এ.এস.এম.মাহবুবুর রহমান : ভূ-অভ্যন্তরে শিলায় পীড়নের জন্য যে শক্তির সঞ্চয় ঘটে, সে শক্তি হঠাৎ মুক্তি পেলে ভূ-পৃষ্ঠ ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে এবং ভূ-ত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয়; এরূপ আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনকে ভূমিকম্প বলে।
সাধারণত কম্পন-তরঙ্গ থেকে যে শক্তির সৃষ্টি হয়, তা ভূমিকম্পের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এই তরঙ্গ ভূ-গর্ভের কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলে উৎপন্ন হয় এবং উৎসস্থল থেকে তা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
ধর্মীয় ও নৈতিক অবক্ষয়ের কারণেই পৃথিবী আজ হুমকির মুখে। ঝড়, ভারী বর্ষণ, সাইক্লোন, খরা, শৈত্যপ্রবাহ এরই পরিণাম। তবে ভূমিকম্প নাম শুনলেই সবাই ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে যায়। কারণ এই ভূমিকম্প সেকেন্ডেই সব শেষ করে দিতে পারে।
ভূমিকম্প খুবই বিধ্বংসী। ভূমিকম্পের কারণ নিয়ে ভূতত্ত্ববিজ্ঞানিরা বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করলেও ইসলামি বিশ্বাসমতে তা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মানুষের জন্য সতর্কবার্তা এবং আজাবের অংশ।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলে দাও, ‘আল্লাহ তোমাদের উপর থেকে অথবা তোমাদের পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম’ (সুরা আনআম: ৬৫)।
তিনি আরও বলেছেন, ‘আমি ভয় দেখানোর জন্যই (তাদের কাছে আজাবের) নিদর্শনগুলো পাঠাই।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৫৯) সুতরাং ভূমিকম্পের মতো কঠিন পরিস্থিতি সম্মুখীন হওয়ার জন্য মানুষের কৃতকর্মেরই ফল।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে বিপদ-আপদই তোমাদের ওপর আসুক না কেন, তা হচ্ছে তোমাদের নিজেদের হাতের কামাই। আর আল্লাহ তোমাদের অনেক (অপরাধ) ক্ষমা করে দেন।’ (সূরা শুরা: ৩০)
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা অযথা কাউকে শাস্তি দিতে চান না; বরং মানুষের ওপর যে বিপদ আসে, তা তাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ।
ভূমিকম্পের সময় করণীয় আমল
ভূমিকম্পের সময় আজান দেওয়ার বিষয়টি কুরআন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। বরং ভূমিকম্পের সময় নফল নামাজ পড়া যেতে পারে। পাশাপাশি দোয় ও ইস্তেগফারও করা যেতে পারে।
হাদিসে এসেছে, ‘ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বসরায় ভূমিকম্পের সময় নফল নামাজ পড়েছিলেন।’ [সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদিস: ৬৩৮২]
সুতরাং ভূমিকম্পের সময় আজান দিবে না। ফাতহুল বারী ২/৫২১ । এটা এটা উপমহাদেশের বানানো একটা আমল। তারা অধিকাংশই জানে না যে ইবাদতের ক্ষেত্রে কোনো কিছু সাব্যস্ত করতে হলে অবশ্যই দলিল লাগবে। নচেৎ বিদআতের সংজ্ঞায় চলে আসবে। আল্লাহ আমাদের সঠিক জ্ঞান দান করুন।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিনিয়ত ভূমিকম্প হয়। এ কম্পন আগে থেকে আঁচ করা যায় না বলে তাৎক্ষণিকভাবে কী করবেন, তা বুঝে উঠতে পারেন না অনেকে। তাই আল্লাহর কাছে এর ভয়াবহতা থেকে পানাহ চাওয়ার পাশাপশি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যাতে কোন ক্ষয়ক্ষতি না হয়।