বৃহস্পতিবার, ০৭ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৭:৫৬:১৫

জঙ্গিবাদ সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদিস যা বলছে

জঙ্গিবাদ সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদিস যা বলছে

ইসলাম ডেস্ক: ক্ষমতা দখল, সম্পদ দখল ও প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তারের উদ্দেশ্যে মানবসমাজে জঙ্গি তত্পরতা সেই আদিকাল থেকে চলে আসছে। যা আজকের আধুনিক বিশ্বে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। সমস্ত বিশ্ব আজ এই সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কখনো আইএস, কখনো হিযবুল্লাহ, কখনো তালেবান কিংবা কখনো জিএমবি এমন অনেক নামে এই জঙ্গিরা তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। কিন্তু জঙ্গি সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে কি বর্ণনা করা হয়েছে তা আমরা কেউ জানি কি? যদি না জেনে থাকি তাহলে এই লেখাটি এখনই পড়ুন। লেখাটি পাঠিয়েছেন রাজশাহী কলেজ কেন্দ্রীয় মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মোহাম্মদ মাকছুদ উল্লাহ। রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন নিজ সম্প্রদায় ও স্বজনদের ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে নিরাশায় মারাত্মকভাবে দগ্ধ হচ্ছিলেন, তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর ওপর নাজিল করেন, ‘তুমি উপদেশ দাও, তুমি তো কেবল একজন উপদেশদাতা। তুমি তাদের ওপর প্রেরিত প্রশাসক নও।’ (সুরা আল-গাশিয়াহ : ২১-২২) জঙ্গি তত্পরতার মাধ্যমে সমাজে ও জনজীবনে আতঙ্ক ও ত্রাস সৃষ্টি করাকে মহান আল্লাহ দ্বীনের সীমা লঙ্ঘন ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের রবকে ডাকো, কাকুতিমিনতি করে গোপনে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। পৃথিবীকে সংশোধিত করার পর তাতে বিপর্যয় সৃষ্টি কোরো না। তাঁকে ডাকো ভয় আর আশা নিয়ে। নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত সত্কর্মশীলদের নিকটবর্তী।’ (সুরা আল-আরাফ : ৫৫-৫৬) সম্প্রতি দেশে ভিন্ন মতাবলম্বী, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী, বিদেশি নাগরিকদের হত্যা ও তাদের ওপর হামলার ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। হামলার ধরন ও প্রাসঙ্গিকতা থেকে এক শ্রেণির ধর্মান্ধগোষ্ঠী ইসলাম কায়েমের নামে এ ধরনের জঘন্য কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে বলে জনমনে ব্যাপক সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। অথচ শান্তির ধর্ম ইসলামে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে বসবাসকারী সবার জীবন ও সম্পদকে ইসলাম মূল্যবান আমানত হিসেবে বিবেচনা করে এবং তা রক্ষা করা অপরিহার্য কর্তব্য বলে মনে করে। সে কারণেই রাসুলুল্লাহ (সা.) বিদায় হজের ভাষণে বলেছিলেন, ‘তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্মান, তোমাদের সম্পদ পরস্পরের জন্য তেমনি হারাম বা মর্যাদাপূর্ণ, যেমন তোমাদের কাছে আজকের এই দিনটি, এই মাস আর এই শহর হারাম বা সম্মানিত।’ (বুখারি) ইসলাম শুধু জনজীবন ও সম্পদের ক্ষতি সাধনকেই নিষিদ্ধ করেনি, বরং যেকোনো ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করাও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : “এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। সুতরাং সে তার প্রতি জুলুম করতে পারে না, তাকে অপমানিত করতে পারে না, তাকে হেয় করতে পারে না। অতঃপর ‘তাকওয়া এখানে’ বলে রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজের বুকের দিকে ইঙ্গিত করেন।” (মুসলিম) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) পরিচালিত কোনো এক যুদ্ধে নিহত এক নারীকে পাওয়া গেল। সঙ্গে সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) নারী ও শিশুদের হত্যা করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন। (বুখারি : ২৯২২) মানুষ হত্যা করে, সম্পদ নষ্ট করে ইসলাম কায়েম করা তো দূরের কথা, নিজের মুসলমান পরিচয়টাকেই রক্ষা করা সম্ভব নয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘আল্লাহর শপথ ওই ব্যক্তি মুমিন নয়! আল্লাহর শপথ ওই ব্যক্তি মুমিন নয়! আল্লাহর শপথ ওই ব্যক্তি মুমিন নয়!’ সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! কে?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়।’ (বুখারি ও মুসলিম) জঙ্গিরা তাদের অপতত্পরতাকে জিহাদ নামে অভিহিত করছে। ফলে জনমনে ইসলাম সম্পর্কে মারাত্মক ভুল ধারণা তৈরি হচ্ছে। ইসলামে যে জিহাদ ফরজ করা হয়েছে, সেটি একান্তভাবেই অন্যায়-অবিচার, সন্ত্রাস ও খোদাদ্রোহী যাবতীয় কর্মকাণ্ড দূর করে শান্তিপূর্ণ তাওহিদি সমাজব্যবস্থা কায়েমের জন্য। ইদানীং জিহাদের নামে যে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের আস্ফাালন লক্ষ করা যাচ্ছে তা জিহাদ নয়; বরং এহেন কর্মকাণ্ডকে দমন করাটাই জিহাদ। জিহাদের সংজ্ঞা হলো, ‘আল্লাহর জমিনে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা।’ হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রা.) বর্ণনা করেছেন—তিনি বলেন, যেসব অভিযানে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে শত্রুপক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে এমন এক অভিযানকালে রাসুলুল্লাহ (সা.) অপেক্ষা করতে থাকলেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তিনি মানুষের মাঝে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘হে লোক সকল! তোমরা শত্রুর সঙ্গে সংঘাত কামনা কোরো না। আল্লাহর দরবারে শান্তি প্রার্থনা করো।’ (বুখারি : ২৯৩১) রাসুলুল্লাহ (সা.) যতগুলো যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন বা পরিচালনা করেছিলেন, তার কারণ অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, প্রতিটি যুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিল শান্তি স্থাপন। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে যেকোনো অভিযানে প্রেরণের সময় কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করে দিতেন, ‘সাবধান! পলায়নপর কোনো শত্রু সৈন্যের পশ্চাদ্ধাবন করবে না, কোনো নারী-শিশু বা বয়োবৃদ্ধের ওপর আক্রমণ করবে না।’ ৭ জানুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪ডটকম/জুবায়ের/রাসেল

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে