বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৬, ০২:৫৬:৩৪

বিএনপির তৃণমূল পুনর্গঠনের দায়িত্ব পেলেন শাহজাহান

বিএনপির তৃণমূল পুনর্গঠনের দায়িত্ব পেলেন শাহজাহান

নিউজ ডেস্ক : কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণার পর ফের তৃণমূল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। আর এ কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানকে। দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই ‘হোমওয়ার্ক’ শুরু করেছেন তিনি।

এছাড়া ৪২ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে একাধিক পদ ছাড়তে কঠোর বার্তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাদের যে কোনো একটি পদ রেখে বাকি পদ ছেড়ে দিতে টেলিফোনের মাধ্যমে আহ্বান জানানো হবে। এরপরও যদি কেউ পদ না ছাড়ে, সেক্ষেত্রে চিঠি দিয়ে পদ ছাড়তে বলা হবে সংশ্লিষ্টদের। চিঠি দেয়ার পরও যারা কেন্দ্রের নির্দেশ মানবে না, তাদের একটি পদ রেখে বাকি পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে।

দলটি এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার পরপরই বুধবার নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতির পদ ছেড়ে দিয়েছেন মোহাম্মদ শাহজাহান। সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতির পদ থেকেও পদত্যাগ করেছেন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তারা দু’জনেই চেয়ারপারসন বরাবর পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

গত বছর ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাউন্সিলরের মাধ্যমে তূণমূলের সব কমিটি পুনর্গঠনের জন্য ওই বছর ৯ আগস্ট কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু বেঁধে দেয়া সময়সীমার মধ্যে পুনর্গঠন সম্ভব না হওয়ায় কয়েক দফা সময় বাড়ানো হয়। তখন কয়েকটি জেলা কমিটির পুনর্গঠন সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু সিলেট ও ঝিনাইদহ জেলার সম্মেলন ও কমিটি গঠন নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বিষয়টি দলের চেয়ারপারসনকে অবহিত করা হলে কাউন্সিলের আগে তৃণমূল পুনর্গঠন স্থগিতের নির্দেশ দেন তিনি।

জানতে চাইলে মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, এক নেতার এক পদ বিধান অনুসরণ করতে গিয়ে তিনি ইতিমধ্যে নোয়াখালী জেলার সভাপতির দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন।

তৃণমূল পুনর্গঠনের দায়িত্ব দেয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল পুনর্গঠন বন্ধ রয়েছে। চেয়ারপারসন তাকে আবারও পুনর্গঠনের বিষয়টি দেখভাল করতে বলেছেন।

সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে আলোচনায় ছিলেন মোহাম্মদ শাহজাহান। কিন্তু স্থায়ী কমিটির পদসংখ্যা না বাড়ানোয় তাকে সেখানে রাখা সম্ভব হয়নি। শাহজাহানকে নিয়ে আগে থেকেই বিকল্প চিন্তা ছিল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। এর আগে তৃণমূলের সাংগঠনিক দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে। বিগত উপজেলা, পৌর এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মূল সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি দলের সিনিয়র কয়েক নেতার সঙ্গে রুদ্ধধার বৈঠক করে তৃণমূল পুনর্গঠনের দায়িত্ব শাহজাহানকে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার নির্বাহী কমিটির প্রথম যৌথ সভায় বিষয়টি জানাতে তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশও দেন। কিন্তু সেখানে এমন ঘোষণা দেয়া হয়নি। বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হন খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার রাতেই শাহজাহানকে গুলশান কার্যালয়ে ডেকে তৃণমূল পুনর্গঠন দেখভালের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়। নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তার জন্য একটি কক্ষও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে গুলশান কার্যালয় থেকে দফতরে ফোন করে শাহজাহানের কক্ষ ও সার্বিক সহযোগিতা করতে বলা হয়।

সূত্র জানায়, চেয়ারপারসনের এমন নির্দেশ পাওয়ার পর বুধবার দুপুরেই নয়াপল্টনে যান মোহাম্মদ শাহজাহান। কার্যালয়ের তিনতলায় দফতরে কিছু সময় কাটিয়ে দোতলায় তার জন্য নির্ধারিত কক্ষে বসেন। খালেদা জিয়ার কক্ষের পাশেই এ কক্ষটি। এ সময় নেতাকর্মীরা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। কার্যালয়ে গিয়েই ‘এক নেতার এক পদ’- এ নীতি অনুসরণ করতে নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।

