ইসলাম ডেস্ক : ‘এডুকেশনাল ইনস্টিটিউটে ক্রিকেটটা যদি ছড়িয়ে দিতে পারি, মাদ্রাসা তারই একটা অংশ, মাদ্রাসায় লাখ লাখ ছাত্র আছে, সেখান থেকে যদি কিছু ক্রিকেটার আসে, তাদের জন্য আমরা সেই ব্যবস্থা করছি’—বাংলাদেশের মাদ্রাসাগুলোকে ক্রিকেটের আওতায় আনতে সম্প্রতি এমন পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেন বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
তবে দেশে কওমি ও আলিয়া (সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন) দুই ধারার মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা চালু থাকলেও বিসিবি সভাপতি তার কথায় কোনো ধারার মাদ্রাসাকে নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি। তাই তার এমন পরিকল্পনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। কেউ কেউ ইতিবাচকভাবে দেখলেও কওমি মাদ্রাসাপন্থি অধিকাংশ লোক এটাকে নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
এসব আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই প্রশ্নও উঠছে অনেক। কেউ জানতে চান, যদি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়, তবে মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের মূল লক্ষ্য অর্জনে অন্তরায় হবে কি না। আবার কেউ কেউ প্রশ্ন করেন, প্রচলিত নিয়মের ক্রিকেট আয়োজন জায়েজ কি না।
এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) নিজের ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলে কথা বলেছেন প্রখ্যাত ইসলামী স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ। নিচে তার বক্তব্যটি তুলে ধরা হলো।
‘ক্রিকেট-ফুটবল বা অন্যান্য যেসব খেলাধুলা আছে, এসবের বিধান অন্য সাধারণ মানুষের জন্য যেমন, মাদ্রাসাছাত্রদের জন্যও একই রকম। ইসলামী শরিয়তের বিধি-বিধান সুস্থ-বিবেকসম্পন্ন সব মুসলিমের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের জন্য, মাদ্রাসাছাত্রদের জন্য বা স্কুল-কলেজের ছাত্রদের জন্য আলাদা কোনো বিধান নেই।’
‘আমাদের সমাজের মানুষ অবশ্য মাদ্রাসাছাত্র বা আলেম-ওলামার কাছ থেকে একধরনের অ্যাক্সপেক্ট করেন, আর সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আরেক ধরনের অ্যাক্সপেক্ট করেন। এই অ্যাক্সপেক্টেশনের ব্যাপারটা হলো, তারা ধারণা করে যে, মাদ্রাসার ছাত্র বা আলেম-ওলামা পরিপূর্ণ দ্বীন পালন করেন। এটা তাদের সুধারণা। আবার বাকিরা দ্বীন থেকে অনেক দূরে। এটা একটা বাস্তবতা প্রায়। সেই প্রেক্ষিতে হয়তো এই অ্যাক্সপেক্ট করে থাকেন।’
‘কিন্তু যখন আমরা শরিয়ার বিধান জানব, সেক্ষেত্রে অবশ্যই একটি বিষয় জানতে হবে যে, মাদ্রাসার ছাত্র বা অন্যদের জন্য আলাদা কোনো বিধান নেই। অতএব ক্রিকেট খেলার বিষয়টা যদি শারীরিক কসরতের জন্য হয়, সেখানে যদি কোনো প্রকার আসক্তির পর্যায় পৌঁছার মতো না হয়, হারাম হাওয়ার মতো অন্য কোনো উপাদান যুক্ত না হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে সেটা অন্য দশটা শারীরিক কসরতের মতো একটা শারীরিক কসরত হিসেবে হালাল। জায়েজ।’
‘এখানে আপনি যদি টাখনুর উপরে প্যান্ট পরেন, সতর মুক্ত না করেন এবং আপনি যদি আসক্তি লেভেল পর্যন্ত না নিয়ে যান, সেখানে যদি জুয়ার কোনো আয়োজন না থাকে, বেপর্দামির আয়োজন না থাকে, তাহলে এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করা মৌলিকভাবে শারীরিক করসতের উদ্দেশ্যে জায়েজ আছে। সেটা মাদ্রাসার ছাত্ররা করলেও জায়েজ, বাইরের লোকরা করলেও জায়েজ।’
‘কিন্তু এর বাইরে যে প্রচলিত ক্রিকেট বোর্ড, আন্তর্জাতিক সংস্থা বা দেশীয় যে সমস্থ খেলাধুলাগুলো হয়ে থাকে, সেগুলোতে আমরা জানি যে, সেখানে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টা থাকে— খেলোয়াড়কে টাকা-পয়সা দেওয়া হয় এবং খেলোয়াড় এটাকে পেশা হিসেবে নেন। এটা না জায়েজ।’
‘কারণ, এটাকে জীবনের পেশা হিসেবে গ্রহণ করা শরিয়ার দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য না। হ্যাঁ, এর বাইরে যদি কোনো হারাম উপাদানের সঙ্গে যুক্ত হাওয়া ছাড়া এমনিতে কোনো টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয় এবং সেখানে যারা ভালো করেন তাদের যদি তৃতীয় পক্ষ পুরস্কার দিয়ে থাকে, খেলোয়াড়রা নিজেদের কেউ কাউকে কিছু দিল না— এমনটা হলে সেটা জায়েজ। এটা যে কেউ করতে পারেন।’
‘কিন্তু আজকাল এটাকে সিরিয়াস ইস্যুতে পরিণত করা হয়েছে। যার নামই হলো খেলা। তামাশা। এটার পেছনে যারা আমাদেরকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছেন, তাদের প্ল্যান ও প্রোগ্রামগুলো দিনের আলোর মতো পরিষ্কার— মানুষের দ্বীনি চেতনাকে নষ্ট করা, দুনিয়ার মধ্যে মগ্ন রাখা। এ ছাড়া তাদের আরও নানাবিধ কর্মাশিয়াল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য আছে, যেগুলো বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে আমরা জাস্ট টুল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছি। এসব টুর্নামেন্ট আয়োজন করার ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো আমাদের মাথায় রাখা দরকার।’
‘হারাম কোনোকিছুতে লিপ্ত হওয়া ছাড়া মৌলিকভাবে টুর্নামেন্ট আয়োজন করা বা খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করা হারাম নয়। অতএব, একটি মুসলিমপ্রধান দেশে এ ধরনের যত আয়োজন হবে, সেখানে যেন শরিয়াবিরোধী কিছু না থাকে—এটা দেখভাল করা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।’
‘খোলাসা কথা হলো, টুর্নামেন্টে হারাম কোনো উপাদান না থাকলে মাদ্রাসাছাত্ররা যদি শারীরিক কসরতের উদ্দেশ্যে অংশগ্রহণ করে, সেটা অন্যদের মতোই জায়েজ। আর যেটা অন্যদের জন্য হারাম, সেটা মাদ্রাসাছাত্রদের জন্যও হারাম।’