সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৩:৪১:২৬

ধৈর্যের ফল

ইসলাম ডেস্ক:   রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: একদিন হযরত মূছা (আঃ) বনী ইসরাইলের এক সভায় ভাষন দিচ্ছিলেন, জৈনক ব্যক্তি প্রশ্ন করল; সব মানুষের চেয়ে অধিক জ্ঞানী কে? হযরত মূছা (আঃ)-এর জানামতে তারচেয়ে অধিক জ্ঞানী আর কেই ছিলনা। তাই বললেন, আমিই সবার চাইতে অধিক জ্ঞানী। আল্লাহ তা’আলা তার প্রিয় বন্দাদেরকে এভাবেই গড়ে তোলেন। তাই এ জওয়াব তিনি পছন্দ করলেন না। এখানে বিষয়টি আল্লাহ’র উপর ছেড়ে দেওয়া উত্তম ছিল। অর্থাৎ কথাটা এভাবেই বলা উচিত ছিল যে, আল্লাহ ভাল জানেন, কে অধিক জ্ঞানী। এ জওয়াবের কারণে আল্লাহ’র পক্ষথেকে মূছা (আঃ) কে তিরষ্কার করে ওহী নাযীল করলো যে, দুই সমুদ্রের মাঝখানে অবস্থানকারী আমার এক বান্দা আছে সে আপনার চাইতে অধিক জ্ঞানী।


একথা শুনে মূছা (আঃ) প্রার্থনা জানালেন যে, তিনি অধিক জ্ঞানী হলে তার কাছ থেকে আমার জ্ঞান লাভ করা প্রয়োজন। তাই বললেন ইয়া আল্লাহু আমাকে তার ঠিকানা বলে দিন। আল্লাহ বললেন: থলের মধ্যে একটি মাছ নিন এবং দুই সমুদ্রের সঙ্গমস্থলের দিকে সফর করুন। যেখানে মাছটি জিবীত হয়ে যাবে সেখানে আমার ঐ বান্দার সাক্ষাত পাবেন।

মূছা (আঃ) নির্দেশমতো থলের মধ্যে একটি মাছ নিয়ে রওনা হলেন, তার সাথে তার খাদেম ইউশা ইবনে নুনও ছিল। পথিমধ্যে একটি উচু টিলায় মাথা রেখে মূছা  (আঃ) ঘুমিয়ে পড়লেন। এখানে হঠাৎ মাছটি নাড়াচাড়া করতে লাগল এবং থলে থেকে বের হয়ে সমুদ্রে চলে গেল। (মাছটি জিবীত হয়ে চলে যাওয়ার সাথে সাথে আরও একটি মুজেযা প্রকাশ পেল)। মাছটি সমুদ্রের যে পথ দিয়ে চলে গেল আল্লাহ তা’আলা সে পথের পানির স্রোত বন্ধ করে দিলেন। ফলে সেখানে পানির মধ্যে একটি সুড়ঙ্গের মত হয়ে গেল। ইউশা ইবনে নুন এই আশ্চার্যজনক ঘটনা দেখছিল। মূছা (আঃ) নিদ্রিত ছিলেন। জখন জাগ্রত হলেন, তখন ইউশা ইবনে নুন মাছের এই আশ্চার্যজনক ঘটনা বলতে ভুলে গেলেন এবং সেখান থেকে সামনে রওনা হয়ে গেলেন। পূর্ণ একদিন একরাত সফর করার পর সকাল বেলায় মূছা (আঃ) খাদেমকে বললেন:

আমাদের নাশতা আন, এই সফরে যথেষ্ট ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। নাশতা চাওয়ার সাথে সাথে ইউশা ইবনে নুন-এর মাছের ঘটনা মনে পড়ল। সে ভুলে যাওয়ার ওযর পেশ করে বলল শয়তান আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। অত:পর বলল মৃত মাছটি জিবীত হয়ে আশ্চার্যজনক ভাবে সমুদ্রে চলে গেছে। তখন মূছা (আঃ) বলল, সে স্থানটিই তো আমাদের লক্ষ্য ছিল।  (অর্থাৎ মাছের জিবীত হয়ে নিরুদ্দেশ হওয়া স্থানটিই ছিল গন্তব্য স্থান)।