সূত্র জানায়, তৃণমূল পুনর্গঠনের দায়িত্ব পাওয়ার পর গতকালই হোমওয়ার্ক শুরু করেন শাহজাহান। নয়াপল্টনে তার কক্ষে বসে ঢাকা জেলা বিএনপির সব কমিটির সর্বশেষ অবস্থার খোঁজখবর নেন। ঢাকা জেলার কয়েক নেতার সঙ্গে তিনি কথাও বলেন। নয়াপল্টনে কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করে শাহজাহান যান স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের অফিসে। সেখানে দু’জন তৃণমূল পুনর্গঠনের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

এদিকে নেতৃত্ব বিকাশের যে উদ্দেশ্য নিয়ে বিএনপির গঠনতন্ত্রে ‘এক নেতার এক পদ’ বিধানটি সংযোজন করা হয়েছে তা বাস্তবায়নে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে দলটির। স্বেচ্ছায় কেউ পদ ছাড়তে চাচ্ছেন না।

মহাসচিব হিসেবে নাম ঘোষণার দু’দিন পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল অতিরিক্ত পদ ছেড়ে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেও অন্য নেতারা সেদিকে হাঁটছেন না। একাধিক পদ দখলে রাখতে নানা অজুহাত দেখাচ্ছেন তারা। তবে তাদের কোনো অজুহাতই কাজে লাগবে বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকরা। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এই ব্যাপারে বেশ কঠোর বলেও জানান তারা।

সূত্র জানায়, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের ডেকে একাধিক পদধারী নেতাদের কঠোর বার্তা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন খালেদা জিয়া। চেয়ারপারসনের এমন নির্দেশনা মঙ্গলবার যৌথসভায় দলের মহাসচিব জানিয়ে দেন। প্রাথমিক পর্যায়ে একাধিক পদধারী ৪২ নেতাকে অতিরিক্ত পদ ছাড়তে টেলিফোনে আহ্বান জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা কয়েকজনকে ফোনও করেন। টেলিফোন পাওয়ার পরও যারা পদ ছাড়বে না তাদের নামে চিঠি ইস্যু করা হবে। কোন পদ রাখতে চান তা জানিয়ে সাত দিন সময় বেঁধে দেয়া হবে। বেঁধে দেয়া সময়সীমার মধ্যে যারা পদ ছাড়বে না তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেবে। তবে কেন্দ্রের এমন কঠোর সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছেন অনেকে। তাদের যুক্তি বাস্তবতার নিরিখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকন বলেন, দলের সিদ্ধান্ত অবশ্যই তিনি মেনে নেবেন। গঠনতন্ত্রের বাইরে তিনি কিছু করবেন না। তবে গঠনতন্ত্রে চেয়ারপারসন চাইলে যে কাউকে রাখতে পারেন।

তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের পর নরসিংদী বিএনপি বড় ধাক্কা খায়। এখনও সাংগঠনিকভাবে দলকে গুছিয়ে আনা যায়নি। জেলার সাংগঠনিক কাজগুলো ঠিকঠাক করতে কিছুটা সময় লাগবে।

ময়মনসিংহ বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও জামালপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওয়ারেছ আলী মামুন বলেন, তৃণমূল পুনর্গঠনের নতুন সিদ্ধান্ত এখনও তার কাছে এসে পৌঁছেনি। বিগত সময়ে জেলার সব ক’টি উপজেলার সম্মেলন শেষ করা হয়েছে। এখন শুধু জেলা সম্মেলন বাকি আছে।

‘এক নেতার এক পদ’ সম্পর্কে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত না মানার কোনো কারণ নেই। তবে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে অনেক জেলার সাংগঠনিক অবস্থা আরও দুর্বল হতে পারে।

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, খায়রুল কবির খোকন নরসিংদী জেলার সভাপতি। তিনি যদি জেলার দায়িত্ব ছেড়ে দেন আগামী দিনে সেখানে খোকনের মতো আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়ার কোনো নেতা নেই। হাইকমান্ড এসব বিষয়গুলো ভাববে বলে আশা করেন বিএনপির এই নেতা। - যুগান্তর

১৮ আগস্ট ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস‌‌‌‌

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে