ইসলাম ডেস্ক : আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে চাইলে বেশ কিছু গুণ অর্জন করতে হয়। এই গুণগুলোর কথা কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন জায়গায় বর্ণিত হয়েছে। এমন তিনটি গুণ রয়েছে যা অর্জন করলে যেকেউ আল্লাহর প্রিয় বান্দা বলে গণ্য হবে এবং আল্লাহ তায়ালা তাকে সুনিশ্চত প্রতিদান দেবেন। আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের এমন তিনটি গুণ হলো-
১. ‘আল্লাহর গ্রন্থ অর্থাৎ পবিত্র কোরআন গুরুত্বসহ নিয়মিত পাঠ করা।
২. ইকামাতে সালাত। অর্থাৎ, নামায যেভাবে পড়তে ও প্রতিষ্ঠিত করতে বলা হয়েছে, ঠিক সেইভাবে পড়া ও প্রতিষ্ঠিত করা। অর্থাৎ, নামাজের সময়ের প্রতি যথাযথ খেয়াল রাখা, আরকানসমূহ পূর্ণভাবে ধীর-স্থিরতার সঙ্গে আদায় করা এবং বিনয় ও নম্রতার সঙ্গে যত্ন সহকারে তা আদায় করা।
৩. আল্লাহ তায়ালা যে সম্পদ দান করেছেন তা থেকে দিন ও রাতে প্রকাশ্যে ও গোপনে প্রয়োজন মত দান করে।
গোপনে ও প্রকাশ্যে দান করার প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার কারণ হলো- রিয়া থেকে আত্মরক্ষার জন্য অধিকাংশ ইবাদত এবং দান-সদকা গোপনে করা উত্তম। তবে মানুষকে ভালো কাজের দিকে আহ্বানের উদ্দেশ্যে মাঝেমাঝে প্রকাশ্যে এবং মানুষকে দেখিয়ে দান করাও জরুরি।
যেমন নামাজের জন্য বেশি লোক সমাগমের ব্যবস্থা করতে মাইকে আজান দিয়ে জামাতে নামাজ আদায়ের বিধান রয়েছে, ঠিক তেমনি অন্যকে উৎসাহিত করার জন্য কখনো কখনো আল্লাহর পথে প্রকাশ্যে দান করা জরুরি।
ফিকাহবিদরা বলেন, নামাজ ও আল্লাহর পথে ব্যয়ের বিষয়টি যদি ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতে মুয়াক্কাদা আমলের মধ্য থেকে হয়ে থাকে তাহলে তা প্রকাশ্যে করা উত্তম। এছাড়া নফল নামাজ ও নফল দান গোপনেই করা উত্তম।
উপরে বর্ণিত এই তিন গুণ অর্থাৎ, কোরআন তিলাওয়াত, নামাজ আদায়, প্রয়োজন মত দান-সদকা করা- যারা এই তিন ধরনের গুণ অর্জন করতে পারবে তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিদান সুনিশ্চিত। এবং এই প্রতিদানে কোনো লোকসান ও হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
অর্থাৎ, পৃথিবীতে কোনো কাজ করার আগে মানুষ লোকসানের আশঙ্কায় থাকে, লাভ হবে নাকি লোকসান হবে- এর কোনো নিশ্চয়তা থাকে না। কিন্তু যারা সৎকর্মপরায়ণ হবে তাদের এইসব ভালো কাজের কষ্ট ও শ্রম দুনিয়ার কোনো শ্রমের মতো লোকসানের মুখোমুখি হবে না। আল্লাহ তায়ালাই নিজেই এর প্রতিদান দেবেন এবং প্রতিদান দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি তার বান্দাদের নিরাশ করবেন না, বরং তাদের পরিপূর্ণ দান করবেন এবং বেশি বেশি দান করবেন।
পবিত্র কোরআনে এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
اِنَّ الَّذِیۡنَ یَتۡلُوۡنَ کِتٰبَ اللّٰهِ وَ اَقَامُوا الصَّلٰوۃَ وَ اَنۡفَقُوۡا مِمَّا رَزَقۡنٰهُمۡ سِرًّا وَّ عَلَانِیَۃً یَّرۡجُوۡنَ تِجَارَۃً لَّنۡ تَبُوۡرَ لِیُوَفِّیَهُمۡ اُجُوۡرَهُمۡ وَ یَزِیۡدَهُمۡ مِّنۡ فَضۡلِهٖ ؕ اِنَّهٗ غَفُوۡرٌ شَکُوۡرٌ
যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করে আর আল্লাহ তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন এক ব্যবসায়ের আশা করে যাতে কখনো লোকসান হবে না। কারণ, তিনি তাদেরকে তাদের প্রতিফল পূর্ণমাত্রায় দান করবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরো বেশি দেবেন। তিনি অতি ক্ষমাশীল, (ভাল কাজের) বড়ই মর্যাদাদানকারী। (সূরা ফাতির, (৩৫), আয়াত, ২৯- ৩০)
(তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন, ৭/ ৩৩০, তাফসিরে ইবনে কাসির, ১৬/৮২৫)