সেমতে তৎক্ষনাৎ তারা ফিরে চললেন এবং স্থানটি পাওয়ার জন্য পূর্বের পথ ধরেই চললেন। উচু টিলা জায়গার নিকট পৌছে দেখলেন এক ব্যক্তি আপাদ মস্তক চাদরে আবৃত অবস্থায় শুয়ে আছে। মুছা (আঃ) তদবস্থায়ই সালাম করলে খিজির (আঃ) বললেন, জনমান বহিন, প্রান্তরে ছিলাম, কোথায় থেকে এলি? মুছা (আঃ) বললেন: আমি মূছা। হযরত খিজির প্রশ্ন করলেন, বনি-ইসরাঈলের? তিনি জওয়াব দিলেন হ্যা, আমি বনি ইসরাঈলের মুছা। আমি আপনার কাছ থেকে ঐ বিশেষ জ্ঞান অর্জন করতে এসেছি। যা আল্লাহ তা’আলা আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন। হযরত খিযির (আঃ) বললেন আপনি আমার সাথে ধৈর্য্য ধরতে পারবেন না। হে মূছা আল্লাহ তা’আলা আমাকে এমন এক জ্ঞান দান করেছেন, যা আপনার কাছে নেই। পক্ষান্তরে আপনাকে আল্লাল তা’আলা যে জ্ঞান দিয়েছেন তা আমার মধ্যে নেই। হযরত মূছা (আঃ) বললেন, ইনশাল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্য্যশীল পাবেন। আমি কোন কাজে আপনার বিরোধিতা করবো না। হযরত খিযির (আঃ) বললেন যদি আপনি আমার সাথে থাকতেই চান তবে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবেন না। যে পর্যন্ত  না আমি নিজেই তার স্বরূপ বলে দেই। একথা বলার পর উভয়ে সমুদ্রের পাড় ধরে চলতে লাগলেন। ঘটনাক্রমে একটি নৌজা এসে গেল, তারা নৌকায় আরোহরেন ব্যাপারে কথাবার্তা বললেন। মাজিরা হযরত খিযির কে চিনে ফেললেন এবং কোন রকম পারিশ্রমিক ছাড়াই তাদের নৌকায় তুলে নিল।

নৌকায় চড়েই হযরত খিযির কুরালের সাহায্যে নৌকার একটি তক্তা তুলে ফেললেন। এতে হযরত মূছা (আঃ) স্থির থাকতে পারলেন না। বললেন তারা কোন প্রকার পারিশ্রমিক ছাড়াই আমাদের কে নৌকায় তুলে নিল। আপনি কি এরই প্রতিদানে তাদের নৌকা ভেঁঙ্গে দিলেন, যাতে সবাই ডুবে যায়? এটা আপনি অতি মন্দ কাজ করলেন। খিযির বললেন: আমি পূর্বেই বলেছিলাম আপনি আমার সাথে ধৈর্য্য ধরতে পারবেন না। তখন মূছা (আঃ) ওযর পেশ করে বললেন, আমি আমার ওয়াদার কথা ভুলে গিয়েছিলাম। আমার প্রতি রুষ্ট হবেন না। ইতিমধ্যে একটি পাখি এসে নৌকার এক প্রান্তে বসল এবং সমুদ্র থেকে এক চষ্ণু পানি তুলে নিল। খিযির (আঃ) বললেন আমার এবং আপনার জ্ঞান উভয়ে মিলে আল্লাহ তা’আলার জ্ঞানের মোকাবিলায় এমন তুলনাও হয়না, যেমনি এ পাখির চষ্ণুর পানির সাথে রয়েছে সমুদ্রের পানি। তারপর তারা নৌকা থেকে নেমে সমুদ্রের কুল ধরে চলতে লাগলেন। হঠাৎ খিযির (আঃ) একটি বালককে অন্যান্য বালকদের সাথে খেলা করতে দেখলেন। খিযির (আঃ) স্বহস্থে বালকটির মস্তক তার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলেন। বালকটি মারা গেল। মুছা (আঃ) বললেন আপনি একটি নিষ্পাপ প্রাণকে বিনা অপরাধে হত্যা করলেন। এয বিরাট গোনাহের কাজ করলেন। খিযির (আঃ) বললেন আমি তো পূর্বেই বলেছিলাম আপনি আমার সাথে ধৈর্য্য ধরতে পারবেন না। মুছা (আঃ) বললেন এ ব্যপারটি পূর্বাপেক্ষা গুরুতর। তাই বললেন এর পর যদি কোন প্রশ্ন করি তবে আপনি আমাকে পৃথক করে দিবেন। আমার ওজর আপত্তি চুড়ান্ত হয়ে গেছে।

