আমরা মুসলমান হিসেবে নিয়মিত নামাজ রোজা করলেও ইসলামের পূর্ণাঙ্গ বিধিবিধান হয়তো অনেকেই মেনে চলি না। কেউ নামাজ পড়ি কিন্তু রোজা রাখি না। কেউ রোজাও রাখি কিন্তু ফরজ হওয়া জাকাত আদায় করি না। কেউবা এসবও করি কিন্তু পরিবারে বা সমাজে পর্দার বিধান মেনে চলি না। অথচ এই বিধানগুলো ঠুনকো অজুহাতে এড়িয়ে চলার সুযোগ ইসলামে নেই।
এই প্রতিবেদনে পাকিস্তানের এমন একটি গ্রামের কথা বলবো, যেখানে ছোট থেকে বড় সবাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। ওই গ্রামের কেউ নেশা করেন না। এমনকি সিগারেটও খান না। পুরো গ্রামের দোকানগুলোতে গত ২০ বছর ধরে সিগারেট বিক্রিই করা হয় না। গ্রামে বিয়েশাদি হয় মসজিদে। সাদাসিধেভাবে। এক্ষেত্রে ইসলামী বিধানের পরিপূর্ণ লক্ষ্য রাখা হয়। বিয়ের মধ্যে গানবাজনা হয় না। কোনো বিয়েতে গানবাজনার ব্যবস্থা করা হলে সামাজিকভাবে ওই বিয়েকে বয়কট করেন সবাই। গ্রামের প্রতিটি কবর মাটির। ইটবালু দিয়ে পাকা করা হয় না। ওই গ্রামে কোনো ভিখারি নেই। সবাই কাজকর্ম করে উপার্জন করেন।
গ্রামটি পাকিস্তানের ফয়সালাবাদে। জানা যায়, ওই গ্রামে ৯০ বছরের পুরোনো একটি মাদরাসা রয়েছে। যেখান থেকে সাধারণ মানুষকে ইসলামের দিকনির্দেশনা দেয়া হয়। যেকোনো ধরনের সমস্যা নিয়ে লোকজন মাদরাসায় হাজির হন আগে। ওই মাদরাসার প্রভাবেই পুরো গ্রামে এমন পরিবর্তন এসেছে বলে দাবি করেন, মাদরাসার শিক্ষক হাফেজ আমীন। তিনি টানা ৪০ বছর ধরে ওই মাদরাসায় শিক্ষকতা করছেন।
হাফেজ আমীন পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম উর্দু পয়েন্টকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমাদের গ্রামে পরিবর্তন এমনিতেই আসেনি। আমাদের মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ গ্রামে দাওয়াতি কাজ করেছেন। মানুষের মাঝে ইসলামকে সুন্দর ও সহজভাবে উপস্থাপন করেছেন। ইসলামের বিধান মানার ক্ষেত্রে এ গ্রামের সবাই একপন্থী। যার কারণে সবাইকে এক দিকনির্দেশনায় পথ দেখানো সহজ হয়।
হাফেজ আমীন বলেন, আমাদের গ্রামের এক লোক তার পরিবারের এক সদস্যের বিয়েতে গানবাজনার ব্যবস্থা করলে ওই বিয়েতে গ্রামের কেউ যায়নি। এমনকি তার নিকটাত্মীয়রাও যায়নি। গ্রামের পরিবর্তনের পেছনে সবার এমন নজিরবিহীন একতাও একটি কারণ বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, আমাদের গ্রামের কোনো দোকানে বা বাড়িতে টিভি নেই। হাতেগোনা কয়েকটি বাড়িতে আছে। তবে, আমাদের মাদরাসা থেকে তাদের বলে দেয়া আছে–টিভি চালালেও ভলিউম কমিয়ে দেখতে হবে। কোনো পথচারী কোনো বাড়ি থেকে টিভির শব্দ শুনতে পেলে সাথে সাথে তিনি দাঁড়িয়ে যান এবং ওই বাড়িতে গিয়ে লোকজনকে বোঝান। এসব বিষয়ে গ্রামের কেউ কখনো বিতর্ক করেন না বলেও জানান তিনি। বরং দুঃখপ্রকাশ করে অসামাজিক বা অনৈসলামিক কাজ থেকে বিরত থাকেন।