ইসলাম ডেস্ক: সৌদি আরবের বর্তমান গ্রান্ড মুফতি আবদুল আজিজ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল লতিফ আশ-শায়েখ বুধবার উকুব আল আরাফায় মুসলমানদের দিকনির্দেশনায় হজের খুতবা দেন। হজের মূল জামায়াতে খুতবা পড়েছেন বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর এই দৃষ্টিহীন নেতা।
আজ (বুধবার) দুপুরে মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা দেন তিনি। দৃষ্টিশক্তিহীন এ ইমাম তুলে ধরেন মুসলিম বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি ও কোরআন-হাদিসের আলোকে করণীয় দিকনির্দেশনা। মসজিদে নামিরা থেকে খুতবার শব্দ গোটা আরাফাত ময়দানে শোনা না গেলেও মুসল্লিরা রেডিও এবং টিভির মাধ্যমে শোনেন তার গুরুত্বপূর্ণ এ খুতবা। হাজিরা জামাতবদ্ধ হয়ে একই আজানে ভিন্ন ভিন্ন একামতে একসঙ্গে আদায় করবেন জোহরের নামাজ।
আব্দুল্ল আজিজ আল আশ-শায়েখ ১৯৪৩ সালে ৩০ নভেম্বর সৌদি আরবের এক ধার্মিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন। ১৯৬২ সালে দাওয়াহ ইনস্টিটিউট তেকে ‘শরিয়াহ’ বিষয়ে গ্রাজুয়েশন শেষ করেন। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি আদ-দাওয়াহ আল-ইলমি ইনিস্টিটিউটের ইমাম ছিলেন। এরপর থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিনি রিয়াদের ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সাউদ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৯৯ সালে সৌদি আরবের গ্রান্ড মুফতি হিসেবে নিয়োগ পান। দুর্বল দৃষ্টিশক্তি নিয়ে জন্মানো আশ-শায়েখ ১৯৬০ সালে তার দৃষ্টিশক্তি একেবারেই হারিয়ে ফেলেন।
খুতবায় গ্র্যান্ড মুফতি কোরআন ও হাদিসের আলোকে আল্লাহ প্রদত্ত পথে চলার উপর গুরুত্ব আরোপ করে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। পাশাপাশি সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়েও নির্দেশনা দেন তিনি। আজকের তাঁর খুতবা বিশ্লেষণে কররে যা যা পাওয়া যায়, তা হলো-
১। মুসলিম উম্মাহর দায়িত্ব বিষয়ক বয়ান
সৌদি গ্র্যান্ড মুফতি হজের খুতবায় মুসলিম উম্মাহকে এক হবার আহ্বান জানান। যে যেখান থেকেই আসুন না কেনো, হাজিদেরকে হজের মর্যাদা রক্ষা করার কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, মুসলিম উম্মাহর দায়িত্ব আল্লাহ কিতাব অনুসরণ করা ও আল্লাহর পথে থাকা। সৌদি সরকার আল্লাহর মেহমান হাজিদের গুরুত্ব দেয়। হাজিদের যথাযথ খেদমত করে।
তিনি মুসলমানদের সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করতে বলেন। গ্র্যান্ড মুফতি বর্তমান মুসলমানদের কর্তব্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, মুসলিম উম্মাহর দায়িত্ব পরস্পরকে সহযোগিতা করা। সৌদি আরব মুসলমানদের সব রকমের সাহায্য করে। ইসলামের সব রকমের দুশমনকে মোকাবেলা করে।
২। জঙ্গি সংগঠনের বিভ্রান্তি বিষয়ক বয়ান
খুতবায় সৌদি গ্র্যান্ড মুফতি আবদুল আজিজ আল শাইখ ইসলামের নামে চলা জঙ্গি সংগঠনের আচরণ এবং নীতি নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ইয়েমেনে হুদি সম্প্রদায় ইসলামের দুশমন। এরা ইসলামে বিভ্রান্তি ছড়ায়। এদের কথা বার্তায় ইসলামের সাথে কোন মিল নেই। এ ধরনের সম্প্রদায় মুসলমানদের জন্য হুমকি।
তিনি বলেন, ইসলাম এসেছে সুশৃংখল লক্ষ্য নিয়ে; যার মধ্যে ‘মানুষ পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে জুলুম করবে না। ইসলাম মানুষের জান ও মালের নিরাপত্তা বিধান করে। মহানবী (সা.) হচ্ছেন মানুষের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। নামাজ আদায় করো। আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ প্রদত্ত আমানত সমুহ হেফাজত করো। বিপদগ্রস্ত মুসলমানদের সাহায্য করো। কোন বিষয়কে জটিল করে তুলো না, সহজ করো। আল্লাহ প্রদত্ত বিধান মতে জীবনকে অতিবাহিত করো। মুসলমানরা একে অপরকে ভালো কাজের পরামর্শ দিবেন’ রয়েছে বলে গ্রান্ড মুফতি তার খুতবায় উল্লেখ করেন।
৩। অর্থনীতি ও সমসাময়িক বিষয়ক বয়ান
গ্র্যান্ড মুফতি সমসাময়িক বিষয়ে বলেন, মুসলমানদের অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হতে হবে। ইসলাম মজবুদ ভিত্তির উপর দাড়িয়ে আছে। তিনি বলেন, ‘মুসলিম যুবকরা আল্লাহকে ভয় করো। সম্পদ, সম্পত্তি ও নারীদের সম্ভ্রম রক্ষা করো। হে যুবক সম্প্রদায়, দেশের উন্নতি তোমাদের ওপর নির্ভর করে। মানুষকে জানিয়ে দাও ইসলাম পবিত্র। আল্লাহর দ্বীন সকলের মাঝে ছড়িয়ে দাও।’
৪। গণমাধ্যম বিষয়ক বয়ান
তিনি মুসলমান সম্প্রদায়কে অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেন। গণমাধ্যমকে মানুষের উপকারে কাজে লাগাবার কথা বলেন। গ্র্যান্ড মুফতি মিডিয়ার মাধ্যমে মুসলমানদের ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান। মিডিয়ার মাধ্যমে সত্যকে তুলে ধরার কথা বলেন তিনি।
৫। ক্ষমা ও দোয়া বিষয়ক বয়ান
আবদুল আজিজ আল শাইখ তার খুতবায় আজকের দিনে বেশি বেশি তওবা করার আহ্বান জানান। এটাই তওবার শ্রেষ্ঠ সময় বলে উল্লেখ করেন তিনি। আল্লাহ আজকে অধিক ক্ষমা করবেন, এতো ক্ষমা অন্য সময় করেন না। আরাফাতের দিন ক্ষমার উত্তম দিন। এ দিনের দোয়া প্রত্যাখান হয় না।
তিনি এ সময় বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ বলেন তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করবো’। এ সময় লক্ষ্য লক্ষ্য মুসল্লিদের কান্নায় আরাফাতের ময়দান ভারী হয়ে ওঠে।
২৩ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