শুক্রবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৬, ০৪:২৬:০৭

নামাজ আদায়ের পাশাপাশি যে বৈশিষ্টগুলো থাকলে বেহেশতে যাওয়া যাবে (৩য় পর্ব)

নামাজ আদায়ের পাশাপাশি যে বৈশিষ্টগুলো থাকলে বেহেশতে যাওয়া যাবে (৩য় পর্ব)

ইসলাম ডেস্ক : পাঠক! গত আসরে আমরা বলেছিলাম যে ইবাদাত হলো মানুষের আত্মিক ভারসাম্য এবং মানসিক প্রশান্তির কারণ। সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর নির্ভরতা মানুষকে জীবনের উত্থান-পতনের ক্ষেত্রে প্রতিরোধী এবং সচেতন করে তোলে। কিন্তু অনেকেই জানে না, এক আল্লাহর সাথে কেন সম্পর্ক রাখা উচিত এবং কেন তার ইবাদাত করতে হবে? অপর একটি দল বিশ্বাস করে, পরিপূর্ণ একটি সত্ত্বা হিসেবে মানুষ নিজের চিন্তা এবং কর্মতৎপরতার ভিত্তিতে নিজের সমস্যা উত্তীর্ণ হতে পারে। এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী মানুষের সুখ-সমৃদ্ধির শিল্প ও বৈজ্ঞানিক উন্নতি অগ্রগতিই যথেষ্ট। যাই হোক ইবাদাত নিয়ে যতোরকম দৃষ্টিভঙ্গিই থাকুক না কেন, তা যে মানুষের সার্বিক মঙ্গল ডেকে আনে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা আজ কথা বলার চেষ্টা করবো।
 
নিঃসন্দেহে মানুষ অত্যন্ত জটিল এবং এমন বিস্ময়কর এক সত্ত্বা যার সামনে বহু পথ খোলা রয়েছে। ইচ্ছে করলেই সে আল্লাহর পথে, পরিপূর্ণতার পথে যেতে পারে, আবার অবক্ষয়ের পথও সে নির্বাচন করতে পারে। মানুষের জন্যে এটা একটা বিপজ্জনক বিষয়। কেননা এটা মানুষকে স্বেচ্ছাচারী এবং উদাসীন করে তুলতে পারে। অন্যভাবে বলা যায় মানুষ যখন নিজেকে বিশ্বের অপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি বলে মনে করবে, তখনই উদাসীন এবং উদ্ধত হয়ে যাবে। আর এই অনুভূতিই তাকে পতনের অতলান্তে নিমজ্জিত করবে। কোরআন বলছে, মানুষ যখন নিজেকে কারো অমুখাপেক্ষী হিসেবে দেখে তখন সে নিশ্চয়ই সীমালঙ্ঘন করে। কিন্তু যখন সে নিজেকে আল্লাহর শক্তির সাথে সম্পর্কিত একটি সত্ত্বা বলে ভাবে তখন বিনয়ের সাথে তার দিকে ধাবিত হয় এবং নিজেকে স্বেচ্ছাচারিতা আর উদ্ধত আচরণ থেকে বিরত থাকে।

অন্যদিকে নিঃসন্দেহে জ্ঞান ও প্রযুক্তি মানুষের শক্তিশালী হবার একটা উপাদান। কিন্তু যে মানুষের আল্লাহর সাথে সম্পর্ক নেই,এবং, যে ধর্মীয় নীতি-নৈতিকতার ধার ধারে না সে কেবলমাত্র জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নয়ন আর অগ্রগতির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে তো পারেই না বরং অনেক ক্ষেত্রে তার ক্ষতি সাধন করে। কেননা বর্তমান বিশ্বে আমরা লক্ষ্য করছি যে, শক্তি এবং সম্পদের অধিকারীরা প্রযুক্তির আশীর্বাদকে অন্যদের ওপর আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে। আল্লাহর সাথে স্থায়ী সম্পর্ক এবং তার ইবাদাত মানবিক উন্নয়ন ও বিকাশের পথ সুগম করে। আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্যে মানুষের অন্তরের স্বাভাবিক যে চাহিদা আছে, ইবাদাত মানুষের সে চাহিদা মেটায়। আল্লাহর ইবাদাত যে করবে, আল্লাহর সৃষ্টিকুলের বিস্ময় দেখে যে স্রষ্টার প্রতি অনুগত হবে, তাতে তার নিজেরই লাভ হবে। কেননা ইবাদাত করার মাধ্যমে বিশেষ করে যারা আল্লাহর সামনে রুকু-সেজদা করে, তারা অপরাপর লোকজনের তুলনায় অনেক বেশি সম্মান ও মর্যাদা লাভ করে।

ফরাশি বিখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডক্টর আলেক্সেস কার্ল লিখেছেন, বহু তিক্ত ও কষ্টকর অভিজ্ঞতার পর জানতে পেরেছি যে, নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক অনুভূতি বা কর্মকাণ্ডের অনুপস্থিতি একটি সমাজে বা জাতির মাঝে চরম অবক্ষয় ডেকে আনে। যে সমাজ আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগির ব্যাপারে উদাসীন, সে সমাজ ফেৎনা-ফাসাদ থেকে মুক্ত নয়। ফরাশি এই চিন্তাবিদ অন্যত্র বলেছেন-মানুষের সুখ যখন নিশ্চিত হয় তখন তার অন্তর এবং চিন্তা একসাথে কাজ করে। কিন্তু ইউরোপীয় সভ্যতার ত্রুটিটা হলো এই যে, তারা তাদের মস্তিষ্ককে ব্যাপক শক্তিশালী করেছে কিন্তু অন্তরটাকে ফেলে রেখেছে। সে কারণে তাদের ঈমান এবং নৈতিকতা দুর্বল এমনকি বলা যায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে।

