মাহমুদ আহমদ : অভাব মানুষকে পাপের পথে পরিচালিত করে। তাইতো বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষকে ক্ষুধার যন্ত্রণা ও অভাব থেকে বেঁচে থাকতে কর্মমূখী হওয়ার উপদেশ ও উৎসাহ প্রদান করেছেন।
কোন কাজকে ছোট মনে না করে হালাল উপার্জনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করলে আল্লাহ বরকত দেন। এছাড়া সংসারে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য হালাল জীবিকার গুরুত্ব অপরিসীম।
কেননা ইবাদত কবুলের পূর্বশর্তই হলো হালাল জীবিকা উপার্জন করা। তিনি যাকে চান প্রভূত রিজিক দান করেন। আমাদের কাজ হল তার নির্দেশ অনুযায়ী পরিশ্রম করে হালাল উপার্জন করা।
যেভাবে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন: ‘তুমি বল, নিশ্চয় আমার রব যার জন্য চান রিজিক সম্প্রসারিত করে দেন এবং সংকুচিতও করে দেন কিন্তু অধিকাংশ, লোক তা জানে না।’ (সুরা সাবা, আয়াত: ৩৬)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা বলেন, হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও, আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্র ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না কর, তবে তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব দূর করব না।’ (তিরমিজি, মুসনাদ আহমদ ও ইবনে মাজা)
যেহেতু রিজিকে বরকতের মালিক আল্লাহ, তাই আমাদের কাজ হল হালাল উপার্জনের জন্য চেষ্টা-প্রচেষ্টা করা আর আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা।
আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আযাব বড় কঠিন।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৭)
অভাবমুক্ত হতে আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে একটি দোয়া শিখিয়েছেন। অভাব মোচনে যে দোয়াটি আমরা অধিক পাঠ করব-‘আল্লাহুম্মা রাব্বানা আনযিল আলায়না মা ইদাতাম মিনাস সামাই তাকুনু লানা ঈদাল্লি আওওয়ালিনা ওয়া আখিরিনা ওয়া আয়াতাম মিনকা ওয়ারযুকনা ওয়া আনতা খায়রুর রাযিকিন।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত ১১৪)
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু-প্রতিপালক আল্লাহ! তুমি আকাশ থেকে আমাদের জন্য খাবার ভরতি খাঞ্চা অবতীর্ণ কর যেন তা আমাদের প্রথম অংশের জন্য আর আমাদের শেষ অংশের জন্য আনন্দোৎসব হবে এবং তোমার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন হয়। তুমি আমাদেরকে রিযিক দান কর। প্রকৃতপক্ষে তুমিই উত্তম রিজিকদাতা।’
ইস্তেগফারেও অভাব মোচন হয়। হাদিসে এসেছে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।’ (আবু দাউদ ও ইবনে)
আসলে আমাদের মাঝে যখন অভাব দেখা দেয় তখন আল্লাহর দিকে ঝুকি কিন্তু অভাব দূর হওয়া মাত্রই আল্লাহকে ভুলে যাই আর কৃপণতা দেখাই। এ বিষয়েই আল্লাহ ইরশাদ করেন: ‘মানুষকে দুর্বলমনা করে সৃষ্টি করা হয়েছে। বিপদ স্পর্শ করলে সে ঘাবড়ে যায়। আর স্বাচ্ছন্দ্য আসলে কার্পণ্য শুরু করে।’ (সুরা মাআরিজ : আয়াত ১৯-২১)
হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মহানবী (সা.)কে বলতে শুনেছি তিনি ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেয়া হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।’ (বোখারি ও মুসলিম)
আসুন, হালাল উপার্জন করি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করি। হে দয়াময় প্রভূ! আপনি আমাদের রিজিকে প্রভূত বরকত দিন এবং আপনার সন্তুষ্টির চাদরে আবৃত করে নিন, আমিন।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট