বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৬, ০১:০২:৫০

‘কষ্ট বুকে চেপে রেখেছি, কাউকে প্রকাশ করিনি’

‘কষ্ট বুকে চেপে রেখেছি, কাউকে প্রকাশ করিনি’

নিউজ ডেস্ক : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আজ মঙ্গলবার আলোচনা সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ।  সেখানে বক্তব্য দেয়ার সময় স্বজনদের কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

১৫ আগস্টের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ২০ দিন পর ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা প্রথম জানতে পারেন তাদের বাবা-মা এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা বেঁচে নেই।

বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনা ও ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ঘটনার ১৫ দিন আগে শেখ হাসিনার স্বামীর কর্মস্থল জার্মানি চলে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে যান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৪ আগস্ট আমরা জার্মানি থেকে দিল্লি­ পৌঁছালাম। ইন্দিরা গান্ধী বারবার খবর পাঠাচ্ছিলেন। তার সঙ্গে দেখা হলো ৪ সেপ্টেম্বর। তার মুখ থেকে শুনলাম কেউ বেঁচে নেই।

কষ্ঠের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারপর রাজনৈতিক আশ্রয়ে থেকে গেলাম ভারতে। এরই মধ্যে লন্ডনে রেহানার (বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা) বিয়ে ঠিক হলো। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বেঁচে থাকা একমাত্র বোন, আমি তার বিয়েতে যেতে পারিনি। কারণ, সে সময় টিকিটের টাকা, সেখানে থাকা, খাওয়ার-সুযোগ আমাদের ছিল না। কোথায় থাকব? আমি একমাত্র বোন হয়েও তার বিয়েতে থাকতে পারিনি। এ সময় তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে হাত পাতার স্বভাব ছিল না। কষ্ট বুকে চেপে রেখেছি, কাউকে প্রকাশ করিনি।

স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের মাত্র ১৫ দিন আগে ৩০ জুলাই জার্মানি যাই।  ড. ওয়াজেদ ছাত্র ছিলেন। কিন্তু তিনি চাচ্ছিলেন আমি সেখানে যাই।  একপর্যায়ে আব্বা নিজেই বলেছিলেন, আচ্ছা যাও।  অনেকটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে দেশ ছাড়ি।  রেহানাকেও সঙ্গে নিয়ে যাই। আমার মা যাওয়ার সময় আকুল হয়ে কেঁদেছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানি না, যাওয়ার দিন কেন আমার মা এভাবে কেঁদেছিলেন।  মাকে আমি কখনো এভাবে কাঁদতে দেখিনি।  আমার মা খুব চাপা স্বভাবের ছিলেন, তিনি কখনো তার অভাব-অভিযোগের কথা বলতেন না।  

তিনি বলেন, যাওয়ার সময় তাকে এভাবে আকুল হয়ে কাঁদতে দেখে বললাম, মা তুমি এভাবে কাঁদলে আমি যাব না।  আমি জানি না, তিনি কিছু বুঝতে পেরেছিলেন কি-না।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৩ আগস্ট মা ও বাবার সঙ্গে আমার নেদারল্যান্ডস থেকে শেষ কথা হয়।  এ সময় নেদারল্যান্ডস কীভাবে নদী থেকে জমি উদ্ধার করছে (ল্যান্ড রিক্লেমেশন প্রজেক্ট) এ বিষয়ে আমাদের কথা হয়।

মায়ের সঙ্গে সেদিন টেলিফোনে শেষ কথার সময়ও বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব খুব কেঁদেছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সেদিনও তিনি খুব কেঁদেছিলেন।  বলেছিলেন, তুই আয়, তোর সঙ্গে অনেক কথা আছে। আর সে কথা হয়নি।

দেশে ফেরার স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ’৮১ সালে দেশে আসার পর আমাকে ৩২ নম্বরের বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি, রাস্তায় বসে মিলাদ পড়েছিলাম।  যতদিন জিয়া রাষ্ট্রপতি ছিলেন, আমাকে ওই বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। বিনিময়ে আমাকে বাড়ি-গাড়িসহ অনেক কিছু দিতে চেয়েছে, আমি নেইনি।

তিনি বলেন, জিয়া ভারত ও যুক্তরাজ্যে বারবার আমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন। আমি দেখা করিনি। কারণ একজন খুনির চেহারা আমি দেখতে চাইনি।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন,  ৩০ শে মে জিয়া মারা যাওয়ার পর ১২ই জুন দুপুরে হঠাৎ ৩২ নম্বরের বাড়ি আমাকে হস্তান্তর করা হবে। তখন আমার ছোট ফুফা বলেন আইনজীবীর মাধ্যমে এ বাড়ি নিতে হবে। তখনও জানি না কেন এত তাড়াহুড়ো। ৩২ নম্বরের বাড়িতে যখন যাই আমি ভেতরে ঢুকতে পারছিলাম না। বাড়ির ভেতরে সিঁড়ি বেয়ে যখন উঠি, অর্ধেক সিঁড়ি বেয়ে উঠতেই আমি চিৎকার করে উঠি, জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। সঙ্গে রেহানাও ছিল না। অর্ধচেতন অবস্থায় বাড়ির ভেতরে নিয়ে আমার কাছ থেকে অনেকগুলো কাগজে স্বাক্ষর নেয়। পরে বুঝলাম ঠিক যেভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যার আগে তার বিরুদ্ধে আমাদের পরিবারের প্রতিটি সদস্যের বিরুদ্ধে বদনাম, চরিত্রহনন, অপপ্রচার তার আরেকটা পর্ব শুরু হলো বাড়ি হস্তান্তর করে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে ওই বাড়িতে লুটপাট করা হয়েছে। ৬ বছর পর আমার কাছে বাড়ি হস্তান্তর করা হয়েছে। কী থাকতে পারে আর সেই বাড়িতে।

অনুষ্ঠানে ১৫ আগস্ট নিয়ে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন।  এ ছাড়া সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ‘৩২ নম্বর মেঘের ওপারে’ শীর্ষক একটি কবিতা আবৃত্তি করেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। অনুষ্ঠানের শুরুতেই শোক দিবস উপলক্ষে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
১৭ আগস্ট ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস‌‌‌‌

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে