ইসলাম ডেস্ক : আল্লাহ পাক বলেন, রমজানের সম্মানার্থে এ মাসে যেকোনো ভালো কাজের প্রতিদান আমি ৭০ গুণ বৃদ্ধি করে দিই।
আপনি একটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির কথা চিন্তা করুন। সাধারণভাবে ওভারটাইমের ঘোষণা শ্রমিকদেরকে সেভাবে উদ্বুদ্ধ করতে পারে না। কিন্তু যখন বলা হয় এটা দ্বিগুণ হবে বা ত্রিগুণ হবে, তখন কিন্তু শ্রমিকদের উৎসাহ, কাজের উদ্যম সবই এত প্রবল হয় যে, অনেক কাজ করেও কোনো ক্লান্তি নেই। সেরকমই রমজানে আল্লাহর পক্ষ থেকে এই ওভারটাইম ৭০ গুণ। তার মানে- কি পরিমাণ সক্রিয় আমাদের হতে হবে তা বোঝা যায়।
হাদিসে বলা হয়েছে, এ মাসে প্রতিটি সত্কাজ অন্যান্য সময়ের চেয়ে কমপক্ষে ৭০ গুণ বেশি সওয়াবের। দান করা হচ্ছে তেমনই একটি সত্কর্ম, যা আমাদেরকে ইহকালে প্রাচুর্যের অধিকারী করে এবং পরকালে যার প্রাপ্তি হয় বহু বহুগুণ। অর্থাত্ রমজান মাসের ১০০ টাকা দান অন্য সময়ের ৭ হাজার টাকা দানের সমান।
পৃথিবীর সব ধর্মেই ইহলোকিক ও পারলৌকিক পরিত্রাণের জন্য নিজ উপার্জন থেকে নিঃশর্ত দানের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
পবিত্র কোরআনে সুরা বাকারার ২৬১ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘সাদকা এমন একটি শস্যবীজ, যাতে উৎপন্ন হয় সাতটি শিষ আর প্রতিটি শিষে থাকে শত শস্যদানা। আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা তাকে বহুগুণ প্রবৃদ্ধি দান করেন।’ অর্থ্যাৎ আন্তরিক দান হচ্ছে সব কল্যাণের নিশ্চয়তা।
প্রাচুর্যের অন্যতম প্রধান সূত্র হল এটি। পবিত্র কোরানে সুরা বাকারায় বিশ্বাসীদের পরিচয় প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘যে রিজিক তারা পেয়েছে তা থেকে তারা দান করে।’
আমরা দান করা বলতে বুঝি স্কুল করা, মাদ্রাসা করা, রাস্তা বানিয়ে দেওয়া ইত্যাদি। অনেক সময়ই দেখা যায়, জীবনে বড় কিছু করার স্বপ্নই শুধু দেখা হয়, বাস্তবে আর করা হয় না। আমরা মনে করি, যখন ধনী হব তখন দান করব। অথচ আল-কোরানে আল্লাহ্ সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘যারা তাদের উপার্জন থেকে রাতে বা দিনে প্রকাশ্যে বা গোপনে দান করে তাদের জন্য পুরস্কার রয়েছে। তাদের কোনো ভয় বা পেরেশানি থাকবে না’ (২ : ২৭৪)। এখানে কিন্তু বলা হয়নি, বেশি উপার্জন থেকে। বরং যার যতটুকু উপার্জন, সেখান থেকে দান করতে বলা হয়েছে। এবং নবীজী (সা.) বলেছেন, ‘তোমার কাছে থাকা একটি খেজুরের একাংশ হলেও দান কর।’
হাসিমুখে কথা বলাও সাদকা বা দান। আসলে স্রষ্টার সন্তুষ্টির লক্ষ্যে নিজের এবং অন্যের কল্যাণে করা প্রতিটি কাজই সৎকর্ম বা আমলে সালেহ বা সাদকা। সহিহ হাদিস অনুসারে, মা-বাবার আন্তরিক খেদমত, পরিবারের ভরণপোষণ, স্বামী-স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার, এতিম-মিসকিন ও অসহায়ের লালন-পালন, রোগীর সেবা ও তার জন্য দোয়া করাও সৎকর্ম। পথ থেকে ক্ষতিকর বস্তু অপসারণ যেমন সেটা কলার খোসা হতে পারে বা কাচের টুকরো, যাতে পা কেটে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তেমনি বস্তু অপসারণ করাও সৎকর্ম। একজন লোকের একটি ভারি বোঝা নিতে কষ্ট হচ্ছে, আমি একটু সহযোগিতা করলাম-এটিই সৎকর্ম, সাদকা বা দান।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের এই করুণাধারা কিন্তু একটা চাঁদ উঠা থেকে আরেকটা চাঁদ উঠা পর্যন্ত। এরপরে তাঁর করুণা থাকবে, কিন্তু হয়ে যাবে সীমিত হিসাবের গণ্ডিতে আবদ্ধ, নিয়ন্ত্রিত। আর এই যে রমজান মাসের রহমত এবং এই যে দান অনুদান বা প্রবৃদ্ধি - এটা হচ্ছে সীমাহীন, কমপক্ষে ৭০ গুণ। এখানে এসে আমরা ঝিমিয়ে পড়ি আর নবীজী কোমরে গামছা বেঁধে নেমে যেতেন।