ইসলাম ডেস্ক: ইসলামে চোর এবং চুরি কোনটির স্থান নেই। এ বিষয়ে ইসলামে কড়া নির্দেষণা আছে। চুরি করলে চোরের শাস্তি হিসেবে মুসলিম রাষ্ট্র গুলোতে হাত কেটে দেয়ার চিত্র লক্ষ্য করা যায়। এ ব্যাপারে ইসলামের সঠিক নিয়মটা কি? ইসলামে কখন হাত কাটার নির্দেষ দেয়া আছে? চলুন এক নজরে জেনে নিই।
চোরের চুরির শাস্তি হিসেবে ইসলামের বিধান মতে হাত কাটার শাস্তি প্রয়োগের কথা থাকলেও মূলত সেটি কার্যকর করতে ৮টি শর্ত মানতে হবে।
১. চোরকে অবশ্যই প্রাপ্ত বয়স্ক, সুস্থ ও বিবেক সম্পন্ন মানুষ হতে হবে।
২. মুসলিম বা ইসলামী রাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া।
৩. চুরির উদ্দেশ্যে মাল হস্তগত করা।
৪. অপরের মাল জেনেশুনে হস্তগত করা।
৫. স্বেচ্ছায় ও প্রলোভনবশত চুরি করা।
৬. চোর ও মালিক পরস্পর রক্ত সম্পর্কীয় না হওয়া।
৭. হস্তগত মালের মধ্যে চোরের মালিকানা না থাকা।
৮. চুরির নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে জ্ঞান থাকা।
চুরিকৃত মালের সাথে সংশ্লিষ্ট শর্তাবলি : কোনো মালের ওপর চুরির অভিযোগ প্রমাণ করতে হলে মাল সম্পর্কিত নিম্নোক্ত শর্ত পূরণ হওয়া আবশ্যক। যেমন-
১. চুরিকৃত বস্তু প্রকৃত মাল হওয়া।
২. চুরিকৃত বস্তুর আর্থিক মূল্য থাকা।
৩. চুরিকৃত মাল তুচ্ছ বস্তু না হওয়া।
৪. চুকিৃত বস্তু সংরক্ষণযোগ্য হওয়া।
৫. চুরিকৃত বস্তু সাধারণভাবে সকলের জন্য বৈধ না হওয়া।
৬. চুরিকৃত মাল অপরের দখলভুক্ত হওয়া।
৭. চুরিকৃত মাল নিরাপদ সংরক্ষিত স্থান থেকে করায়ত্ত করা।
৮. করায়ত্বকৃত মাল চোর কর্তৃক পুরোপুরি নিজের দখলভুক্ত হওয়া।
৯. করায়ত্ত্বকৃত মাল চুরির নিসাব পরিমাণ মূল্যের হওয়া।
১০. মাল স্থানান্তর যোগ্য হওয়া।
চুরির শাস্তি : চোর যদি চুরি করে এবং সেটা প্রমাণিত হয় তবে শরীয়াতের বিধান অনুসারে তার হাত কাটা হবে। পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে-
الـسـارق والـسـارقـة فـاقـطـعـوا ايـديـهـمـا مـئـرا مـمـا كـسـيـا نـكـا لا مـن الـلـه والـلـه عـزيـز حـكيـم ـ
পুরুষ চোর ও নারী চোর উভয়ের হাত কেটে দাও। এটা তারা যা উপার্জন করেছে তার প্রতিফল এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে দৃষ্টান্ত। আর আল্লাহ তা‘আলা মহাপরাক্রমশালী ও বিজ্ঞানী।
চোরের হাত কাটার ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহর অধিকাংশ চিন্তাবিদ একমত। তবে কোন হাত কাটতে হবে তা নিয়ে ইমামদের মধ্যে কিছুটা মতভিন্নতা রয়েছে। তবে চার মাযহাবেরর ইমামদের মতে প্রথমবার চুরি প্রমাণিত হলে ডান হাতের কবজি থেকে হাত কাটতে হবে।
তবে একই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার চুরি করলে বাম পা কেটে ফেলতে হবে। তৃতীয়বার চুরি করলে কি শাস্তি দেওয়া হবে তা নিয়ে ইমামগণের মাধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। হানাফী ও কতিপয় হাম্বলী ইমামের মতে তৃতীয়বারের চুরির শাস্তি হল কারাগারে আটক রাখা। মালিকী ও শাফিঈ ইমামগণের মতে, তৃতীয়বার চুরি করলে বাম হাত আর চতুর্থ বার চুরি করলে ডান পা কেটে ফেলতে হবে। তারপরও চুরি করলে তাকে কাগারারে আটক রাখতে হবে।
চুরি প্রমাণিত হওয়ার প্রমাণ : যে সব প্রমাণের ভিত্তিতে চুরি সাব্যস্ত হবে তাহল-
১. সাক্ষ্য প্রমাণ।
২. মৌখিক স্বীকৃতি।
৩. শপথ।
৪. লক্ষণ প্রমাণ।
এগুলো পাওয়া গেলে চুরি প্রমাণিত হবে।
চোরের চুরির শাস্তি রহিত হওয়ার কারণসমূহ : বিভিন্ন কারণে ও অবস্থার প্রেক্ষিতে চোরের চুরির শাস্তি রহিত হয়ে যায়। যেমন-
১. সুপারিশ।
২. ক্ষমা।
৩. তাওবাহ।
৪. স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার।
৫. হদ অনুপযোগীদের সাথে চুরিতে অংশগ্রহণ।
৬. মালিকানা স্বত্ব অর্জন।
৭. হদ্দকার্যকারিতায় বিলম্ব।
৮. কর্তনের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্গ না থাকা ইত্যাদি।