মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা: মানবতার মুক্তির দিশা মহাগ্রন্থ আল-কোরআন। এটি মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। এটি আল্লাহর রহমত, এটি হিদায়াত, এটি নুর, এটি শিফা বা আরোগ্য, এটি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মহান অধিপতির পবিত্র কালাম। যে ব্যক্তি একনিষ্ঠভাবে তার জীবনকে কোরআনচর্চায় উৎসর্গ করে, মহান আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত করেন।
কোরআনের অন্যতম অলৌকিক শক্তি হলো, তা মানুষের অন্তরে সংরক্ষিত হয়ে যায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বরং যাদের জ্ঞান দেওয়া হয়েছে তাদের অন্তরে তা (কোরআন) এক সুস্পষ্ট নিদর্শন।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৪৯)
যারা এই কোরআন শেখে, চর্চা করে, গবেষণা করে, কোরআনের দাওয়াত দেয়, কোরআন মোতাবেক জীবন গড়ে, তারা মহান আল্লাহর বিশেষ বান্দায় পরিণত হয়। হাদিসের ভাষায় যাদের ‘আহলুল্লাহ’ বা আল্লাহর পরিজন বলা হয়েছে।
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোরআন তিলাওয়াতকারীরা আল্লাহর পরিজন এবং তাঁর বিশেষ বান্দা।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২১৫) ফলে তারা আসমান ও জমিনে সম্মানের পাত্র হয়ে যায়। তাদের যথাযথ সম্মান করা মুমিনের কর্তব্যে পরিণত হয়। যেহেতু তারা আল্লাহর প্রিয় ও বিশেষ বান্দায় পরিণত হয়, তাদের সম্মান করা আল্লাহকে সম্মান করার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
আল্লাহর নবী (সা.) তিন শ্রেণির মানুষকে সম্মান করার ব্যাপারে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন, তার অন্যতম একটি শ্রেণি হলো, কোরআনের ধারক-বাহক। আবু মুসা আল-আশআরি (রহ.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই বৃদ্ধ মুসলিমকে সম্মান করা, কোরআনের ধারক-বাহক ও ন্যায়পরায়ণ শাসকের প্রতি সম্মান দেখানো মহান আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অন্তর্ভুক্ত।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৪৩)
সুবহানাল্লাহ, এই হলো পবিত্র কোরআন, যা দুনিয়া ও আখিরাতে তার ধারক-বাহককে সম্মানিত করে। এর জ্ঞান এমন অমূল্য সম্পদ, যা নিয়ে ঈর্ষা করা জায়েজ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, দুই ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে ঈর্ষা করা যায় না।
এক ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ তাআলা কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন এবং সে তা দিন-রাত তিলাওয়াত করে। আর তা শুনে তার প্রতিবেশীরা তাকে বলে, হায়! আমাদের যদি এমন জ্ঞান দেওয়া হতো, যেমন অমুককে দেওয়া হয়েছে, তাহলে আমিও তার মতো আমল করতাম। অন্য আর এক ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন এবং সে সম্পদ সত্য ও ন্যায়ের পথে খরচ করে। এ অবস্থা দেখে অন্য এক ব্যক্তি বলে, হায়! আমাকে যদি অমুক ব্যক্তির মতো সম্পদ দেওয়া হতো, তাহলে সে যেমন ব্যয় করছে, আমিও তেমন ব্যয় করতাম।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০২৬)
কোরআনের জ্ঞান এমন অমূল্য সম্পদ, যা আখিরাতে মানুষকে মর্যাদার মুকুট পরাবে, মহান আল্লাহর কাছে তার ধারকের জন্য সুপারিশ করবে, এমনকি কোরআন চর্চাকারীর মা-বাবাকে পর্যন্ত বিশেষ সংবর্ধনা দেবে। কোরআনের প্রতিটি আয়াত তার ধারক-বাহকের মর্যাদা এক ধাপ করে বাড়িয়ে দেবে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, কোরআন কিয়ামত দিবসে হাজির হয়ে বলবে, হে আমার প্রভু, একে (কোরআনের বাহককে) অলংকার পরিয়ে দিন। তারপর তাকে সম্মান ও মর্যাদার মুকুট পরানো হবে। সে আবার বলবে, হে আমার প্রভু, তাকে আরো পোশাক দিন। সুতরাং তাকে মর্যাদার পোশাক পরানো হবে।
সে আবার বলবে, হে আমার প্রভু, তার প্রতি সন্তুষ্ট হোন। কাজেই তিনি তার ওপর সন্তুষ্ট হবেন। তারপর তাকে বলা হবে, তুমি একেক আয়াত পাঠ করতে থাকো এবং ওপরের দিকে উঠতে থাকো। এমনিভাবে প্রতি আয়াতের বিনিময়ে তার একটি করে সওয়াব (মর্যাদা) বাড়ানো হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৯১৫)