আল্লাহর সাথে সম্পর্কের সর্বোত্তম উপায় হলো নামাজ। নামাজ হলো আল্লাহর সাথে সম্পর্কের পবিত্র ও ঐকান্তিক উপায় এবং আল্লাহর আনুগত্যের সর্বোত্তম প্রকাশ। নামাজ ছাড়া ঈমান পরিপূর্ণ হয় না। কোরআনে কারিমে নামাজের মতো আর কোনো বিষয়ে এতো গুরুত্ব দেয়া হয় নি। সূরা নিসা'র ১০২ এবং ১০৩ নম্বর আয়াতে নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে এমনকি যুদ্ধের ময়দানেও যেন নামাজ আদায় করা হয়, কেননা ইসলামে নামাজ হলো মুমিনদের জন্যে স্থায়ীভাবে পালনীয় একটি দায়িত্ব।

কোরআনে কারিমে নামাজের জন্যে ব্যবহৃত শব্দটি হলো সালাত। আরবি ভাষায় এ শব্দটির অর্থ হলো লক্ষ্য করা বা মনোযোগী হওয়া, দোয়া করা, আনুকূল্য বা অনুগ্রহ দেখানো। এই শব্দটি কোরআনে প্রায় ১১৪ বার উল্লেখ করা হয়েছে। যেসব আয়াতে এই শব্দটি এসেছে সেসব আয়াতের বহুলাংশেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার প্রিয় রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন তিনি যেন নামাজ কায়েম করেন। সূরায়ে ত্ব-হা'র ১৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-আমি আল্লাহ! আমি ছাড়া আর কোনো মাবুদ বা উপাস্য নেই। আমার ইবাদাত করো এবং আমার স্মরণে নামাজ আদায় করো।

অবশ্য আল্লাহ হলেন সর্বশক্তিমান, পরিপূর্ণতার আধার এবং সর্বপ্রকার অভাব-অভিযোগমুক্ত। সৃষ্টির ইবাদাত-বন্দেগির মুখাপেক্ষী তিনি নন।
 
এ ব্যাপারে কোরআনেও বলা হয়েছে। কোরআন এ বিষয়টিও স্পষ্ট করেছে যে, আল্লাহর ইবাদাতের যে প্রভাব এবং উপকারিতা-সবই বান্দাদের জন্যে। ইবাদাত মানবীয় পূর্ণতায় পৌছার উপায় এবং আল্লাহর পথে চলার দিক-নির্দেশক। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের যতোরকম সমস্যাদি, তার কারণ কিন্তু আল্লাহর পথ থেকে দূরে থাকা। আল্লাহ হলেন মৌলিক সত্ত্বা বা পরমাত্মা। তাই আল্লাহকে ভুলে যাওয়া মানে হলো মূলকে ভুলে যাওয়া বা মূল থেকে দূরে সরে যাওয়া। আর মূল থেকে দূরে সরে যাওয়া মানে হলো মানুষ তার নিজস্ব পরিচয় হারিয়ে ফেলা।

সর্বোপরি কথা হলো মানুষের আত্মার পবিত্রতা প্রয়োজন, তাকে ধুয়ে মুছে পরিশোধন করা প্রয়োজন। আত্মার এই পরিশুদ্ধির জন্যে এক আল্লাহর ইবাদাত করা, তার অসীম শক্তিমত্তার প্রতি সম্মান দেখানো এবং তার সকল আদেশ-নিষেধের আনুগত্য করা ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যে ব্যক্তি নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর প্রশংসা আর বিচিত্র গুণাবলী স্মরণ করে,আল্লাহর সেইসব সুন্দর বৈশিষ্ট্যাবলির প্রভাব তার মাঝে পড়ে। আল্লাহ নিজেই তার সাহায্যে এগিয়ে আসেন এবং তাকে সরল সঠিক পথের সন্ধান দেন।

আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতের তুলনায় নামাজ আদায়কারীগণ যেটুকু আল্লাহর গুণগান বা প্রশংসা করেন তা একেবারেই নগণ্য। তবু ঐ সামাণ্য পরিমাণ প্রশংসাই আল্লাহ গ্রহণ করেন এবং তার প্রতিদান দেন। পবিত্র কোরআনে নামাজ আদায়কারীদের প্রশংসা করা হয়েছে এবং তাদেরকে মর্যাদা দেয়া হয়েছে। প্রকৃত নামাজী যারা তার ধৈর্যশীল, বিনয়ী, মোত্তাকি এবং তারা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে। কোরআনের আয়াত অনুযায়ী এ ধরনের বৈশিষ্ট্যের অধিকারী যারা,তারা বেহেশতের অধিবাসী হবে। সেখানে তাদেরকে যথার্থ মর্যাদা ও সম্মান দেয়া হবে এবং আল্লাহর বিচিত্র নিয়ামতে ভূষিত করা হবে।
২২ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে