বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০২:৪২:১১

মহানবী (সা.) যে ব্যক্তিদের জানাজা পড়তেন না

মহানবী (সা.) যে ব্যক্তিদের জানাজা পড়তেন না

ইসলাম ডেস্ক: মানুষ সামাজিক জীব। চলার পথে সুখে-দুঃখে এগিয়ে যায় মানুষের জীবন। বিপদে-আপদে একে অন্যের পাশে দাঁড়িয়ে ঋণ আদান-প্রদানও করে থাকে মানুষ। ইসলামে ঋণ গ্রহণ বৈধ। তবে তা হতে হবে সুদমুক্ত। পবিত্র কুরআনের ভাষায় এ ঋণকে বলা হয়েছে ‘করজায়ে হাসানা’। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঋণের আদান-প্রদান করো, তখন লিপিবদ্ধ করে নাও এবং তোমাদের মধ্যে কোনো লেখক ন্যায়সঙ্গতভাবে তা লিখে দেবে, লেখক লিখতে অস্বীকার করবে না। আল্লাহ তাকে যেমন শিক্ষা দিয়েছেন, তার উচিত তা লিখে দেয়া। ঋণগ্রহীতা লেখার বিষয় বলে দেবে। সে যেন স্বীয় পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করে এবং লেখার মধ্যে বিন্দুমাত্রও বেশ কম না করে।’ [সুরা বাকারা : ২৮২] আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) নিজেও প্রয়োজনে ঋণ নিয়েছেন। ইসলামের কাজে ধার-কর্জ করেছেন বলে হাদিসে পাওয়া যায়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আবি রবি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী করিম (সা.) একবার আমার কাছ থেকে ৪০ হাজার দিরহাম করজ নিলেন। পরে তার হাতে সম্পদ এলে পরিশোধ করে দিলেন এবং দোয়া দিয়ে বললেন, আল্লাহ তায়ালা তোমার পরিবার পরিজন ও ধন-সম্পদে বরকত দান করুন। বস্তুত, ঋণের বদলা হচ্ছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ও তা পরিশোধ করে দেয়া।’ [নাসায়ি] ইসলাম বিপদে-আপদে ঋণ গ্রহণকে যেরূপ বৈধতা দিয়েছে; পরিশোধের নির্দেশও দিয়েছে কঠোরভাবে। আমাদের সমাজে কিছু লোক আছেন, যারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও পাওনাদারকে ঠকানোর মনোবৃত্তি নিয়েই ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করেন। ইসলাম যা আদৌ সমর্থন করে না। সূরা নিসায় ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে ব্যাপক তাকিদ দিয়ে বলা হয়েছে, ‘যদি কেউ আল্লাহর আদেশমতো সহজেই এ ঋণ পরিশোধ করে তবে তার জন্য জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছেÑ যেখানে সে অনন্তকাল থাকবে। পক্ষান্তরে অস্বীকার করলে বা অবাধ্য হলে রয়েছে অপমানজনক শাস্তি ও আজাবÑ যে আজাবও চিরকালের জন্য অবধারিত। ইবনে মাজাহ ও বায়হাকি শরিফে আছেÑ ‘ঋণ গ্রহণের পর যে বা যারা ওই ঋণ পরিশোধ না করার সংকল্প করে, তাকে কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে চোর হিসেবে সাক্ষাৎ করতে হবে। অন্য এক হাদিসে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘শহীদের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়, কিন্তু ঋণ এর ব্যতিক্রম।’ [মুসলিম] ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে পরকালে তার নেক আমল দিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। না হলে গুনাহের বোঝা মাথায় নিয়ে জাহান্নামে যেতে হবে। ঋণ নিয়ে উচ্চাভিলাষ চরিতার্থকারী ঋণখেলাপির জানাজা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) পড়তেন না। তবে ঋণ পরিশোধের প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অপারগতাবশত সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারে না, এ ধরনের ঋণখেলাপিকে অবকাশ দিয়েছে ইসলাম। সুরা বাকারার ২৮০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যদি ঋণগ্রহীতা অভাবগ্রস্ত হয়, তবে তাকে সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত সময় দেয়া উচিত। আর যদি ক্ষমা করে দাও, তবে তা খুবই উত্তম, যদি তোমরা উপলব্ধি কর।’ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্ত ঋণী ব্যক্তিকে অবকাশ দেয় অথবা ঋণ লাঘব করে আল্লাহ তায়ালা তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন।’ [মুসলিম] অনিবার্য কারণে ঋণ পরিশোধে অপারগতা দেখা দিলে মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া কিছুতেই উচিত নয়। নির্ধারিত সময়ের আগেই অবহিত করতে হবে ঋণদাতাকে। সেই ঋণ পরিশোধের চেষ্টা করতে থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে পার্থিব প্রচেষ্টার পাশাপাশি আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করতে হবে। বেশি বেশি দোয়া করতে হবে। মহানবী (সা.) সে দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। হজরত আলী (রা.) -এর কাছে একজন কৃতদাস এসে বলল, আমি চুক্তির টাকা আদায় করতে পারছি না। আমাকে সাহায্য করুন। তখন হজরত আলী (রা.) তাকে বললেন, আমি কি তোমাকে কয়েকটি শব্দ শিক্ষা দেব না, যা আমাকে রাসূলুল্লাহ (সা.) শিক্ষা দিয়েছেন? যদি তুমি এটা পড় তাহলে আল্লাহই তোমার ঋণমুক্তির ব্যাপারে দায়িত্ব নিবেন। যদি তোমার ঋণ পর্বতসমানও হয়।’ এরপর হজরত আলী (রা.) ওই ব্যক্তিকে বললেন পড়োÑ ‘আল্লাহুম্মাকফিনি বিহালালিকা আন্ হারামিকা ওয়াগনিনি বিফাজলিকা আম্মান সিওয়াক।’ অর্থ ‘হে আল্লাহ! হারামের পরিবর্তে তোমার হালাল রুজি আমার জন্য যথেষ্ট কর। আর তুমি ব্যতীত সবার থেকে আমাকে অমুখাপেক্ষী করে দাও।’ ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটি নিউজ২৪ডটকম/জুবায়ের রাসেল

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে