সাত মাস আগেও ক্যারোলিন সুইজারল্যান্ডের ছোট্ট একটি শহরে বারকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। তিনি তাঁর কাজের প্রতি আন্তরিক ছিলেন। তিনি তাঁর গ্রাহকদের চিনতেন এবং সবাই ছিল বন্ধুসুলভ। কিন্তু করোনা মহামারি সংক'ট তৈরি করল। বার বন্ধ হয়ে গেল। শুরুতে অফিস বেতন পরিশো'ধ করলেও পরে চাকরিটাই চলে গেল। তাঁর স্বামীরও চাকরি চলে গেল। ক্যারোলিন বলেন, ‘আমার স্বামী অবসরে আরো বেশি অধ্যাত্মবাদী হয়ে উঠল। তার এক বন্ধুর দেওয়া বহু পুরনো বই পড়তে শুরু করল, যা আগে কখনো ছুঁয়ে দেখেনি। একদিন স্বামী আমাকে বইগুলো পড়তে বলল। আমি কখনো খুব ভালো পাঠক ছিলাম না, তবে স্বামীকে সন্তুষ্ট করতে চাইলাম। পরিস্থিতি খারাপ ছিল, তাই আমি কোনো ধরনের বিতর্কে যেতে চাইলাম না। বইগুলো ইসলামসংক্রা'ন্ত ছিল। সত্যি বলতে, আমি বইগুলোর ব্যাপারে আগ্রহী ছিলাম না এবং অনেক কিছু আমার জন্য বোঝা কঠিন ছিল।
আমার স্বামী ইসলাম সম্পর্কে নিয়মিত পড়তে লাগল এবং স্রষ্টায় বিশ্বাসী হয়ে উঠল। সে বলল, এই পৃথিবীর কিছুই ছিল না। একটি উদ্দেশ্যে তা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং স্রষ্টা জানেন আমরা কী করছি। সে স্রষ্টা সম্পর্কে তার বিশ্বাসগুলো আমাকে বলত এবং আমি অনুভব করতাম সে সত্য বলছে। কিছুদিন পর সে ইসলাম গ্রহণ ও দৈনন্দিন জীবনে তা চর্চার সিদ্ধান্ত নেয়। যখন আমার স্বামী মুসলিম হলো, আমি বিস্মিত হলাম; যদিও কয়েক সপ্তাহ ধ'রে সে স্রষ্টা ও ইসলাম সম্পর্কে আলোচনা করছিল। কিন্তু বুঝতে পারিনি শেষ পর্যন্ত সে মুসলিম হয়ে যাবে।
আমাদের সমাজে মুসলিম হওয়া সহজ ছিল না।’ ক্যারোলিন প্রথমে ইসলাম গ্রহণ করল না। তবে স্বামীকে শান্তিপ্রিয় ও ভবিষ্যতের জন্য নতুন উদ্যমে সংগ্রাম শুরু করতে দেখে তিনি ইসলামের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠলেন। ক্যারোলিন বলেন, ‘প্রথমে আমি দ্বিধাগ্র'স্ত ছিলাম। মুসলিম হওয়ার পরিণতি সম্পর্কে চিন্তি'ত ছিলাম। আর আমি দ্বিধা নিয়ে কিছু করা পছন্দ করি না। আমি চাইলাম, ইসলাম গ্রহণ করলে যথাযথভাবেই করব। আমার স্বামী বলল, যদি আমরা সত্যি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করি, তবে তিনি আমাদের রক্ষা করবেন। তবু আমি মুসলিম হতে কয়েক সপ্তাহ সময় নিলাম।’
মুসলিম হওয়ার পর ক্যারোলিন আগের চাকরি ছেড়ে দিলেন এবং হিজাব পরতে শুরু করলেন। ঘরে বসে বিকল্প আয়ের চি'ন্তা করতে লাগলেন। অবশেষে সেলাই মেশিন হাতে তুলে নিলেন। ক্যারোলিন বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ! বহু মানুষ আমাকে সহযোগিতা করল। মেয়েরা আমার স্কার্ভ কিনল। মুসলিমরা আমাদের বাহ্যিক ও মানসিক সহযোগিতা করল। স্বামীর পথ ধরে মুসলিম হতে পেরে আমি আনন্দিত। আমি চাকরি হারিয়েছি; কিন্তু তার চেয়ে ভালো কিছু নিয়ে আছি। কখনো কখনো মানুষ আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকায়। তবে আমি বিষয়টিকে ম'ন্দভাবে দেখি না। আল্লাহ আমাকে নিজস্ব ব্যবসা দিয়েছেন। কোনো বসের দয়ার ওপর নির্ভর করে থাকতে হয় না। স্বামীর সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে পারি এবং প্রতিদিন ইসলাম সম্পর্কে নতুন কিছু জানতে পারছি। আলহামদুলিল্লাহ!’ অ্যাবাউট ইসলাম থেকে আবদুল মজিদ মোল্লার ভাষান্তর