দুঃখের সাথে সুখ কথাটি যে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ইহা আল্লাহর পবিত্র বানী। আবিসিনিয়ার বাদশা অতিশয় দয়ালু ও ভদ্র ছিলেন। তিনি খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী ছিলেন। তথাপি অতি আদর-যতেœর সহিত মুসলমানদিগকে তথায় বসবাস করিতে অনুমতি দিলেন। খবর পাইয়া মক্কার কাফের ছোট একটি প্রতিনিধিদল মূল্যবান উপঢৌকনসহ আবিসিনিয়ায় পাঠাইলেন তাহরা যথাসময়ে বাদশার দরবারে উপস্থিত হইল এবং উপঢৌকন প্রদান করত: বলিতে লাগিল, যে মহারাজ! আমাদের মক্কা নগরের দুষ্ট প্রকৃতির লোক নতুন ধর্মের প্রচার করিয়া দেশে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করিয়া পালাইয়া গোপনে আপনার রাষ্ট্রে আসিয়াছে। যেহেতু এক পক্ষের রায়ের উপর মীমাংসা হয় না; তাই বাদশা মুসলিম বাহিনীর দলপতি হযরত জাফর (রাঃ)-কে তলব করিলেন।
তৎকালীন নিয়ম অনুযায়ী বাদশার দরবারে হজির হইয়া শির নত করিতে হইত, কিন্তু হযরত জাফর (রাঃ) তথায় হাজির হইয়া বাদশাহকে সালাম করিলেন। উপস্থিত মতলেই আপত্তি জানইয়া বাদশাহকে সেজদা করিতে বলিলে তিনি উত্তরে বলিলেন, এই মাথা মহান সৃষ্টা ছাড়া আর কোথাও নত করা যায় না। বাদশা ইহাতে নীরবতা অবলম্বন করিলেন এবং জাফর (রাঃ) কে হিজরতের কারণ জিজ্ঞাসা করিলেন। জাফর (রাঃ) বলিতে লাগিলেন- হে বাদশাহ! জুলুম, অত্যাচার, ব্যভিচার, জিনায় মত্ত থাকিতাম। ঠিক সেই মুহুর্তে মহান প্রভু আমাদের দেশে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম রাসূল, মানবতার অগ্রদূত, বিশ্বনবী মোহাম্মদ (সাঃ)-কে পাঠাইলেন। তিনি আমাদিগকে ইসলামের প্রতি আহ্বান জানান এবং এক আল্লাহর ইবাদত করিতে নির্দেশ দেন। মূর্তি ও অগ্নিপূজা আমরা ত্যাগ করিলাম তাই মক্কার কাফেররা আমাদের উপর অমানুষিক অত্যাচার ও জুলুম চালায়। সুতরাং আমরা প্রাণের ভয়ে আপনার দেশে আশ্রয় লাইয়াছি।
বাদশাহ বলিলেন- আপনাদের ধর্ম ইসলামের কি কোন ধর্মগ্রন্থ নেই? যদি থাকিয়া থাকে তাহা হইলে কি একটু পাঠ করিয়া শুনাইবেন? বাদশাহ যেহেতু খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী ছিলেন, তাই সাহাবী জাফর (রাঃ) স্থান, কাল ও পাত্র বিবেচনা করিয়া পবিত্র কোরআনের সূরায়ে মরিয়মের প্রথম অংশ তেলাওয়াত করিয়া শুনাইলেন। যাহাতে হযরত মরিয়ম (আঃ), তাহার পুত্র ঈসা (আঃ) এবং হযরত ইয়াহহিয়া (আঃ) এর বিস্তারিত আলোচনা রহিয়াছে।
বাদশাহ কোরআন পাকের মধ্যে হযরত ঈসা (আঃ) এর সম্পর্কে বিস্তারিত সত্যের আলো পাইয়া মুদ্ধ হইলেন এবং ওহীর বানী মহান প্রভুর পবিত্র জবান শ্রবণে তিনি কাঁদিয়া ফেলিলেন এবং তৎক্ষণাৎ মন্তব্য করিলেন যে, পবিত্র কোরআন এবং হযরত ঈসা (আঃ)-এর নিয়া আসা পবিত্র ইঞ্জিল কিতাব উভয়েই একই জ্যোতির কেন্দ্র হইতে আবির্ভূত। সুতরাং মুসলিম কাফেলা আমার আবিসিনিয়ায় নির্বিঘেœ বসবাস করিবে। পক্ষান্তরে মক্কা হইতে যাহারা তাহার বিরোধীতা করিতে আসিয়াছে আমি তোমাদের উপঢৌকন ঘৃণা করি। তোমরা মুহুর্তকাল দেরী না করিয়া আবিসিনিয়া ত্যাগ কর।
বাদশাহ আবিসিনিয়ার জনগন এবং উপস্থিত পাদরীগনকে উদ্দেশ্য করিয়া বলিলেন, আমি বিশ্বাস করি মুসলমানগন যে রাসুল (সাঃ)-এর পরিচয় দিয়াছেন তাঁহার কথা ইঞ্জিল কিতাবে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ রহিয়াছে। তিনি ইমামুল মোরছালিন, শেষ এবং শ্রেষ্ঠ নবী। আমি যদি রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত না থাকিতাম অবশ্যই তাঁহার নিকট উপস্থিত হইতাম।
সেদিন হইতে বাদশার অন্তরে ইসলামের মহব্বত স্থান পায়। অতঃপর হিজরতের সপ্ত বৎসরে হুজুর (সাঃ) এর লিখিত পবিত্র চিঠি পাওয়ামাত্রই তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিলেন। নবম হিজরীতে বাদশাহ ইন্তেকাল করিলে হুজুর (সাঃ) সাহাবাসহ তাঁহার গায়েবানা জানাযার নামাজ আদায় করেন এবং তাহার প্রতি সৌভাগ্যসূচক মন্তব্য পেশ করেন, যাহা পবিত্র হাদীসে স্থান পাইয়াছে। মুসলমানদের ভাগ্যের তিনটি সৌভাগ্যের প্রথমটি বাস্তবায়িত হইল। ঐতিহাসিকগণের মতে সর্বশেষে আবিসিনিয়ায় মুসলমানদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৩ জন পুরুষ এবং ১৮ জন মহিলা। (চলমান)
২১ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/কামাল/ইস