ফার্সী (রা:) কে এ দির্দেশ দিলেন যে, বাগানের শেষ প্রান্তে না যাওয়া পর্যন্ত তুমি পেছন ফিরে তাকাবে না। সালমান ফার্সী (রা:)পেছনে না তাকিয়ে পানি দিতে লাগলেন।
বাগানের শেষ প্রান্তে যাওয়ার পর তিনি তাকিয়ে দেখলেন যে প্রতিটি গাছ খেজুরে পরিপূর্ণ। আর খেজুরগুলো পেকে কালো বর্ণ হয়ে গেছে। এই খেজুর পৃথিবীর সবচেয়ে দামি খেজুর। আর স্বাদের দিক দিয়েও সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু। আর কেনইবা দামী হবে না? যে খেজুর রাসুলের নিজ হাতে রোপন করা।
আলী (র) আমির ইবন সাদ তার পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে কয়েকটি আজওয়া খুরমা খাবে ঐ দিন রাত পর্যন্ত কোন বিষ ও যাদু তার কোন ক্ষতি করবে না । অন্যান্য বর্ননাকারীগণ বলেছেনঃ সাতটি খুরমা । সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৩৫৬…
জুমুআ ইবন আব্দুল্লাহ (র)- সাদ (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যাহ সকালে সাতটি আজওয়া (উৎকৃষ্ট) খেজুর খাবে, সেদিন তাকে কোন বিষ ও যাদু ক্ষতি করবে না এর দ্বারা।
সুতরাং আজওয়া খেজুরের উপকারীতা হাদিস দ্বারা প্রমানীত তাই রোগের প্র'তিষেধক হিসাবে ব্যবহার করতে পারি। তাছাড়া অন্য এক হাদিসে হ্রদ রোগের জন্য এ আজওয়া খেজুর ব্যবহার করতে বলেছেন।
আজওয়া খেজুর সম্পর্কে আরও অবাক করা কিছু তথ্য- ১-লাংস ও ক্যাভিটি ক্যান্সার থেকে শরীরকে দূরে রাখে। ২-অন্তঃসত্ত্বা নারীর সন্তান জন্মের সময় আজওয়া খেজুর খেলে জরায়ুর মাংসপেশির দ্রুত সংকোচন। প্রসারণ ঘটিয়ে, প্রসব হতে সাহায্য করে। ৩-ফুসফুসের সুরক্ষার পাশাপাশি মুখগহ্বরের ক্যান্সার রোধ করে। ৪-প্রসব-পরবর্তী কোষ্ঠকাঠিন্য ও র’ক্ত’ক্ষরণ কমিয়ে দেয়। ৫-এতে আছে ডায়েটরই ফাইবার যা কোলেস্টোরল থেকে মুক্তি দেয়।
৬-এতে রয়েছে ৭৭.৫% কার্বহাইড্রেট, যা অন্যান্য খাদ্যের বিকল্প শক্তি হিসেবে কাজ করে। ৭-এতে রয়েছে ৬৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ৭.৩ মিলিগ্রাম লৌহ – যা হাড়, দাঁত, নখ, ত্বক, চুল ভালো রাখতে সহায়তা করে। ৮-স্নায়ুবিক শক্তি বৃদ্ধি করে। ৯-আজওয়া খেজুর হৃদরোগের ঝুঁ’কি কমায়। ১০-হজমশক্তি বৃদ্ধি করে, লিভার ও পাকস্থলীর শক্তিবর্ধক।
১১-ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। ১২-ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ এই ফল দৃষ্টিশক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ১৩-রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ১৪-নারীদের শ্বেতপ্রদর ও শিশুর রিকেট নিরাময়ে খেজুরের কার্যকারিতা প্রশ্নাতীত। ১৫-পেটের গ্যাস, শ্লেষ্মা, কফ দূর করে, শুষ্ক কাশি এবং এজমায় উপকারী।
১৬-উচ্চ মাত্রার শর্করা, ক্যালরি ও ফ্যাট সম্পন্ন খেজুর জ্বর, মূত্রথলির ইনফেকশন, যৌ’ন’রোগ, গনোরিয়া, কণ্ঠনালির ব্যথা বা ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা, শ্বাসকষ্ট প্র'তিরোধে বেশ কার্যকরী। ১৭-নে’শা’গ্র’স্তদের অঙ্গক্ষয় প্র'তিরোধ করে আজওয়া খেজুর। স্বাস্থ্য ভালো করতে বাড়িতে তৈরী ঘিয়ে ভাজা খেজুর ভাতের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
সব চেয়ে বড় কথা হল এ খেজুরের গাছের বীজগুলো হুজুর পাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে বপন করেছেন, সে হিসাবে অন্তরে মহব্বত নিয়ে বরকতের জন্য ও খেতে পারেন। আর শেফার নিয়তে তো খেতেই পারেন নিঃসংকোচে।