অত:পর আবার চলতে লাগলেন। এক গ্রামের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় তারা গ্রামবাসীদের কাছে খাবার চাইলেন। ওরা সোজা অস্বিকার করে দিল। হযরত খিযির এই গ্রামের প্রাচিরকে বাকা পড়ে থাকতে দেখলেন। তিনি নিজ হাতে প্রাচিরটি সোজা করে দিলে। মুছা (আঃ) বিস্মিত হয়ে বললেন: আমরা তাদের কাছে খাবার চাইলে তারা দিতে অস্বিকার করল, অথচ আপনি তাদের এতবড় কাজ করে দিলেন। ইচ্ছে করলে এর পারিশ্রমিক তাদের কাছ থেকে আদায় করতে পারতেন। এবার হযরত খিযির (আঃ) বললেন: এখন শর্ত পূরণ হয়েগেছে, এটাই আমার ও আপনার মধ্যে বিচ্ছেদের সময়। এখন যে বিষয়ে আপনি ধৈর্য্য ধরতে পারেননি, আমি তার তাৎপর্য বলে দিচ্ছি।

(১) নৌকাটি ব্যাপার: সেটি ছিল কয়েকজন গরিব লোকের। তারা এই নৌকা দিয়ে জীবিকা অর্জন করতো ও জীবন যাপন করতে। আমি ইচ্ছে করলাম এই নৌকা ত্র“টিযুক্ত করে দেই। কেনান তাদের রাজ্যে যে বাদশ ছিল, তিনি ইচ্ছে করেছে ত্র“টিযুক্ত যত নৌকা পাবে সব তার নিজের করে নিবে। কিন্তু এই নৌকা ছিল ত্র“টিমুক্ত, বাদশার নজরে পড়ামাত্রই নিয়ে নিবে। তখন এই দরিদ্ররা খুব কষ্টে পড়ে যাবে। তাই নৌকাটি আমি নিজ হস্তে ত্র“টিযুক্ত করে দিলাম।

(২) বালকের ব্যাপারে: আমি ইচ্ছে করেই বালকটিকে হত্যা করলাম, কেননা ছেলেটি যুবক হওয়ার পর সে কাফের হইত এবং পিতামাতাকে খুব বেশি কষ্ট দিত। এই জন্য তাকে আমি হত্যা করলাম, যেন আল্লাহ তা’আলা তার পিতা-মাতাকে একটি নেক সন্তান দান করেন।

(৩) প্রাচির: প্রাচীরটি ছিল উক্ত গ্রামের দুইজন এতিম সন্তানের, প্রাচিরের নিছেই ছিল অনেক গুপ্তধন, যা ছিল ঐ এতিমদের পিতার সৎউপার্যন। সুতরাং আপনার পালন কর্তা দয়াবশত: ইচ্ছা করলেন যে, তারা যৌবনে পদার্পন করুক এবং নিজের গুপ্তধন উদ্ধার করুক। আমি নিজমতে এটা করিনি। আপনি যে বিষয়ে ধৈর্য্য ধারন করতে অক্ষম হয়েছিলেন এই হল তার ব্যাখ্যা।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সম্পূর্ণ ঘটনা বর্ণনা করে বলেন: যদি হযরত মূছা (আঃ) আরও ধৈর্য্য ধরতেন, তবে আরো অনেক কিছু জানা যেতন। (বুখারী ও মুসলিম)।
২১ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/কামাল/ইস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে