সোমবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৬, ০৬:১৮:৩৪

তুমি এভাবে কাঁদলে আমি যেতে পারব না মা : শেখ হাসিনা

তুমি এভাবে কাঁদলে আমি যেতে পারব না মা : শেখ হাসিনা

নিউজ ডেস্ক : ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বামীর সঙ্গে জার্মানিতে থাকাবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে বিপথগামী কিছু সেনাসদস্য।  এ খবর প্রথম জানতে পারেন শেখ হাসিনা।  ছোট বোন শেখ রেহানাও এসময় তার সঙ্গে ছিলেন।

সেই মর্মান্তিক ঘটনা শোনা মাত্র শেখ হাসিনা আবেগে আপ্লুত হয়ে জার্মানিতে নিযুক্ত রাষ্টদূতকে জিজ্ঞেস করেন, ‌‘কেউ কি বেঁচে নেই’? উত্তরে মাথা নাড়েন রাষ্ট্রদূত।  তবে পুরো ঘটনাটি তারা জানতে পারেন আরো পরে।

সরাসরি দেশে আসতে না পেরে ভারতে আসার প্লেনে উঠে খবরের কাগজ পড়ে পুরো খবর জানতে পারেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার সঙ্গে কথা বলে ‘১৫ আগস্ট ১৯৭৫’ গ্রন্থে এ তথ্য লিখেছেন প্রয়াত সাংবাদিক বেবী মওদুদ, যিনি শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী।

শেখ হাসিনার সঙ্গে যৌথ সম্পাদনায় লেখা ওই গ্রন্থে সেই নির্মম ঘটনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বেবী মওদুদ।  বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ আগস্ট।  

ওই গ্রন্থের তথ্যানুযায়ী, ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর তার দুই মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে তখন সান্ত্বনা দেয়ার মতো কেউ ছিল না।  দুই বোন নিজেদের জড়িয়ে ধরে কেঁদেছেন।

বেবী মওদুদ লিখেছেন, ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সময় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পশ্চিম জার্মানিতে ছিলেন।  শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়া তখন একটি উচ্চতর বৃত্তি নিয়ে পড়তে গিয়েছিলেন পশ্চিম জার্মানিতে।  

ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুল ও ছোট বোন উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী শেখ রেহানাকে নিয়ে শেখ হাসিনা ৩০ জুলাই সেখানে যান।  কিন্তু বিমানবন্দরে যাওয়ার আগেই শেখ হাসিনা বাবার নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলেছিলেন।

তার মা ফজিলাতুননেছা মুজিব তখন তাকে বিদায় জানাতে গিয়ে খুব কেঁদেছিলেন।  মাকে ওভাবে কাঁদতে দেখে শেখ হাসিনা তখন বলেছিলেন, ‘তুমি এভাবে কাঁদলে আমি যেতে পারব না মা।’ মায়ের সেই কান্নার স্মৃতি আজো কাঁদায় দুই বোনকে।  

বেবী মওদুদ লিখেছেন, ব্রাসেলসে বেড়াতে গিয়ে হত্যাকাণ্ডের দুদিন আগে ১৩ আগস্ট বাবার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন শেখ রেহানা।  বলেছিলেন তিনি ঢাকায় ফিরতে চান।  বঙ্গবন্ধু তাকে বলেছিলেন, দেশে ফেরার বিষয়ে রাষ্ট্রদূতকে সব ব্যবস্থা নিতে বলবেন।  

এরপরই ১৫ আগস্ট, যা জাতিকে কাঁদায়।  নির্মম সেই হত্যাকাণ্ডের খবর জানান জার্মান রাষ্ট্রদূত।  তখন দূতাবাস থেকে ড. ওয়াজেদ মিয়াকে বলা হয়- অবিলম্বে বনে ফিরতে।  বনে ফিরে শেখ হাসিনাকে জানানো হয়, বাংলাদেশে সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে।

জবাবে শেখ হাসিনা শুধু বলেন, ‘কেউ কি বেঁচে নেই?’ পরে তারা ভারতে আসার সময়ে প্লেনে খবরের কাগজ পড়ে সব জানতে পারেন।  জানতে পারেন কে কীভাবে নিহত হয়েছেন।  

বাবা-মা-ভাইহারা দুই বোন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদেন।  তখন তাদের সান্ত্বনা দেয়ারও কেউ ছিল না।

ঢাকা রেডিও থেকে তখন শুধু বঙ্গবন্ধুবিরোধী কথা ও গান প্রচার করা হতো বলে লিখেছেন বেবী মওদুদ। লিখেছেন, খান আতাউর রহমান ওইসব গানের রচয়িতা ও সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন।

দেশজুড়ে সব মানুষকে শুধু কাজ করার কথা বলা হতো।  বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ বড় রাস্তার মোড়ে দীর্ঘদিন ট্যাংক ও সেনা মোতায়েন ছিল।  কারফিউ জারি হতো সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত।  

শোকাহত বাঙালির জাতীয়তাবাদ, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, মুক্তিযুদ্ধের বীরত্ব গাঁথা একে একে বিনষ্ট হতে থাকল।  স্বাধীনতা বিরোধীরা সংগঠিত হতে থাকলো।  স্বাধীনতার পতাকা উড়িয়ে রাজাকাররা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতে থাকলো।  বঙ্গবন্ধুর খুনিরাও পরবর্তীতে দেশের মাটিতে বীরদর্পে ঘুরে বেড়াতে থাকে।  

কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে দমে থাকেনি বাঙালি।  বাঙালির জোরালো দাবির প্রেক্ষিতে পরবর্তী আওয়ামী সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন করলেও এখনো কয়েকজন খুনি পলাতক রয়েছেন।  তাদের ফাঁসি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত শান্তি পাবে না বাঙালি জাতি।  আজ শোকাহত বাঙালির সেই দাবি- কবে হবে ঘাতকদের ফাঁসি?

১৫ আগস্ট,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে