তোফায়েল গাজালি: বিস্ম'য়কর হলেও সত্য যে, সৌদি আরবে এখনও তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমানের (রা.) নামে দলিল করা প্রপার্টি রয়েছে। রয়েছে ব্যাংক অ্যাকাউন্টও।
আরও মজার বিষয় হল- মাস ফুরালে এখনও তার নামেই আসে গ্যাস ও বিদ্যুতের বিল। সম্প্রতি শুরু হয়েছে ওসমানের (রা.) মালিকানাধীন বিলাসবহুল হোটেল নির্মাণের কাজ!
অবা'ক করা এ ঘ'ট'নার বি'স্তারিত জানতে ইতিহাসের পথ ধরে আপনাকে একটু পেছনে নিয়ে যেতে চাই। রাসূলের (সা.) যুগে। মহানবী (সা.) নবুওয়াত প্রাপ্তির ১৩তম বছর। মুসলমানরা মাত্র মক্কা ছেড়ে মদিনায় এসেছেন। অচেনা পরিবেশে দেখা দেয় সুপেয় পানির তী'ব্র সং'কট। মদিনায় ‘বিরেরুমা’ বা রুমার কূপ নামে ইহুদির একটি কূপ ছিল। ইহুদিরা এ সুযোগে কূপের পানি মুসলমানদের কাছে চ'ড়া দামে বিক্রি করতে শুরু করল।
সাহাবারা রাসূলকে (সা.) এ বিষয়ে অবগত করলে তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে আছো, যে এই কূপ মুসলমানদের জন্য ক্রয় করে দিবে। মুসলমানদের এই কূপ যে খরিদ করে দেবে আল্লাহ তাকে জান্নাতে ঝর্ণা দান করবেন।’
রাসূলের (সা.) কথায় হযরত ওসমান (রা.) ইহুদির কাছে এই কূপ ক্রয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। ইহুদি তার প্র'স্তাব ফিরিয়ে দিলে তিনি বললেন, পুরো কূপ বিক্রি না করলে অর্ধেক বিক্রি করুন। এতে একদিন কূপের মালিক হব আমি আর আরেক দিন হবেন আপনি।
ওসমান (রা.) অর্ধেক কূপ ক্রয় করে বিনামূল্যে পানি বিতরণ করতে লাগলেন। লোকজন ওসমানের (রা.) ক্রয় করা নির্ধারিত দিনে পানি সংগ্রহ করত এবং পরের দিনের জন্যও পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ করে রাখত। ইহুদির দিনে কেউ পানি সংগ্রহ করতে যেত না। ফলে তার পানির ব্যবসা ম'ন্দা হওয়ায় নিজেই পুরো কূপ বিক্রির জন্য ওসমানের (রা.) কাছে প্র'স্তাব পেশ করে।
ওসমান (রা.) ৩৫ হাজার রৌপ্য মুদ্রায় কূপটি কিনে মুসলমানদের জন্য ওয়াকফ করে দেন। এ সময় এক ধনী লোক ওসমান (রা.) থেকে কূপটি দ্বিগুণ দামে খরিদ করতে চাইলে তিনি বলেন, আমার চাহিদা এর চেয়ে আরও অনেক বেশি। লোকটি মূল্য বাড়িয়ে বলতে লাগল। ওসমান (রা.) জবাবে আমার চাহিদা এর চেয়ে আরও বেশি বলতে লাগলেন।
শেষে ধনী লোকটি বলল, এমন কেউ আছে যে আপনাকে কূপটির মূল্য ১০ গুণ বলেছে? ওসমান (রা.) জবাবে বলেন, আমার আল্লাহ আমাকে প্রতি নেকিতে ১০ গুণ বাড়িয়ে দেয়ার কথা বলেছেন। হযরত ওসমানের (রা.) শাসনামলে এই কূপের চারপাশে খেজুর বাগান তৈরি হয়। সময়ের চাকা ঘুরে বহু উ'ত্থান-প'তনের পর সৌদি রাজপরিবার সৌদি আরবের রাজসিংহাসনে বসার সময় এই বাগানে খেজুর গাছের সংখ্যা ১৫৫০টিতে পৌঁছায়।
সরকার বাগানের চারদিকে দেয়াল তৈরি করে দেয়। এই ভূসম্পত্তি ওসমানের (রা.) নামে দলিল করে দেয় এবং তার নামে খুলে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। সৌদির কৃষি মন্ত্রণালয় এই বাগানের খেজুর বিক্রি করে অর্জিত অর্থ ওসমানের (রা.) অ্যাকাউন্টে জমা রাখে। সঞ্চিত অর্থ দিয়ে মদিনায় একটি বড় প্রপার্টি ক্রয় করা হয়েছে।
যেখানে ‘হোটেল ওসমান বিন আফফান’ নামে একটি আবাসিক হোটেল নির্মাণের কাজ চলছে। এই হোটেল থেকে প্রতি বছর ৫০ মিলিয়ন রিয়াল আয় হবে বলে আশা করছে সৌদি সরকার। এই অর্থের অর্ধেক অস'হায়-দু'স্থদের মানবতার সেবায় ব্যয় করা হবে আর অর্ধেক হযরত ওসমানের (রা.) ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হবে।
ওসমানের (রা.) এ দান আল্লাহ এমনভাবে গ্রহণ করে নিয়েছেন যে, কেয়ামত পর্যন্ত তা চালু থাকবে। ওসমানের (রা.) আখেরাতের অ্যাকাউন্টে তো সওয়াব জমা হচ্ছেই দুনিয়ার অ্যাকাউন্টের ব্যলেন্সও ফুরাবার নয়। লেখক: পরিচালক, আল কুরআন ইন্সটিটিউট