শনিবার, ০৯ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৮:৪০:২০

লেখিকার জবানবন্দি : ইসলাম হচ্ছে সেই সত্য যা আমি বহু বছর ধরে খুঁজে বেড়াচ্ছিলামি

লেখিকার জবানবন্দি : ইসলাম হচ্ছে সেই সত্য যা আমি বহু বছর ধরে খুঁজে বেড়াচ্ছিলামি

ইসলাম ডেস্ক : ফ্রান্সের বিশিষ্ট লেখক ও মহিলা ব্যক্তিত্ব কেয়ার জোবার্ট সম্প্রতি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। ইরানের তেহরানের রেডিও ইসলাম ওয়েব সংস্করণে গত ৩ অক্টোবর তার ইসলাম গ্রহণের কাহিনী তুলে ধরেছে। কেয়ার জোবার্টর শিক্ষা বিষয়ে স্নাতক ও শিশু সাহিত্য বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রিধারী। তিনি একজন বিশিষ্ট লেখক ও শিল্পী। ইসলামে দীতি হওয়া সম্পর্কে মিসেস কেয়ার বলেছেন, বিভিন্ন ধর্ম ও মতাদর্শ নিয়ে অনুসন্ধান চালানোর সময় ঘটনাক্রমে ও একান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইসলাম ধর্মের সঙ্গে পরিচিত হই। এর আগ পর্যন্ত ভাবতাম, ইসলাম ইহুদি ধর্মের মতই বিশেষ জাতির ধর্ম। তাই ইসলামের প্রতি আমার আগ্রহ ছিল না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইরানি ও লেবাননি শিার্থীদের ধর্ম এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান সংক্রান্ত আলোচনা ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে আমাকে জানতে উৎসাহ যোগায়। ফলে ইসলাম ধর্ম সংক্রান্ত কয়েকটি বই পড়ে এ ধর্ম সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি। সে সময় দুটি বিষয় আমাকে খুব আকৃষ্ট করেছিল। একটি হল, স্রষ্টার সাথে মানুষের সম্পর্কের ব্যাপারে ইসলামের ধারণা। আর দ্বিতীয়টি হল, ইসলামের বিশ্বদৃষ্টি ও জীবনযাপনের রীতি বা কর্মসূচির মধ্যে ভারসাম্য। নওমুসলিম মিসেস কেয়ার আরো বলেছেন: ইসলাম সম্পর্কে ছয় মাস ধরে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জনের পর আমার মনে হলো আমি আর নিরপে থাকতে পারছি না। আমি সত্যকে জেনেছি এবং তা মেনেও নিয়েছি। এ ছাড়াও ইসলামের অন্য যে বিষয়টি আমার ওপর দারুণ প্রভাব ফেলেছিল তা হলো ইসলাম সব নবীকে একত্ববাদ বা তৌহিদের প্রচারক হিসেবে সম্মান করে এবং তাঁদেরকে নবী হিসেবে মেনে নিয়েছে। সত্যি বলতে কি আমি ইসলাম ধর্মের মাধ্যমেই হজরত ঈসা (আ.) বা যিশু খ্রিষ্টের আসল পরিচয় জানতে পেরেছি। যদিও শৈশব থেকেই তাঁকে ভালোবাসতাম, তা সত্ত্বেও তাঁর ব্যাপারে গির্জার দাবিগুলোকে বিশ্বাস করতে পারিনি। ইসলামের সাথে পরিচয়ের সুবাদে আমি অন্য দৃষ্টিতে ঈসা (আ.) কে দেখার সুযোগ পেলাম ও তাঁকেও নিজ ধর্মের নবী হিসেবে জানলাম। মিসেস কেয়ার আরো বলেছেন: ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে স্রষ্টা সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে। স্রষ্টা সম্পর্কে গির্জার দৃষ্টিভঙ্গি মোটেও স্বচ্ছ নয়। এ দৃষ্টিভঙ্গি পিতা-খোদা ও সন্তান-খোদার মধ্যেই অস্পষ্ট ঘুরপাকে আবর্তিত হয়। এটা গির্জার সেইসব রহস্যের মধ্যে অন্যতম যেগুলো উপলব্ধি করা সম্ভব নয় বলে মনে করা হয়। কিন্তু আল্লাহ সম্পর্কে ইসলামের অত্যন্ত স্পষ্ট ও স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি উপলব্ধি করতে পেরে আমার অন্তরের অন্তস্তলে এ অনুভূতি জন্ম নিল যে এটা হচ্ছে সেই সত্য যা আমি বহু বছর ধরে খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম। নওমুসলিম মিসেস কেয়ার মনে করেন, ইসলাম সহজ-সরল, অস্পষ্টতাবিহীন ও সর্বজনীন ধর্ম এবং এ ধর্ম মানুষের সামনে স্পষ্ট পথ দেখায়। ইসলাম এমন এক স্বচ্ছ বিশ্বাস তুলে ধরে যা বিশ্ব জগৎকে চিনিয়ে দেয় এবং বিশ্ব জগতে মানুষের অবস্থানকে স্পষ্ট করে। শিা ও প্রশিণ বিষয়ের বিশেষজ্ঞ নওমুসলিম মিসেস কেয়ার এখন শিশুদের পবিত্র ও কোমল মনকে মহাপ্রজ্ঞার অধিকারী এক আল্লাহমুখী করতে সচেষ্ট। তিনি তাদেরকে ধর্মের ছায়াতলে নিয়ে বিচ্যুতির ঝড়-ঝঞ্ঝার হাত থেকে রা করতে চান। কেয়ারের মতে ধর্ম মানুষের চিন্তা ও বিশ্বাসকে সংশোধন করার সর্বাত্মক আন্দোলন। তিনি বলেছেন, উচ্চতর মানবীয় নৈতিক গুণাবলি অর্জিত ও বিকশিত হয় আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং অভ্যন্তরীণ দায়িত্ববোধের আলোকে। ধর্ম যথাযথ ও শক্তিশালী শিার মাধ্যমে মানুষের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। কারণ, ইচ্ছার স্বাধীনতা ধর্মের অন্যতম ভিত্তি এবং সবাইকে তার কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। অন্যদিকে ধর্ম বলে অস্তিত্বের জগৎ অসীম জ্ঞান থেকে উৎসারিত হয়েছে এবং এ বিশ্ব জগত এমন এক ব্যাপক বিস্তৃত বই যার প্রতিটি পৃষ্ঠাই গুরুত্বপূর্ণ। এসবই সব ধরনের গবেষণার উপযুক্ত। এ ধরনের বিশ্ব-দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্ব-জগৎ ও সৃষ্টির নানা রহস্য সম্পর্কে অব্যাহত চিন্তা-ভাবনায় সহায়তা করে, ফলে মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রগতি ঘটে। ইসলাম সমাজের সব ক্ষেত্রে নারীর সুস্থ ও সক্রিয় উপস্থিতির জন্য হিজাব বা শালীন পোশাকের ব্যবস্থা করেছে। অন্য দিকে পাশ্চাত্য নারীর বলগাহীন স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। এ প্রসঙ্গে নওমুসলিম মিসেস কেয়ার বলেছেন, ফরাসি নারীরা পদদলিত হওয়া অধিকারগুলো ফিরে পাওয়ার জন্য যুগে যুগে সংগ্রাম করেছে। তারা এসব সংগ্রাম অনেক কিছু অর্জন করলেও হারিয়েছেও অনেক কিছু। আসলে তারা পুরুষদের মাধ্যমে ব্যবহৃত কিছু অধিকারই পেতে চেয়েছিল। ফলে নারী-পুরুষের পার্থক্যের আলোকে নারীর বিশেষ ও প্রকৃত অধিকারগুলো তারা অর্জন করতে পারেনি, যেসব অধিকার হুবহু পুরুষদের ব্যবহৃত অধিকার না হওয়া সত্ত্বেও নারীকে মানুষ হিসেবে পুরুষের সমান মর্যাদাদেয়। ফরাসি নারীদের এ আন্দোলনে (পাশ্চাত্যের