মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করার গুরুত্ব প্রসঙ্গে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মসজিদ থেকে নাপাক, নোংরা ও পীড়াদায়ক বস্তু অপসারণ করে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য বেহেশতে ঘর তৈরি করে দিবেন।’ হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আরেক হাদিসে বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালার কাছে সর্বাধিক প্রিয় ও পছন্দনীয় স্থান হলো মসজিদ।’ সে হিসেবে প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, মসজিদের সম্মান ও আদব কায়দা রক্ষা করে চলা।
মসজিদের নিয়ম-কানুন যথাযথভাবে পালনকারীর জন্য রয়েছে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মহা পুরস্কার। হজরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে চায় সে যেন আমাকে ভালোবাসে, যে আমার সঙ্গে ভালোবাসা রাখতে চায় সে যেন আমার সাহাবাদের ভালোবাসে, যে আমার সাহাবাদের ভালোবাসতে চায় সে যেন কোরানকে ভালোবাসে, যে কোরানকে ভালোবাসতে চায় সে যেন মসজিদকে ভালোবাসে। কেননা মসজিদ হচ্ছে আল্লাহর ঘর।’ মসজিদের ভালোবাসা বলতে আলেমরা বলেন, মসজিদে গিয়ে নিয়মিত জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করা, মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করা ইত্যাদিকেই বোঝায়। এ ছাড়া মসজিদের আদবের মধ্যে রয়েছে, ইতেকাফের নিয়ত ছাড়া মসজিদে কোনো কিছু না খাওয়া, মসজিদ নোংরা না করা, মসজিদে জোরে হাঁটাহাঁটি না করা, মসজিদে প্রবেশ কিংবা বের হওয়ার সময় ধাক্কাধাক্কি না করা, সামনের কাতারে বসার জন্য পরে এসেও আগে বসা মুসল্লিদের কাঁধের ওপর দিয়ে পা তুলে যাতায়াত না করা ইত্যাদি। এ ছাড়াও মসজিদে অহেতুক কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে।
তাই মসজিদ মুসলমানদের নিকট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র স্থান। জামায়াতে নামাজ পড়ার জন্য নির্মিত স্থাপনা। মসজিদ মুসলমানদের বিভিন্ন ধর্মীয় কার্যাবলীর প্রাণকেন্দ্র। এখানে ইবাদত-বন্দেগি ছাড়াও শিক্ষা প্রদান, বিভিন্ন তথ্য বিতরণ এবং সামাজিক বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়। মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে সম্মানিত মসজিদ হলো তিনটি। যথা- মসজিদে হারাম, মসজিদে নববি এবং মসজিদে আকসা।
মুসলিম সমাজ আবর্তিত হয় মসজিদকে কেন্দ্র করে। ফলে বিশ্বের যেখানে রয়েছে মুসলমানের বাস সেখানেই গড়ে উঠেছে মসজিদ। যেখানে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি, সেখানে ব্যবস্থা করা হয়েছে নামাজের স্থানের। মসজিদ যে শুধু মুসলিম দেশেই রয়েছে তা নয়। মুসলমান দেশ ছাড়াও বিশ্বের অমুসলিম অনেক দেশেই অনেক ঐতিহাসিক মসজিদ রয়েছে।
বিশ্বে মোট মসজিদের সংখ্যা ২৫ লাখের বেশি। মুসলিম এবং অমুসলিম দেশ মিলিয়ে এই সংখ্যা। তবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মসজিদ রয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারতে। সেখানে মসজিদের সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। সাম্প্রতিক এক জরিপে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশে মসজিদের সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। দেশের আয়তনের সঙ্গে সংখ্যার তুলনা করলে বাংলাদেশেই মসজিদের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। আর নগরী হিসেবে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় রয়েছে সবচেয়ে বেশি মসজিদ।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের মতে, ঢাকায় মসজিদের সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার। তবে বাস্তবে ঢাকায় মসজিদের সংখ্যা আরো বেশি হলেও প্রচারণায় পিছিয়ে আছে ঢাকা। কারণ, বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ইরাকের ফালুজা শহরকে মসজিদের নগরী হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। অথচ বাস্তবতা হলো, ফালুজায় রয়েছে মাত্র দুই শতাধিক মসজিদ।
এদিকে বিশ্বে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ার সাথে মসজিদের সংখ্যা্ও বাড়ছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিককারে আমেরিকা, ইউরোপে মসজিদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমান সম্প্রদায় বেশি করে মূলধারার সঙ্গে যুক্ত হতে শুরু করেছে। নতুন এক জরিপে দেখা গেছে, দেশটিতে বর্তমানে মসজিদ রয়েছে ২১০৬টি। এ সংখ্যা ২০০০ সালের চেয়ে শতকরা ৭৪ ভাগ বেশি। এর মধ্যে নিউইয়র্কে ১৯২টি, দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়াতে ১২০টি, ফ্লোরিডায় ১১৮টি এবং টেক্সাসে রয়েছে ১৬৬টি। এমনকি মন্টানা, যেখানে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বাইরের জনসংখ্যা হচ্ছে শতকরা এক ভাগেরও কম, সেখানেও দুটি মসজিদ রয়েছে।
২০০২ সালে মসজিদের সংখ্যা ছিল ১২০৯টি। আর ২০০২ সালে মসজিদ বাড়ছে যেখানে ঈদের জামাতে অংশ নিয়েছিলেন ২০ লাখ মুসল্লি, সেখানে ২০১১ সালে এ সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ। এএফপি, রয়টার্স।
২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিএআর