বৃহস্পতিবার, ০৫ মে, ২০১৬, ১১:৩৮:৩৪

ভারত মহাসাগরের বুকে জেগে উঠল মুসলমানদের অন্যরকম এক দেশ

ভারত মহাসাগরের বুকে জেগে উঠল মুসলমানদের অন্যরকম এক দেশ

ইসলাম ডেস্ক : ভারত মহাসাগরের বুকে দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ দেশ বিশ্বের সবচেয়ে নিচু দেশ। এমনই সৌন্দর্যে ভারত মহাসাগরের বুকে জেগে উঠল মুসলমানদের অন্যরকম এক দেশ।

পর্যটনের জন্য বিখ্যাত এ দেশের সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ উচ্চতা মাত্র দুই দশমিক তিন মিটার এবং গড় উচ্চতা মাত্র এক দশমিক পাঁচ মিটার। এক হাজার দুই শ’রও বেশি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপ।

১৯৬৫ সালে স্বাধীনতা লাভকারী দেশটিতে রয়েছে রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসনব্যবস্থা। দেশ পরিচিতি পর্বে এবার আলোচনা করা হলো এ দ্বীপরাষ্ট্রকে নিয়ে। 

মালদ্বীপ নামকরণ
মালদ্বীপের নামকরণ নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ লক্ষ করা যায়। কেউ কেউ দাবি করেন মালদ্বীপ অর্থ হচ্ছে ‘মেল দ্বীপ রাজ’ বা পুরুষশাসিত রাজ্য। মূলত ‘দ্বীপ’ একটি সংস্কৃত শব্দ আর ‘মাল’ শব্দটি দেশটির রাজধানীর নামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ঔপনিবেশিক আমলে ডাচ্রা তাদের নথিপত্রে এ দ্বীপপুঞ্জের নাম মালদ্বীপ বলে উল্লেখ করেন। পরে ব্রিটিশরাও একই নাম ব্যবহার করেন, যা দেশটির স্থানীয় নাম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। শ্রীলঙ্কান প্রাচীন সাহিত্য ‘মহাবংশ’-এ মালদ্বীপকে বলা হয়েছে ‘মহিলাদ্বীপ’ বা নারীদের দ্বীপ। তবে কিছু কিছু পণ্ডিত মনে করেন, মালদ্বীপ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত মালাদ্বীপ থেকে যার অর্থ ফুলের মালার দ্বীপ। তবে প্রাচীন বৈদিক সাহিত্যে এ দ্বীপকে বলা হয়েছে ‘লাক্কাদ্বীপ’ বা শত হাজার দ্বীপ। তবে মালদ্বীপে এক হাজারের বেশি দ্বীপ থাকলেও এক লাখ দ্বীপ নেই। আবার আরব পর্যটক ইবনে বতুতা এ দ্বীপকে বলেছেন ‘মহল দ্বীপ’ বা রাজপ্রাসাদের দ্বীপ। আর মালদ্বীপের রাষ্ট্রীয় প্রতীকে ইবনে বতুতার ব্যাখ্যার নিরিখে এখনো মহল বা রাজপ্রাসাদের ছবি ব্যবহৃত হয়।


ইতিহাস
ভাষা, সংস্কৃতি ইত্যাদি পর্যালোচনা করে নিশ্চিত হওয়া যায় মালদ্বীপে বসতি স্থাপনকারীরা ছিলেন দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীর লোক। সঙ্গম যুগে (খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০-৩০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে) এরা ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের কেরালা রাজ্য থেকে সেখানে যায়। প্রধানত জেলে সম্প্রদায়ের লোকরাই সেখানে প্রথম যায়। তবে প্রাচীন তামিল জনগোষ্ঠীর কিছু লোকও সেখানে যায়। মূলত এ দু’টি জনগোষ্ঠীর লোকদেরই এ দ্বীপের আদি বসতি স্থাপনকারী হিসেবে ধরা হয়। এরপর সময়ে সময়ে মালদ্বীপের দ্বীপগুলোতে বহু ভারতীয় ও শ্রীলঙ্কান মানুষ বসতি স্থাপন করে। বারো শতকে এ দ্বীপপুঞ্জে পারসিক মুসলমানদের আগমন ঘটে। তারা ‘বিদেশী সাধু’ বলে পরিচিত ছিলেন।

এই বিদেশী সাধু বা পারসিকরা মালদ্বীপবাসীকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষা দেন। আর পারসিকদের আগমনের পর থেকেই মালদ্বীপ আরব বণিকদের জন্য একটি অন্যতম বাণিজ্যিক যাত্রাবিরতিস্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। বিজয়ের পরপরই অর্থাৎ ১১৫৩ সালে পারসিক মুসলমানরা এখানে ‘স্বাধীন ইসলামি সালতানাত’ প্রতিষ্ঠা করেন। তারা সুলতান নাম ধারণ করে ১৯৬৮ সাল পযন্ত এই সালতানাতব্যবস্থা কায়েম রাখেন। মাঝে ১৮৮৭ সাল থেকে ১৯৬৫ পর্যন্ত দেশটি ব্রিটিশদের আশ্রিত রাজ্য হিসেবে ছিল। ১৯৬৫ সালের ২৬ জুলাই পর্যন্ত এ দ্বীপরাষ্ট্রটি স্বাধীন হয়ে যায়। ১৯৫৩ সালে দেশটিতে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ব্যর্থ চেষ্টা হয়েছিল। তবে ১৯৬৮ সাল থেকে দেশটিতে প্রজাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েম আছে। এটি রাষ্ট্রপতিশাসিত একটি দেশ।


স্বাধীনতা
১৯৬৫ সালের ২৬ জুলাই দেশটি ব্রিটিশ আশ্রিত রাজ্যে থেকে স্বাধীন হিসেবে আবির্ভূত হয়।-নয়া দিগন্ত
৫ মে ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে