রবিবার, ০১ মে, ২০১৬, ০৫:০৭:২১

ইসলামের দৃষ্টিতে মেডিটেশন করা যাবে কি?

ইসলামের দৃষ্টিতে মেডিটেশন করা যাবে কি?

ইসলাম ডেস্ক : মেডিটেশন বর্তমান সময়ে আমাদের কাছে পরিচিত একটি শব্দ। আমাদের আশে পাশে অনেকই রয়েছেন মেডিটেশন করার মাধ্যমে অনেক উপকার পেয়েছে। তাই তাদের সেই আলোচনা শুনে আমাদের মাঝে এই মেডিটেশন করার ইচ্ছা বা আগ্রহ বহুগুণে বেড়ে যায়। তবে এই মেডিটেশন এখন বিশ্বের অনেক বড় বড় তারকা খ্যাত লোকেরাও করে থাকেন। আসলে ইসলামের দৃষ্টিতে মেডিটেশন করার কোনো প্রকার গ্রহণ যোগ্যতা রয়েছে কিনা এই নিয়ে অনেকের মাঝে প্রশ্ন রয়েছে? জানা যাক এই বিষয়ে কিছু তথ্য :

বিজ্ঞান বলে, মেডিটেশনের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক উপকার হয়। মেডিটেশন শারীরিক রোগও প্রতিরোধ করে। টুইটারের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসি থেকে নিয়ে মার্কিন কোটিপতি নারী অপরা উইনফ্রে পর্যন্ত অনেকেই নিয়মিত ধ্যান করেন। তারা মনে করেন, নিজেদের সফলতার জন্য ধ্যান বড় একটি মাধ্যম।

ভারতের প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও মেডিটেশন করে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলেছিলেন। দিল্লীর রাজপথে লক্ষাধিক শিক্ষার্থী একযোগে মোদির সঙ্গে মেডিটেশনে অংশ নেয়। মেডিটেশন মোদির নিত্যদিনের কাজ বলেও তিনি জানান।

সফলতা, রোগ প্রতিরোধ, মানসিক ও শারীরিক উন্নতির জন্য যেমন মেডিটেশন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই বিশ্বাসীদের কাছে মেডিটেশন সৃষ্টিকর্তাকে পাওয়া ও তার থেকে কিছু আদায় করারও মাধ্যম। মুসলিম সাধক, সুফী, দরবেশ ওলী আওলিয়ারা পর্যন্ত মেডিটেশন করেছেন।

সুস্থির হয়ে গভীরভাবে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের প্রতি ধ্যান দেয়া, বিভিন্ন ধর্মের সাধকরাও এ কাজটি করে থাকেন। গভীর ধ্যানে মগ্ন থেকে সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে একাত্ম হতে চেষ্টা করেন। হৃদয়ে শান্তি আনয়ন করেন। পরে তারা ওই শান্তির বাণী পৃথিবীতে প্রচার করে বেড়ান। তবে মেডিটেশনের পদ্ধতিগত ভিন্নতা রয়েছে। কেউ শুধুমাত্র শ্বাস প্রশ্বাস নিয়ে মেডিটেশন করেন আর বিশ্বাসীরা মেডিটেশনের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করেন।

মুসলিমদের মেডিটেশন পদ্ধতি রাসুল (সা.) ১৪০০ বছর আগে হেরা গুহায় করে দেখিয়ে গেছেন। তিনি একাগ্রতার সঙ্গে আল্লাহপাকের ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। হজরত রশীদ আহমদ জৌনপুরী (রহ.) বলেছেন, নিঃশ্বাসের কাজ হচ্ছে তোমাদের জীবিত রাখা। যার জন্য নিঃশ্বাস তাকে তোমার নিঃশ্বাস সমর্পণ কর। প্রতি নিঃশ্বাসে তাকে স্মরণ কর। নিঃশ্বাস ছাড়ার সময় ইল্লাল্লাহ আর টানার সময় লা ইলাহা। এটিকে পাস আনফাস বলে। এ কাজটি শুরু করার সময় প্রথম প্রথম তাসবিহ হাতে নিয়ে ওই নিয়মে কলেমাটি পাঠ করতে হবে বেশ কিছুদিন, অতঃপর তসবিহ ছাড়া। এভাবে কিছু দিন যাওয়ার পর আপনিতেই শ্বাস-প্রশ্বাসে কালেমাটি চালু হয়ে যাবে। বাহ্যিকভাবে তখন শরীর সব রকমের দুনিয়ার কাজকর্মে লিপ্ত থাকবে আর হৃৎপি- প্রতি পলে পলে প্রভুর নাম স্মরণে ব্যস্ত থাকবে। আত্মা তখন তার খোরাক পেয়ে প্রশান্ত থাকবে।

মনের সঙ্গে শরীরের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। তাই সে তখন শারীরিক দিক দিয়ে থাকবে সুস্থ। সুস্থ দেহও তখন সুকর্ম করায় লিপ্ত থাকবে। মানব হৃদয় প্রভুর আবাসস্থল। এ কথাটি তখনই কার্যকর হবে।

হৃদযন্ত্র (কলব) সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন করার কাজ করে থাকে। হৃদয়ে ক্ষুদ্র একটু ফাঁকা অংশ রয়েছে। এ ফাঁকা অংশটি প্রভুর নাম স্মরণ দিয়ে ভরিয়ে রাখলে সারা শরীর তখন পূর্ণতায় ভরে যাবে। না হলে ওই অংশ শয়তান তার অধীনে রেখে কলুষিত করে পাপকর্ম করায় বাধ্য করবে। এভাবেই আমরা রাসুল (সা.) এর পতাকাতলে এসে তার আদর্শের ওপর আমল করে নিজেদের শারীরিক ও মানসিক উন্নতি সাধন করতে পারি।
১ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে