বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৬, ১২:৫০:২৭

১২ দিনে ১১ হজ ফ্লাইট বাতিল

১২ দিনে ১১ হজ ফ্লাইট বাতিল

নিউজ ডেস্ক : যাত্রী সংকটে ১২ দিনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১১টি হজ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এতে জটিলতায় পড়েছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠানটি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হজ এজেন্টদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যাত্রীর আসন ও টিকিট নিশ্চিত করতে অনুরোধ করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।

এদিকে হজযাত্রীদের ভিসা জটিলতায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে দাবি করে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এজন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়কে দায়ী করেছে। তবে ভারপ্রাপ্ত ধর্মসচিব আবদুল জলিল এ অভিযোগ নাকচ করে জানিয়েছেন, ভিসা না হওয়ায় হজযাত্রী যেতে পারছেন না এই অভিযোগ সঠিক নয়।

তিনি বলেন, হজ অফিসের পরিচালক এজেন্সিগুলোকে নিয়ে বসেছিলেন। তারা তাদের নিজস্ব কিছু সমস্যার কথা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, তারা তাদের মক্কা-মদীনায় বাড়ি ভাড়ার শিডিউলের সঙ্গে মিল রেখে হজযাত্রীদের নিয়ে থাকেন। এজন্য তারা অপেক্ষায় আছেন। ওদিকে এ বিপর্যয়ের জন্য মন্ত্রণালয় এবং হাবের সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেছে আটাব।

গতকাল বিমানের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাতিলকৃত ফ্লাইটের কারণে বিমানের হজযাত্রী পরিবহনে ৫ হাজার আসনের ক্যাপাসিটি খোয়া গিয়েছে। গত ৪ঠা আগস্ট শুরু হওয়া হজ ফ্লাইট পরিচালন কার্যক্রমের আওতায় এ পর্যন্ত বাতিলকৃত ফ্লাইটের কারণে আর্থিক ও মারাত্মক যাত্রী সংকটের মুখোমুখি হয়েছে বিমান। ফ্লাইট বাতিল এবং যাত্রী সংকটের বিষয়টি বিমানের জন্য উদ্বেগজনক।

অপরদিকে গতকাল হাব কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শেখ আবদুল্লাহ বলেন, এবার ১ লাখ ১ হাজার ৭৫৮ জনের ভিসা হওয়ার কথা ছিল। এখন পর্যন্ত কেবল ৬৫ হাজার জনের ভিসা হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ ব্যবস্থাপনায় ‘চরম অব্যবস্থাপনার’ অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, যারা হজের ভিসা পেয়েছেন তাদের জন্য নিয়ম মেনেই বিমানের টিকিট বুকিং দিয়েছে হজ এজেন্টরা। ভিসা কম হওয়ায় বিমানের ফ্লাইটে কম লোক যাচ্ছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ই আগস্ট পর্যন্ত ২৬টি ফ্লাইটে নয় হাজার ৯২৮ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী সৌদি পৌঁছান। এদিকে হাব সংশ্লিষ্টদের মতে, হজ মওসুমের শুরুতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফ্লাইট বাতিলের কারণে শেষের দিকে হজযাত্রী পরিবহন নিয়ে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তারা বলেন, হজযাত্রীদের অনলাইন নিবন্ধন বিলম্বিত হওয়ায় কম সংখ্যক ভিসা ইস্যু এবং এজেন্সিগুলোর মক্কা-মদিনায় বাড়ি ভাড়া সম্পন্ন না হওয়ায় বিমানের হজযাত্রী সংকটের কারণ।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে পর্যাপ্ত হজযাত্রী না পাওয়ায় গত ৪ঠা আগস্ট হজ ফ্লাইট শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ বিমানের ১০টি ফ্লাইট বতিল হয়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে শেষের দিকে হজযাত্রী পরিবহনে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে। সংস্থার তরফে হজযাত্রী পরিবহনের জন্য ক্যাপাসিটি তৈরি করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী শ্লট নেয়া হয়েছে। তার পরও প্রতিদিনই যাত্রী সংকটের বিষয়টি হজ অফিস ও ধর্ম মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।

এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত শনিবার আশকোনা হজ অফিসে হজ এজেন্সিদের নিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাতে হজ অফিসের পরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল হজ এজেন্সিগুলোকে বিমানের ক্যাপাসিটি লস ও হজ ফ্লাইট বাতিলের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভিসা হয়েছে এমন হজযাত্রীদের পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে অনেক এজেন্সি মালিক তাদের হজযাত্রীদের মধ্যে নানা জটিলতার কারণে আংশিক ভিসা হওয়া এবং কিছু সংখ্যকের এখনো ভিসা না হওয়ায় একত্রে পাঠাতে পারছে না এমনটি জানিয়েছেন।

আবার অনেকে মক্কা ও মদীনায় বাড়ি ভাড়ার তারিখের সঙ্গে সমন্বয় করে পরে হজযাত্রীদের পাঠানোর অপেক্ষায় থাকার কারণে এখনই হজযাত্রী পাঠাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। বেশ কিছু এজেন্সি বিলম্বে হজযাত্রী রেজিস্ট্রেশনসহ নানা জটিলতার কারণে মক্কা-মদীনায় এখনো বাড়ি ভাড়ার কাগজপত্র তৈরি করে হাতে না পাওয়ার কারণে বারকোড নিয়ে দেশে ফিরে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন।  

