ইসলাম ডেস্ক : মুসলিম উম্মাহর পবিত্র রমজান মাসে-পরবর্তী মাসের নাম শাওয়াল। এ মাসের ফজিলত ও তাৎপর্য অনেক। ইসলামের অন্যতম বুনিয়াদ হজের জন্য মহান আল্লাহ যে তিনটি মাসকে নির্ধারণ করেছেন, তা হলো শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ। এ জন্য এ মাসগুলোকে ‘আশহুরুল হজ’ তথা ‘হজের মাসসমূহ’ বলা হয়।
শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখে পালিত হয় ঈদুল ফিতর। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর দয়াময় প্রতিপালকের কাছে প্রতিদান লাভের আশায় মুসলমানরা ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করে। ধনী-গরিব, বাদশা-ফকির একই কাতারে দাঁড়ায়। ঈদুল ফিতরের দিনে সদকাতুল ফিতর আদায় করা ও ঈদের সালাত আদায় করা ওয়াজিব।
এ মাসে নফল রোজা পালন করা অন্যান্য আমল যেমন, দান-সাদকা করা, অসহায় ও দুর্বলদের সাহায্য করা, অভুক্তকে খাদ্য দান করা, অসুস্থ মানুষের সেবা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এককথায় এ মাস নফল ইবাদত-বন্দেগির জন্য খুবই উপযোগী।
হিজরি ক্যালেন্ডারের বারো মাসের নামগুলোর মতো ‘শাওয়াল’ শব্দটিও আরবি। এর অর্থ হলো উঁচু করা, উন্নত করা, পূর্ণতা লাভ করা, বিজয়ী হওয়া ইত্যাদি। কারণ এ মাসের নেক আমলের মাধ্যমে মানুষের উন্নতি হয়, অপূর্ণ মানুষ আল্লাহর কাছে পূর্ণতা লাভ করে, ফলে আল্লাহর কাছে মকবুল হয়।
কেউ কেউ বলেন, শাওয়াল শব্দটি ‘শাওল’ মূলধাতু থেকে নির্গত। এর অর্থ বাইরে গমন করা। এ মাসে আরববাসী ঘরবাড়ি ত্যাগ করে বাইরে ভ্রমণ করত। তাই এর শাওয়াল নামকরণ করা হয়ে থাকে। শাওয়াল মাসে ইসলামের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। তৃতীয় হিজরির ৭ শাওয়াল (২৩ মার্চ ৬২৫ খ্রি.) ঐতিহাসিক উহুদের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।
এ মাসে হজরত লুত (আ.)-এর জাতি ধ্বংস হয়েছিল, হজরত আদ (আ.)-এর জাতি ঘূর্ণিঝড়ে ধ্বংস হয়েছিল, হজরত সালিহ (আ.)-এর জাতির ওপর আসমানি শাস্তি অবতীর্ণ হয়েছিল। শাওয়াল মাস বিয়ের জন্য উত্তম। এ মাসে নবীজী (সা.)-এর সঙ্গে হজরত আয়েশা (রা.)-এর বিয়ে হয়েছিল।
আর তিনি নবীজীর ঘরেও আগমন করেছিলেন এ মাসে। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) আমাকে বিয়ে করেছেন শাওয়াল মাসে, শাওয়াল মাসেই আমাদের বাসর হয়। আর হজরত আয়েশা তার (সম্পর্কীয়) মেয়েদের বাসর হওয়া পছন্দ করতেন শাওয়াল মাসে। ইসলাম পূর্ব যুগে কোনো কোনো লোকের ধারণা ছিল শাওয়াল মাসে বিয়ে অশুভ ও অকল্যাণকর।
আয়েশা (রা.) এ ধারণাকে খণ্ডন করে বলেন, রাসুল (সা.) আমাকে শাওয়াল মাসেই বিয়ে করেছেন, শাওয়াল মাসেই বিয়ে-রজনী উদযাপন করেছেন। অথচ তার অনুগ্রহ লাভে আমার চেয়ে সৌভাগ্যবতী স্ত্রী আর কে আছে? (মুসলিম : ১৪২৩)। আল্লাহতায়ালা আমাদের শাওয়ালের ছয় রোজা ও অন্যান্য সব ফজিলত অর্জনের তাওফিক দান করুন।