ইসলাম ডেস্ক : জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদগুলোর অন্যতম কোলন শহরের সেন্ট্রাল মসজিদ। প্রথম বারের মতো এ মসজিদে জুমার নামাজ উপলক্ষে উচ্চৈঃস্বরে সুমধুর আজান শোনা গেছে। শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) শহর কর্তৃপক্ষের সম্মতিক্রমে সীমিত পরিসরে এ আজান শোনা যায়।
আলজাজিরার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত বছর মসজিদের আজান দেওয়ার অনুমতি প্রার্থনার প্রক্রিয়া শুরু করে জার্মানির চতুর্থ বৃহত্তম শহরটির কর্তৃপক্ষ। দুপুর ১২টা থেকে ৩টার মধ্যে সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিটের মধ্যে আজান দেওয়া যাবে। মসজিদের অবস্থান অনুসারে আওয়াজের সীমারেখা নির্ধারণ করা হয়।
তবে জার্মানিতে আজান শুনতে পাওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম না হলেও দেশটির বৃহত্তম এ মসজিদে জুমার দিনে উচ্চস্বরে আজান দেওয়ার ঘটনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ মসজিদগুলোতে উচ্চস্বরে আজান শোনা যায় না। ফলে জুমার দিনের আজানের ধ্বনি মুসল্লিদের অন্তরে তৈরি করে অন্যরকম আবেগ ও অনুভূতি।
সেন্ট্রাল মসজিদটি কোলন শহরের ঠিক পশ্চিমে এহরেনফেল্ড জেলার একটি ব্যস্ততম সড়কের পাশে অবস্থিত। মসজিদের দুই পাশে রয়েছে সুউচ্চ দুই মিনার। ফুলের কুঁড়ির আকৃতিতে তৈরি মসজিদটি কাঁচ দিয়ে আবৃত। তাতে রয়েছে প্রাকৃতিক আলো-বাতাস । ফলে দর্শকদের কাছে মসজিদের পাশাপাশি তা অন্যরকম স্থাপনা যা দেখলে চোখ ও মন উভয়টি প্রশান্তিতে ভরে উঠে। এতে একসঙ্গে ১২ শ মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন।
তুরস্ক ভিত্তিক সংগঠন তার্কিশ-ইসলামিক ইউনিয়ন ফর রিলিজিয়াস অ্যাফেয়ার্স (ডিআইটিআইবি) মসজিদটি পরিচালনা করে। ২০১৮ সালে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান তা উদ্বোধন করেন। এখন পর্যন্ত কেবল মসজিদের ভেতর থেকেই আজানের শব্দ শোনা যায়।
এক বিবৃতিতে ডিআইটিআইবি জানায়, গত বুধবার শহর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের দুই বছরের জন্য পরীক্ষামূলক আজান সম্প্রচারের চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুসারে, লাউডস্পিকারের মাধ্যমে আজান দেওয়া হবে এবং তা মসজিদের বাইরে থেকেও শোনা যাবে। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে তা ৬০ ডিসিবলের মধ্যে সীমাবদ্ধ হতে হবে।
ডিআইটিআইবি-এর সেক্রেটারি জেনারেল আবদুর রহমান আতাসোয় বলেন, ‘মসজিদে আজান শুনে আমরা খুবই আনন্দিত। উচ্চস্বরে আজানের অর্থ, এখানে মুসলিমদের আবাস রয়েছে। ’ বৃহত্তম এ মসজিদে প্রথম বার উচ্চৈঃস্বরে আজান দিতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন মসজিদটির ইমাম মুস্তফা কাদের।
এদিকে কোলন শহরের মেয়র হেনরিয়েট রেকার বলেছেন, আজান দেওয়ার অনুমোদনের মাধ্যমে এ শহরের বৈচিত্রময়তা প্রকাশিত হয়েছে এবং স্থানীয় মুসলিমদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে। এ উদ্যোগ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে আইনের ন্যায্যতা দিয়েছে।
অবশ্য আজানের অনুমোদন প্রকল্পের ওপর নানা বিধি-নিষেধের মাধ্যমে বিষয়টির সংবেদনশীলতা বোঝা যায়। এর আগে ২০০০ সালের দিকে দেশটির ডানপন্থী দল ও কোলন শহরের আর্চবীশপ সেন্ট্রাল মসজিদ নির্মাণের বিরোধিতা করেছিল।
জার্মানিতে ৫০ লাখের বেশি মুসলিম বসবাস করে, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ছয় শতাংশ। সুউচ্চ ডোম ক্যাথেড্রালের জন্য বিখ্যাত কোলন শহরে লক্ষাধিক মুসলিম জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় জার্মানিতে ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ক বিতর্ক বেশ কম। অপরদিকে বিভিন্ন কারণে ফ্রান্সে ২৪টি মসজিদ বন্ধ করেছে দেশটির সরকার এবং প্রায় এক শ মসজিদ নজরদারির মধ্যে রেখেছে।
১৯৮৫ সালে সর্বপ্রথম ডুরেন শহরে লাউডস্পিকারের মাধ্যমে আজান দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর ২০২০ সালের এপ্রিলে করোনার প্রাদুর্ভাবে যখন পুরো বিশ্ব থমকে যায় তখন মানসিক প্রশান্তি তৈরি করতে বার্লিনে প্রথম বারের মতো আজান শোনা যায়। তখন বিষয়টি বিশ্বজুড়ে তুমুল আলোচিত হয়েছিল। সূত্র : আলজাজিরা