এ ব্যাপারে হাবের সভাপতি মো. ইব্রাহিম বাহার বলেন, আসলে অন্যান্য বছরের তুলনায় পর্যাপ্ত ভিসা না হওয়ার কারণেই মূলত হজযাত্রী সংকটে বিমানের ক্যাপাসিটি লস এমনকি ফ্লাইটও বাতিল করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা যতটুকু জেনেছি এ পর্যন্ত মাত্র ৫৬ হাজার হজযাত্রীর ভিসা হয়েছে। অন্যান্য বছর এ সময়ে ৮০ হাজারের মতো ভিসা হয়ে যেত। এতে করে ফ্লাইটে কোনো সমস্যা হতো না।

তবে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট আটাবের সভাপতি এনএম মঞ্জুর মোর্শেদ মাহবুব এজন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েসন্স অব বাংলাদেশ হাবের সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, তাদের গাফিলতির কারণে হজযাত্রীদের নিবন্ধন নিয়ে এ বছর নানা জটিলতা তৈরি ও সময়ক্ষেপণ করা হয়েছে। এখন যে হজযাত্রীদের সিরিয়াল অনুযায়ী নিবন্ধন করা হচ্ছে সেগুলোতে আরো দুই মাস আগেও করা যেত। অযথা কেন সময়ক্ষেপণ করা হলো আমরা জানি না। তিনি বলেন, আমরা শুনেছি এই কারণে দুই শতাধিক এজেন্সি এখনো বাড়ি ভাড়ার ফাইল কমপ্লিট করতে পারেনি। ফলে তারা দেশে ফিরে ভিসার আবেদন করতে পারছে না।   

হাবের অভিযোগ খণ্ডন করে ভারপ্রাপ্ত ধর্মসচিব আবদুল জলিল বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৬৮ হাজার ভিসা ইস্যু হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি  এ পর্যন্ত হজযাত্রী গিয়েছেন ৩০ হাজারের মতো। ফলে ভিসা না হওয়ায় হজযাত্রী যেতে পারছেন না এই অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি বলেন, আমার মনে হয় হাব এবং আটাবের মধ্যে কোনো একটা গ্যাপ আছে। তাদের নিজস্ব কিছু সমস্যাও আছে। আমাদের কাছে যতগুলো ভিসার আবেদন ছিল তার বেশির ভাগ হয়ে গেছে বলে দাবি করেন তিনি।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে হাব সভাপতি ইব্রাহীম বাহার বলেন, সৌদি সরকারের বিশেষ বিবেচনায় অনুমোদিত ১১ হাজার  অপেক্ষমাণ হজযাত্রী দ্রুত প্রেরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সিটি চেক-ইন এর নামে হজ এজেন্সির অ্যাকাউন্ট হতে এজেন্সির অনুমতি ব্যতীত টাকা স্থানান্তরের পত্রের কার্যকারিতা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে স্থগিত করতে হবে। কেননা এবার সৌদিয়া এয়ারলাইন্স সিটি চেক ইন করবে না। আর বিমান গত বছর ১০ ডলারে সিটি চেক ইন করেছে। এবার অন্যায়ভাবে ৫০ ডলার নেয়ার বিষয়টি বাতিল করার জন্য তিনি দাবি জানান।

তিনি বলেন, দ্রুত মোয়াজ্জেন সমস্যার সমাধান করতে হবে, এজেন্সির হাজী স্থানান্তর করা এবং মাহরাম সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে দ্রুত রিপ্লেসমেন্টের ব্যবস্থা করলে ফ্লাইট শিডিউল বিপর্যয় ঠেকানো যাবে। তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়, হজ অফিস ও মক্কা-মদীনার সমন্বয়হীনতা দূর করার জন্যও সরকারের প্রতি দাবি জানান। এ সময় হাব মহাসচিব শেখ আব্দুল্লাহ হজ অফিসারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করে বলেন, দুর্নীতিবাজ হজ অফিসার আমাদের প্রকৃত রিপ্লেসমেন্ট করছেন না, অধ্যাপকের সার্টিফিকেটের অজুহাত দেখাচ্ছেন। অথচ অনেক ভুয়া রিপ্লেসমেন্ট করছেন টাকার বিনিময়ে। এতে করে সরকারের ভাব মর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে ।

হাবের সহসভাপতি ফরিদ আহমেদ মজুমদার, যুগ্ম মহাসচিব মোজাম্মেল হোসেন কামাল, ফজলুল ওয়াহাব মামুন, হাফেজ নুর মোহাম্মদ প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। হাবের হিসেবে চলতি বছর বাংলাদেশের হজযাত্রীর কোটা ১ লাখ ১ হাজার ৭৫৮ জন। তার মধ্যে অর্ধেক বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আর অর্ধেক সৌদি এয়ারলাইন্স পরিবহন করার কথা। গত ৪ঠ আগস্ট শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ বিমানের ১০ ফ্লাইট বাতিল হলেও সৌদি এয়ারের কোনো ফ্লাইট বাতিল হয়নি। আগামী ৫ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হজ ফ্লাইট পরিচালিত হবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১০ই সেপ্টেম্বর পবিত্র হজ পালিত হবে। -মানবজমিন
১৮ আগস্ট ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস‌‌‌‌

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে