ইসলাম ডেস্ক : হাজী আবুল ফায়েজ। বয়স ৯০ ছুঁই ছুঁই। সকাল থেকেই ছুটে চলেন পাড়ায় মহল্লায়। আর সমাজের বিত্তবান লোকজনকে দিচ্ছেন পবিত্র হজ ও ওমরা পালন করার পরামর্শ।
যে বয়সের নাতি-নাতনি নিয়ে খেলাধুলা আর ইবাদত বন্দেগী করে আরাম আয়েশে থাকার কথা। কিন্তু সেই বয়সে তিনি আরাম আয়েশের চিন্তা না করে ইবাদত বন্দেগির পাশাপাশি হজ এবং ওমরা পালনকারী লোকজন বের করে তাদের (মুয়াল্লিম) হিসেবে তিনি সহযোগিতার কাজ করছেন।
গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে তিনি বিরামহীনভাবে এ মহৎ কাজটি করে আসছেন। এ কাজ করায় ফলে তিনি এ উপজেলায় বেশ সুনাম অর্জনের সঙ্গে পরিচিতি লাভ করেছেন।
বর্তমানে এ কাজে মুয়াল্লিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করা যেন তার নেশা ও পেশায় পরিণত হয়ে গেছে। এ কাজ করে যে সম্মানি পাচ্ছেন এতে তিনি খুবই খুশি। আবুল ফায়েজ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরশহরের দেবগ্রাম এলাকার বাসিন্দা। পরিবারে তিন ছেলে, চার মেয়ে রয়েছে।
আবুল ফায়েজ বলেন, জীবিকার প্রয়োজনে ১৯৭৯ সালে সর্বপ্রথম সৌদি আরবে যাই। সেখানে প্রায় ২০ বছর একটি প্রতিষ্ঠানে গাড়ি চালক হিসেবে কাজ করি।
১৯৯৮ সালে দেশে ফিরে আসি। তারপর ভালো আরবি বলতে ও বুঝতে পারায় স্থানীয় এক ট্রাভেল এজেন্সির মালিকের নজরে পড়ে যাই। তিনি আমাকে তার ট্রাভেল এজেন্সিতে নিয়ে আসেন। ওই মালিকের পরামর্শে হজ যাত্রীদের গাইড হিসেবে কাজ শুরু করা হয়।
এরপর থেকে পাড়া মহল্লায় ঘুরে হজে যেতে ইচ্ছুক লোকদেরকে যেতে গাইড হিসেবে এ কাজে সহযোগিতা করি। এভাবেই এ পেশায় আমি জড়িয়ে পড়ি। প্রতি বছর নিদিষ্ট বড় হজের সময় এবং ওমরাহ হজ পালনে যাত্রী নিয়ে যাওয়ায় স্থানীয় পর্যায়ে ভালো একটি পরিচিতি লাভ করায় স্থানীয় পর্যায়ে একটি জায়গা তৈরি হয়। গত ২৩ বছরে তিন হাজারের বেশি মানুষকে হজ পালনে গাইড হিসেবে সহযোগিতা করেছেন বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, মহান আল্লাহ তায়ালা নিকট হাজারো শুকরিয়া তিনি আমাকে এখন পর্যন্ত সুস্থ রেখেছেন। আমার ছোট বেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল ইসলামের খেদমত করার। মানুষের কল্যাণে কাজ করার। আল্লাহ আমাকে সেই তৌফিক দিয়েছেন। তবে কোনো টাকা পয়সার জন্য নয়, মানুষের দোয়া আর আল্লাহর রহমত পাওয়ার আশায় এ কাজ করে আসছি। তবে কাজের বিনিময়ে যে টাকা পাচ্ছি তাতে হাজার শুকুর।
তিনি জানান, বয়স হওয়ায় এখন তার ছেলে মেয়েরা এ কাজ না করার জন্য প্রতিনিয়ত বলে আসছে। কিন্তু তাদের এসব কথা কানে তুলছেন না। হজে যেতে লোক তৈরি করা এ কাজ যেন তার নেশায় পরিণত হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, যতদিন হায়াতে বাঁচবো ততদিন যেন এ মহৎ কাজ করে যেতে পারি সে জন্য ছোট বড় সবার কাছে দোয়া চাই। হজে যেতে মানুষকে উৎসাহ দিয়ে তৈরি করা এটা আমার অভ্যাস হয়ে গেছে।
আবুল ফায়েজ বলেন, পৌরশহরের সড়ক বাজারে একটি অফিস আছে। অফিসের এসে আগ্রহীরা যোগাযোগ করেন। তাছাড়া পরিচিত লোকজনের মাধ্যমে খবর পাই কোনো এলাকার কে হজে যেতে চায় তখন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাছাড়া নিকট আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব, পাড়া প্রতিবেশী সবার সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রক্ষা করছি। অনেকে আবার ফোন করে হজে যেতে আমার কাছে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাছাড়া যারা একবার যায় তারাও আমাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছেন।
তিনি আরো বলেন, মক্কা মদিনা সব সময় আমার চোখে ভাসে। আমি বড় হজ করেছি। বদল হজ করেছি ৩০-৩২ বার। ওমরা হজ করেছি বহুবার। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি আল্লাহ যেন মক্কা মদিনায় আমার মউত (মৃত্যু) করে।
উপজেলার দক্ষিণ ইউপির হীরাপুর শহীদ নোয়াব মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সামছুল আলম বলেন, ২০০৬ সালে আবুল ফায়েজের মাধ্যমে ওমরাহ হজ পালন করেছি। আলহামদুলিল্লাহ ভালো সেবা পেয়েছি। কোনো সমস্যা হয়নি।
মোগড়া এলাকার আবুল হোসেন মিয়া বলেন, আজ থেকে ১২ বছর আগে ট্রেনে তার সঙ্গে পরিচয়। হঠাৎ একদিন সকালে বাড়িতে উপস্থিত। এরপর কথার প্রসঙ্গে বললাম আমার হজে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। কিন্তু কিভাবে যাব সেটা নিয়ে চিন্তায় আছি। এরপর তিনি দায়িত্ব নিয়ে আমাকে হজে নিয়ে যায়। কোনো সমস্যা হয়নি।
পৌর শহরের দেবগ্রাম জামিয়া মাজহারুল হক উলুম মাদরাসার প্রিন্সিপাল মুফতি আসাদুজ্জামান বলেন, আসলে আবুল ফায়েজ ভালো মানুষ। তিনি দীর্ঘ বছর ধরে এলাকায় ঘুরে হজ পালন করার জন্য উৎসাহ দিয়ে তৈরি করছেন। যা দেখতে খুবই ভালো লাগছে।