নারীবাদী আন্দোলনের অনুকরণের ফলে) সবচেয়ে বেশি তির শিকার হয়েছে পরিবার-ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থা অত্যন্ত নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। কারণ, তারা (নারীবাদীরা) নারী ও পুরুষ যে পরস্পরের পরিপূরক তা বিশ্বাস করে না। বরং তারা নারী ও পুরুষের পৃথক স্বাধীনতা ও সুযোগ-সুবিধার নীতিতে বিশ্বাসী। পাশ্চাত্যের বর্তমান সংস্কৃতিতে ব্যক্তিকে পরিবারের ওপর প্রাধান্য দেয়া হয়। আর এ জন্যই পরিবার-ব্যবস্থা এতটা নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। ফরাসি নওমুসলিম মিসেস কেয়ার আরো বলেছেন, দাম্পত্য জীবনে সমঝোতার জন্য কোনো কোনো েেত্র আত্মত্যাগ ও পরস্পরকে ধৈর্যের সঙ্গে উপলব্ধি করা জরুরি। পাশ্চাত্ত্যে ব্যক্তি-স্বার্থকে পরিবারের ওপর প্রাধান্য দেয়া হয়। ফলে কোনো সমস্যা দেখা দিলেই তারা ব্যক্তি স্বার্থ আদায়ের জন্য অস্থির হয়ে ওঠেন এবং কোনো ধৈর্য না ধরেই বা কোনো ছাড় না দিয়েই স্বামী-স্ত্রী পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তাই পশ্চিমা নারী তাদের ঐতিহ্যবাহী অবস্থান থেকে মুক্ত হওয়া সত্ত্বেও এখনও উপযুক্ত অবস্থান খুঁজে পায়নি। এভাবে নারীর অধিকার ও তার সামাজিক সম্মান সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন এসেছে। নারীর ওপর যুগ যুগ ধরে জুলুম চলায় আমি এ ব্যাপারে বেশ স্পর্শকাতর ছিলাম। ইসলাম নারীর দায়িত্ব ও ভূমিকার েেত্র পার্থক্যে বিশ্বাসী হওয়ার পাশাপাশি তাদের মানবীয় সম্মানকে সমান বলে মনে করে এবং একই সাথে তাদেরকে একে-অপরের পরিপূরক বলে মনে করে। আমার দৃষ্টিতে ইসলামের এই দৃষ্টিভঙ্গি নারী-পুরুষের সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে ভালো পথ। ফরাসি নওমুসলিম মিসেস কেয়ার হিজাবের মধ্যে প্রশান্তি ও সম্মান অনুভব করেন। পাশ্চাত্ত্য হিজাবকে নারীর জন্য বন্দীত্ব বলে তুলে ধরতে চায়। ইসলামের শত্রুরা জানে মুসলিম নারীকে পবিত্রতা ও শালীনতা থেকে দূরে রাখতে সম হলে মুসলিম প্রজন্মের ওপর সাংস্কৃতিক আগ্রাসান চালানো সহজ হবে এবং মুসলিম যুব প্রজন্মকে চরিত্রহীন করার পথ সুগম হবে। ইসলাম নারীকে হিজাব ও সতীত্ব বজায় রাখার দিকে আহ্বান জানায়। সন্তানকে মানুষ ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে স্নেহময়ী মায়ের প্রশিণের ভূমিকাকে গুরুত্ব দেয় ইসলাম। হিজাব ফরাসি নওমুসলিম মিসেস কেয়ারকে গৃহবন্দী করেনি বরং বিনম্র করেছে। হিজাব পরেও তিনি বিভিন্ন গঠনমূলক ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। শিশু সাহিত্য সম্পর্কিত তার কয়েকটি বইও প্রকাশিত হয়েছে।(সংগ্রহ ও গ্রন্থনা : হাফিজা তাহিরা হ্যাপী) ৯ জানুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসএম/ডিআরএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে