জ্ঞান শব্দের আরবি হচ্ছে ‘ইলম’ যা কুরআনের একটি পরিভাষা। ‘ইলম’ শব্দটি আরবি ‘আলামত’ শব্দ থেকে নির্গত হয়েছে। ‘আলামত’ শব্দের অর্থ হচ্ছে, প্রত্যক্ষ দর্শন বা বাস্তবে বোঝানো অথবা কোনো নির্দিষ্ট জিনিসের প্রতি ইঙ্গিত বা ইশারা করা। আল কুরআনের ভাষায় প্রত্যক্ষ জ্ঞান বা প্রত্যক্ষ দর্শনকে ‘য়াইনুল ইয়াক্কিন’ বা নিজ চোখে দর্শন অথবা প্রত্যক্ষ জ্ঞান বলা হয়েছে।
একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবো আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তাঁর রাসূল সা:-এর ওপর সর্বপ্রথম যে ওহি বা নির্দেশ নাজিল হয়েছিল তা জ্ঞান অর্জন সম্পর্কে এবং প্রথম নাজিলকৃত শব্দটি হলো ‘ইক্বরা’ অর্থ্যাৎ পড়ো।
ইবনে মাজাহ শরিফের হাদিসে হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর জ্ঞান অর্জন করা ফরজ’।
আল কুরআনের আরো কয়েকটি সূরার বিভিন্ন আয়াতে উল্লেখ আছে। আল্লাহ তায়ালা আরো ঘোষণা করেছেন, ‘আমি জিন ও ইনসান (মানুষ) সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য,’ যার উল্লেখ আছে আল কুরআনের সূরা আজ যারিয়াতের ৫৬ নম্বর আয়াতে।
জ্ঞান অর্জনের হাকিকত সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা সূরা আল বাকারার ২৬৯ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তাকে (একান্তভাবে) তাঁর পক্ষ থেকে (ওহির বা কুরআন-সুন্নাহর) বিশেষ জ্ঞান দান করেন, আর যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালার এই (ওহির বা কুরআন-সুন্নাহর) বিশেষ জ্ঞান দেয়া হলো সে যেন মনে করে তাকে সত্যিকার অর্থেই প্রচুর কল্যাণ দান করা হয়েছে, আর প্রজ্ঞাসম্পন্ন ব্যক্তি ছাড়া আল্লাহ তায়ালার এসব কথা থেকে অন্য কেউ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না।’
আল্লাহ তায়ালা সূরা আল ফাতির-এর ২৮ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই জ্ঞানী লোকেরাই আমাকে বেশি ভয় করে চলে আর আল্লাহ তায়ালা মহাপরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল’। আল্লাহ তয়ালা সূরা আঝ ঝুমারের ৯ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘(হে নবী!) আপনি বলুন, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে ? বুদ্ধিমান লোকেরাই তো (আল্লাহ তায়ালার) নসিহত গ্রহণ করে থাকে।’
জ্ঞান অর্জনের ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা সূরা মুজাদালার ১১ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে আর যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে উচ্চ মর্যাদা দেবেন আর তোমরা যা কিছু করো না কেন আল্লাহ তায়ালা সে বিষয়ে পূর্ণ অবহিত।’ তিরমিজি শরিফের হাদিসে হজরত আবু হুরায়রাহ রা: থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ‘রাসূল সা: বলেছেন, মুনাফিকের মধ্যে দু’টি চরিত্রের সমাবেশ ঘটতে পারে না, এর একটি হচ্ছে নৈতিকতা ও সৎ চরিত্র আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, দ্বীনের সুষ্ঠু জ্ঞান।’ তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ শরিফের হাদিসে হজরত ছাখবারা আজদি রা: থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দ্বীনী-ইলম অন্বেষণ করে এটা তার পূর্বকৃত গুনাহের জন্য কাফফারা স্বরূপ।’
মানুষকে তার প্রতিপালকের ইবাদত করতে হলেও কিভাবে কী করতে হবে সে সম্পর্কেও তাকে অবশ্যই জানতে বা জ্ঞান অর্জন করতে হবে। মানুষকে অবশ্য অবশ্যই ন্যূনতম হলেও মহাজ্ঞানী প্রতিপালক বা সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। তাই, এ কথা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে, ‘মুসলমান হওয়ার জন্য জ্ঞান অর্জন করা ফরজ।’
২১ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/আরএ/আরএম