আহলে কিতাবদের, বিশেষ করে খ্রিস্টানদের ধর্মীয় চিন্তায় বিভ্রান্তি তুলে ধরা সুরা মায়িদার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। সুরা মায়িদার ৭২ ও ৭৩ নম্বর আয়াত থেকে আরো কয়েকটি আয়াতে ঈসা (আ.)-কে খোদা বলে মনে করার মত মারাত্মক বিভ্রান্তির সমালোচনা করা হয়েছে। খ্রিস্টানরা তাদের এই মতকে সত্য বলে মনে করে থাকে। মহান আল্লাহ বলছেন:
“তারা বলে মরিয়ম তনয় ঈসা বা মাসিহ ইবনে মারিয়ামই হচ্ছেন আল্লাহ। যারা এটা বলে তারা পুরোপুরি খোদাদ্রোহী বা কাফির হয়ে গেছে। অথচ ঈসা নিজেই বলেছেন: হে ইস্রাইলের বংশের লোকেরা! এক আল্লাহই হচ্ছেন আমার ও তোমাদেরও প্রতিপালক তথা প্রভু এবং তোমরা তাঁরই ইবাদত কর। নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম।
নিশ্চয় তারা কাফের, যারা বলে: আল্লাহ তিনের এক; অথচ এক উপাস্য ছাড়া কোন উপাস্য নেই। যদি তারা স্বীয় উক্তি থেকে নিবৃত্ত না হয়, তবে তাদের মধ্যে যারা কুফরে অটল থাকবে, তাদের উপর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি পতিত হবে।”
এই দুই আয়াতে ত্রিত্ববাদ ও ঈসা (আ.)-কে খোদা মনে করার বিষয়টিকে প্রকাশ্য কুফর বা খোদাদ্রোহীতা বলে উল্লেখ করেছেন মহান আল্লাহ। খোদ ঈসা (আ.) বনি-ইসরাইলকে স্পষ্টভাবে বলেছেন: তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর যিনি আমার ও তোমাদের প্রতিপালক। এভাবে তিনি নিজেকে আল্লাহর বান্দাহ বা দাস বলে অভিহিত করেছেন এবং আল্লাহর কোনো শরিক থাকার ধারণাকে অবাস্তব ধারণা বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিষয়টির ওপর জোর দিতে গিয়ে ঈসা (আ.) আরো বলেছেন, যারা আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করে আল্লাহ তাদের জন্য বেহেশত হারাম করেছেন এবং তাদেরকে দোযখের আগুনে স্থান দেবেন।
সুরা মায়িদার ৭৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:
"মরিয়ম-তনয় মসীহ রাসূল ছাড়া আর কিছু নন। তাঁর আগেও অনেক রাসূল বিদায় নিয়েছেন আর তার মা ছিলেন খুবই সৎকর্মশীল ও সত্যভাষী। তাঁরা উভয়েই খাদ্য খেতেন। (দেখুন, আমি তাদের জন্যে কিভাবে যুক্তি-প্রমাণ তুলে ধরি, আবার দেখুন, তারা উল্টা কোন দিকে যাচেছ।)"
এই আয়াতেও মহান আল্লাহ ঈসা (আ.)-কে খোদা মনে করার অসারতা তুলে ধরে বলছেন: ঈসা অতীতের নবীদের মতই একজন নবী। তিনি ও তাঁর মা দু'জনই মানুষ এবং দু'জনই খাবার খেতেন। অর্থাৎ তারা অন্যান্য সৃষ্টির মতই ধ্বংসশীল। ধ্বংসশীল কেউ তো খোদা হতে পারে না। তা ছাড়া সবাই জানেন যে ঈসা (আ.) জন্ম নিয়েছিলেন মরিয়মের গর্ভে এবং অন্য সব শিশুর মতই শৈশব অতিক্রম করে বড় হন। এটা কি সম্ভব যে খোদা কোনো মায়ের পেটে প্রতিপালিত হবেন এবং জন্ম-পরবর্তী নানা পর্যায়ে নিজের বিকাশের জন্য মায়ের মুখাপেক্ষী হবেন?
সুরা মায়িদার ১১০ নম্বর আয়াত থেকে এই সুরার শেষ আয়াত পর্যন্ত ঈসা (আ.)'র ঘটনা ও তাঁকে এবং তাঁর উম্মতকে দেয়া আল্লাহর নানা নেয়ামত সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে নবজাতক হিসেবে দোলনায় থেকেই কথা বলা এবং তাকে তাওরাত ও ইঞ্জিলসহ প্রজ্ঞা এবং কিতাব শিক্ষা দেয়ার বিষয়। ১১২ থেকে ১১৫ নম্বর আয়াতে আকাশ থেকে খাদ্য-সামগ্রী নামার ঘটনা ইশারায় উল্লেখ করা হয়েছে।
সুরা মায়িদার ১১০, ১১৬ ও ১১৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:
ঈসা ইবনে মরিয়ম বললেন, হে আল্লাহ আমাদের পালনকর্তা আমাদের জন্য আকাশ থেকে খাদ্যভর্তি খাঞ্চা অবতরণ করুন। তা আমাদের জন্যে অর্থাৎ, আমাদের প্রথম ও পরবর্তী সবার জন্যে আনন্দোৎসব হবে এবং আপনার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন হবে। আপনি আমাদের রুজি দিন। আপনিই শ্রেষ্ঠ রুজিদাতা। .... ............. ............
(বিচার দিবস বা কিয়ামতের দিন) যখন আল্লাহ বলবেন: হে ঈসা ইবনে মরিয়ম! তুমি কি লোকদেরকে বলে দিয়েছিলে যে, আল্লাহকে ছেড়ে আমাকে ও আমার মাকে উপাস্য সাব্যস্ত কর? ঈসা বলবেন: আপনি পবিত্র! আমার জন্যে শোভা পায় না যে, আমি এমন কথা বলি, যা বলার কোন অধিকার আমার নেই। যদি আমি বলে থাকি, তবে আপনি অবশ্যই জানেন; ...।
আমি তো তাদেরকে কিছুই বলিনি, শুধু সে কথাই বলেছি যা আপনি বলতে আদেশ করেছিলেন যে, তোমরা আল্লাহর দাসত্ব অবলম্বন কর যিনি আমার ও তোমাদের পালনকর্তা ....।
২১ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রেডিও তেহরান/এইচএস/কেএস