জাওয়াদ তাহের : আল্লাহ তাআলা মানুষের স্বভাব ও রুচির মধ্যে সম্মান ও মর্যাদার তীব্র বাসনা দিয়েছেন। মানুষ আকাঙ্ক্ষা করে যে সে মর্যাদার সর্বোচ্চ শিখরে থাকবে। এ মর্যাদা অর্জন করার জন্য সে সব ধরনের কাজ করে বেড়ায়। এই লোভের কারণে পরস্পর ঝগড়া-বিবাদ, খুনাখুনি, হানাহানি ও রক্তপাত হয়।
কেউ মনে করে সম্মান আর মর্যাদা পয়সা-কড়ির মধ্যে, আবার কেউ মনে করে সম্মান আর মর্যাদা পদ-পদবির মধ্যে, তাই এগুলোর মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করার জন্য উগ্র বাসনা লালন করতে থাকে।
অথচ আল্লাহ তাআলা এসবের মাঝে শ্রেষ্ঠত্ব আর মর্যাদা রাখেননি। সম্পদ তো আল্লাহ তাআলা নির্ধারিত রূপে বণ্টন করে দিয়েছেন। শত চেষ্টা করেও কেউ নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে একটুও বেশি লাভ করতে পারবে না।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তবে কি তারাই তোমার রবের রহমত বণ্টন করবে? পার্থিব জীবনে তাদের জীবিকাও তো আমিই বণ্টন করেছি এবং আমিই তাদের একজনকে অন্যদের ওপর মর্যাদায় উন্নত করেছি, যাতে তাদের একে অন্যের দ্বারা কাজ নিতে পারে। তোমার রবের রহমত তো তারা যা (অর্থ-সম্পদ) সঞ্চয় করে, তা অপেক্ষা অনেক শ্রেয়। (সুরা : আজ-জুখরুফ, আয়াত : ৩২)
মানুষ যে জিনিসের জন্য এত লড়াই করে সেগুলো প্রকারান্তে মর্যাদার চেয়ে অমর্যাদাই ডেকে আনে। শুধু অর্থবিত্ত, প্রভাব-প্রতিপত্তি এগুলো কখনো মর্যাদার কারণ হতে পারে না।
বরং এসবের কারণে কত মানুষের জীবনে অশান্তির ভয়াল অন্ধকার নেমে এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের সবাইকে এক পুরুষ ও এক নারী হতে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অন্যকে চিনতে পারো।
প্রকৃতপক্ষে তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা বেশি মর্যাদাবান সে-ই, যে তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি মুত্তাকি। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু জানেন, সব কিছু সম্পর্কে অবহিত। ’ (সুরা : আল হুজুরাত, আয়াত : ১৩)
মানুষের মধ্যে মর্যাদা লাভের যে তীব্র আকাঙ্ক্ষা আছে তার উত্তম ব্যবহার হচ্ছে নিজেকে তাকওয়া অর্জনে নিয়োজিত করা। যে ব্যক্তি যত বেশি মুত্তাকি হবে, আল্লাহ তাআলা তাকে তত মর্যাদার উচ্চ শিখরে আরোহণ করাবেন।
আর মানুষের অন্তরে আল্লাহ তাআলা তার মর্যাদা ঢেলে দেবেন। যে মর্যাদা কেউ কারো থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না। এই মর্যাদার কারণে পরস্পর ঝগড়া-বিবাদ হবে না। বরং এর জন্য অন্যরা ঈর্ষা করবেন।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন ব্যক্তি বেশি সম্মানিত? তিনি বলেন, তাদের মধ্যে সে-ই আল্লাহর কাছে বেশি সম্মানিত, যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আল্লাহভীরু। (বুখারি, হাদিস : ৪৬৮৯)
আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রকৃত তাকওয়া অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।