আহমাদ রাইদ : আল্লাহ ওই সত্তাকে বলা হয়, যিনি স্বয়ম্ভু, সদা বিরাজমান। পূর্ণতা ও মহত্ত্বের যত গুণ হতে পারে, তিনি সেসব গুণের অধিকারী। আল্লাহ এক-অদ্বিতীয়। তাঁর কোনো শরিক নেই। ইমাম আবু মানসুর আল মাতুরিদি (রহ.)-এর মতে, আল্লাহর সত্তাসূচক গুণ আটটি। যথা—হায়াত, ইলম, ইচ্ছা, কুদরত, শ্রবণ, দৃষ্টি, কালাম ও তাকভিন।
হায়াত আল্লাহর একটি গুণ। যার অর্থ—চিরন্তন, চিরঞ্জীব। তিনি সব সময় আছেন ও থাকবেন। তাঁর অস্তিত্ব অবশ্যম্ভাবী। তিনিই সবাইকে জীবন দান করেন। ইলম মানে জ্ঞান। আল্লাহ সর্বজ্ঞানী। সর্ববিষয়ে তাঁর জ্ঞান সমভাবে পরিব্যাপ্ত। তাঁর কাছে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের কোনো পার্থক্য নেই। তাঁর জ্ঞানে ত্রুটি-বিচ্যুতির কোনো সম্ভাবনা নেই। প্রকাশ্য বা গোপন, অতীত বা ভবিষ্যৎ, ইহকাল বা পরকাল—সব কিছুই তাঁর কাছে সমান। পৃথিবীর কোনো কিছু তাঁর পর্যবেক্ষণের বাইরে নয়।
এ বিশাল পৃথিবী আল্লাহ স্বীয় ইচ্ছায় সৃষ্টি করেছেন। যখন যা সৃষ্টি করতে চেয়েছেন, সৃষ্টি করেছেন। তিনি কোনো কাজে বাধ্য নন। যত সৃষ্ট বস্তু রয়েছে এগুলোর গতি-প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য, অবস্থা সব কিছুই তাঁর ইচ্ছায় নির্ধারিত হয়।
কুদরত মানে শক্তি। এ বিশ্ব, এর গতি ও স্থিতি সবই আল্লাহ তাআলার অসীম কুদরত। বস্তুর মধ্যে যে শক্তি নিহিত রয়েছে তার উৎস বস্তু নয়; বরং আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কুদরত। মানুষ যে কথাবার্তা বলে, আলোচনা করে, তিনি তা শোনেন। এমনকি গহিন সমুদ্রের তলদেশে বসেও যদি কেউ কথা বলে, তাও তিনি শুনতে পান।
মহান আল্লাহ, সৃষ্টির সব কিছুই তিনি দেখেন। সব সৃষ্টি তাঁর দৃষ্টির অধীন। এমন কোনো বস্তু নেই যা তাঁর দৃষ্টির অগোচরে। যত গভীর অন্ধকারই হোক না কেন, সেখানেও তাঁর দৃষ্টি পৌঁছে যায়।
কালাম মানে কথা। এ বিশ্ব ব্যবস্থাপনায় সৃষ্টিকুলের পরিচালনার জন্য আল্লাহ আদেশ-নিষেধ, হুকুম-আহকাম জারি করেছেন—এর সব কিছু কালামের মাধ্যমেই হয়েছে। পবিত্র কোরআন আল্লাহর কালাম।
তাকভিন মানে সৃষ্টিকরণ। আসমান-জমিন, আরশ-কুরসি, লৌহ-কলম, জীবজন্তু, বৃক্ষতলা সব কিছুই আল্লাহর সৃষ্টি। দৃশ্য-অদৃশ্য সব কিছুর স্রষ্টা তিনিই। সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে তাঁর কোনো নমুনার প্রয়োজন হয় না। সমগ্র সৃষ্টজগৎ ধ্বংস করে তিনি পুনরায় সৃষ্টি করতে সক্ষম।