সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৩:৪৮:২৪

নাস্তিকের আযাব

নাস্তিকের আযাব

ইসলাম ডেস্ক: একদা জনৈক ব্যক্তি কম্পিত পদে দৌড়ে এসে দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) এর দরবারে হাযির হল। লোকটির চুল-দাড়ির অর্ধাংশ কাঁচা আর অর্ধাংশ পাকা। হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) বিস্মিয়াভিভূত হয়ে এর কারণ জিজ্ঞেসা করলেন, সে বলিল, আমি অমুক কবরস্থানে দেখলাম এক লোক অপর লোককে বেত্রাঘাত করছে, প্রত্যেকটি আঘাতের সাথে সাথে লোকটির সারা দেহে ধাউ ধাউ করে আগুন জ্বলে উঠছে। অপরাধী ব্যক্তিটি আমাকে দেখামাত্র লুটিয়ে পড়ে কাতর কন্ঠে আবেদন করল আমাকে সাহায্য কর; আমাকে একটু সাহায্য কর। আঘাতকারী বলল, একে কখনও সাহায্য করো না। কারণ, এ ব্যক্তি নাস্তিক কবরের শাস্তি বিশ্বাস করত না। কেয়ামত পর্যন্ত তার এ প্রকারে শাস্তি হতে থাকবে। এঘটনা দেখে ভয়ে আমার শরীর ফুলে উঠল এবং আমার অবস্থার এরূপ পরিবর্তন ঘটে।


হযরত ওসমান গনি (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি যখন কোন কবরের কাছ দিয়ে পথ অতিক্রম করতেন, তখন এত কাঁদতেন যে, চোখের পানিতে তাঁর দাড়ি ভিজে যেত। লোকেরা জিজ্ঞেসা করতেন, বেহেশত দোযখের আলোচনায় আপনি কাঁদেন  না, আর এখন কবর দেখে এত কাঁদছেন কেন। তিনি বললেন, আমি মহানবী হুযুরে পাক (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, কবর পরকালের মঞ্জিল সমূহের প্রথম মঞ্জিল, যে কবর আযাব থেকে রেহাই পাবে তার অন্যান্য মঞ্জিল সহজ হবে। আর যে কবরের আযাব হতে রেহাই পাবে না তার অন্যান্য মাঞ্জিল আরো কঠিন হবে।

মহানবী রাসূলে আকরাম (সাঃ) আরো এরশাদ করেন, আমি আখেরাতের যা কিছু দেখতে পেয়েছি এর মধ্যে কবরকে সবচেয়ে বেশী কঠিন স্থানে দেখতে পেয়েছি।

হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন এক ব্যক্তি মদীনা শরীফে ইন্তেকাল করলেন, তার জানাযার নামাজ মহানবী (সাঃ) পড়ালেন, নামাজের পর তিনি বললেন যদি এ ব্যক্তি সফরাবস্থায় মৃত্যু বরণ করত খুব ভাল হত। এক সাহাবী আরয করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এর কারণ কি? মহানবী হুযুর (সাঃ) বললেন, কেউ আপন ঘর থেকে যত দূরে মারা যাবে, দুরুত্ব হিসেব করে ঐ পরিমাণ তাকে বেহেশতে জায়গা দেয়া হবে। এরূপ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকেও বর্ণিত আছে।

হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন মোমেন বান্দার কবরের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে উভয় দিকে চল্লিশ গজ লম্বা করা হয়।

হযরত ইবনে আবিদ দুনিয়া (রহঃ) লিখেছেন, হযরত ঈসা (আঃ) একদা একটি কবরের নিকট গেলেন, তাঁর সাথে তাঁর সহচরবৃন্দও ছিলেন। লোকেরা কবরের চাপ ও অন্ধকারের আলোচনা করলেন। হযরত ঈসা (আঃ) এরশাদ করলেন, তোমরা তোমাদের মায়ের উদরে অত্যন্ত স্বল্প জায়গায় ছিলে, অত:পর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তোমাদেরকে দুনিয়াতে তার চেয়ে অনেক প্রশস্ত জায়গা করে দিবেন। (কিতাবুল কুবুর)

হযরত আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তা’আলা কাতারের ডান দিকে দাঁড়ানো লোকদের উপর রহমত নাযিল করেন এবং ফেরেশতাগন তাদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করেন। (আবু দাউদ)

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মসজিদে কাতারের বামদিকে এ জন্য দাঁড়ায় যে, সেখানে লোক কম দাঁড়িয়েছে তবে সে দুইটা সওয়াব পাবে।

ফায়দা: সাহাবা (রাঃ) যখন জানতে পারলেন যে কাতারের বাম দিক অপেক্ষা ডাক দিকের ফযীলত বেশি তখন তাঁদের আগ্রহ পয়দা হল যে, ডান দিকে দাঁড়াবেন। ফলে বাম দিকে জায়গা খালি থাকতে লাগল। এর পরিপ্রেক্ষিতে নবী করীম রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বাম দিকে দাঁড়ানোর ফযীলতও ইরশাদ করলেন।

হযরত আয়শা (রাঃ) বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তা’আলা কাতারের খালি জায়গা পূরণকারীদের উপর রহমত নাযিল করেন এবং ফেরেশতাগন তাদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করেন।

যে ব্যক্তি নামাযের কাতার ভালভাবে মিলিয়ে দাঁড়াবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে নিজের সাথে মিলিত করবেন। কাতার মিলিত করার অর্থ দুইজনের মাঝখানে কোন ফাঁক না রাখা। আর কাতার ছিন্ন করার অর্থ হলো দু’জনের মাঝখানে ফাঁকা রাখা।

অন্য এক হাদিসে আছে- তোমরা তোমাদের নামাযের কাতার ঠিক করো এবং সোজা করো। অন্যথায় আল্লাহ তা’আলা তোমাদের চেহারা পাল্টে দিবেন। কোন কোন বর্ণনায় আছে যে, এ কারণে তোমাদের অন্তরে দ্বন্দ্ব ও বিরোধ সৃষ্টি হবে। (বুখারী, মুসলিম)

রুকু সিজদায় ইমামের আগে মাথা উঠানো মারাত্মক গুনাহ। এক হাদীসে এসেছে তোমাদের কেউ কি এ বিষয়ে ভয় করে না যে, যখন সে রুকু সিজদায় ইমামের আগে মাথা উঠায়, তখন তার মাথা গাধার মাথায় পরিবর্তন করে দিবেন। কিংবা তার আকৃতি গাধার আকৃতিতে পরিবর্তন করে দিবেন। (বুখারী, মুসলিম)
২১ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/কামাল/ইস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে