বুধবার, ৩১ মে, ২০২৩, ০৯:৩৬:৫২

পবিত্র কোরআনে হাফেজ হলেন অন্ধ আমান উল্লাহ

পবিত্র কোরআনে হাফেজ হলেন অন্ধ আমান উল্লাহ

ইসলাম ডেস্ক : মো. আমান উল্লাহ (২৪)। তিনি জন্ম থেকেই পৃথিবীর কোনো কিছুই চোখে দেখতে পাননি। তবুও শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক নানা প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে প্রায় পাঁচ বছরে তিনি পবিত্র কুরআন মাজিদের ত্রিশ পারা সম্পূর্ণ মুখস্থ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

এখন উচ্চ আলেম হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কিতাব খানায় পড়ছেন। এর মধ্যে মাদরাসায় জালালাইন শরীফ তার শেষ হতে চলছে। তিনি বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের দেবগ্রাম মাজহারুল হক দারুল উলুম মাদরাসায় পড়াশুনা করছেন।

আমান উল্লাহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার খিদিরপুর গ্রামের মৃত ফজলুল হকের ছেলে। দুই ভাই চার বোনের মধ্যে আমান উল্লাহ সবার ছোট। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আমান উল্লাহ নিজের ইচ্ছাশক্তি নিরলস পরিশ্রম আর চেষ্টা সাধনায় আল্লাহর অশেষ রহমতে তার বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। পবিত্র কুরআনই একমাত্র কিতাব, যেটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুখস্থ করা যায়।

কুারআন মুখস্থকারীর জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নানা পুরস্কারের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। হাদিস শরীফে কুরআন তেলওয়াতকারী, কুরআনের হাফেজ ও কুরআনের ধারক-বাহকদের মর্যাদার কথা বলা হয়েছে। এদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। ধর্মের প্রতি মমত্ববোধ এবং আল্লাহতায়ালার সন্তষ্টির জন্য নিজে যেমন কুরআন তেলাওয়াত শিখেন, তেমনি সন্তানদের শেখান। অনেকে আবার সন্তানদের পবিত্র কুরআনের হাফেজ বানান। এর মধ্যে আমান উল্লাহ একজন।

হাফেজ আমান উল্লাহ বলেন, জন্ম থেকে তিনি অন্ধ। দুনিয়ার কিছু দেখতে পান না। তার জন্মের পর বাবা তাকে কুরআনের হাফেজ বানানোর জন্য ইচ্ছা পোষন করেন। তাছাড়া হাফেজ হওয়ার জন্য ছোট বেলা থেকেই তার ও ইচ্ছা ছিল প্রবল। মাত্র ১২ বছর বয়সে তার বাবা প্রথমে পৌর শহরের দেবগ্রাম পশ্চিম পাড়া আলতাফিয়া হাফিজিয়া মাদরাসায় তাকে ভর্তি করান। অল্প সময়ের মধ্যেই সে নাজেরা সহিহশুদ্ধভাবে শেষ করে পবিত্র কুরআন হিফজ শুরু করেন। হিফজ শুরুর পরই তার ওস্তাদরা তার মাঝে মেধার দ্যুতি দেখতে পান। তার নিরলস প্রচেষ্টা, শিক্ষকের আন্তরিকতা আর সহপাঠীদের সহযোগিতায় দীর্ঘ ৫ বছর নিষ্ঠার সঙ্গে পড়াশুনা করায় তিনি পবিত্র কুরআন মুখস্থ করে তার লক্ষ্যে পৌঁছে।

আমান উল্লাহ বলেন, আমি চোখে দেখতে না পাড়ায় মাদরাসার ওস্তাদ পবিত্র কুরআনের একটি লাইন বলে দিতেন আমি তা মুখস্থ করতাম। মুখস্থ শেষে হুজুরের কাছে বললে নতুন করে পরবর্তী আরেকটি আয়াত বলতেন আমি তা মুখস্থ করতাম। এভাবেই আমি আল্লাহর মেহেরবানিতে রাত দিন পরিশ্রক করে ত্রিশ পারা কুরআন মুখস্থ করি। এ কাজে তার সহপাঠীরা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন বলে জানান।

তিনি জানান, হিফজ শেষ করার পর দেবগ্রাম মাজহারুল হক দারুল উলুম মাদরাসায় কিতাব বিভাগে ভর্তি হন। বর্তমানে জালালাইন শরীফ পড়ছেন। পর্যায়ক্রমে মেশকাত, দাউরায়ে হাদিসসহ অন্যন্য বিভাগ শেষ করে সব ঠিক থাকলে সে একজন দক্ষ আলেম হয়ে কুরআন ও হাদিসের আলোকে জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখছেন। পাশাপাশি মানুষের কল্যাণে দ্বীনের খেদমত করার আশা করছেন।

সহপাঠী মাওলান ইলিয়াস বলেন, আমান উল্লাহ আসলেই একজন মেধাবী ছাত্র। সে চোখে দেখতে না পেলেও তার অনুমান শক্তি রয়েছে অনেক বেশি। তাছাড়া আমরা দেখে দেখে পড়ে যেটা ভালো করে মুখস্থ করতে সময় লেগে যায় কিন্তু সে একবার শুনে এটা আয়ত্ব করে ফেলে। সে খুবই শান্ত স্বভাবের একজন ছাত্র।

দেবগ্রাম মাজহারুল হক দারুল উলুম মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা মুফতী হাবিবুল্লাহ ওসমানী বলেন, আমান উল্লাহর মেধাশক্তি খুবই প্রখর। একবার পড়া শুনলে দ্বিতীয় বার আর তাকে বলা লাগে না। তাছাড়া কোনো মানুষ যদি একবার তার সঙ্গে কথা বলে পরবর্তীতে দেখা হলে সে বলে দিতে পারে কে এই লোক। মাদরাসা আসা যাওয়ার পথে তার কোনো সমস্যা হয় না। সবাই তাকে সহযোগিতা করছে। সে খুবই একজন পরহেজগার ছাত্র।

দেবগ্রাম মাজহারুল হক দারুল উলুম মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আসয়াদুজ্জামান বলেন, আমান উল্লাহ খুবই একজন ভালো ছাত্র। সর্বপ্রথম এই গ্রামের একটি হাফিজিয়া মাদরাসায় ভর্তি হয়ে কুরআন শরীফ মুখস্থ করে। এরপর সে বেবগ্রাম মাজহারুল হক দারুল উলুম মাদরাসায় কিতাব বিভাগে ভর্তি হয়ে দক্ষতার সঙ্গে এক এক শ্রেণি এগিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে এই মাদরাসায় জালালাইন শরীফ পড়ছে। আসলে কুরআন হলো একটি জীবন্ত মুজেজা। যে কোনো কিছু দেখতে পাইনা ওস্তাদের জবানে শুনে শুনে কুরআন মুখস্ত করে ফেলা এটাই হলো মুজেজার দৃষ্টান্ত।

তিনি আরো বলেন, আমান উল্লাহ কখনো মাদরাসা ফাঁকি দেন না। দুচোখে না দেখতে পেলেও সবার আগে আসার চেষ্টা করে। মাদরাসায় শিক্ষকের পাশাপাশি তাকে তার সহকর্মীরা সহযোগিতা করছেন। সে আমাদের এই মাদরাসার গর্ব। আল্লাহ তায়ালা তাকে তার স্বপ্ন পূরণ ও দ্বীনের কল্যাণে কাজ করার তৌফিক দান করুন। সূত্র : ডেইলি বাংলাদেশ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে