শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৬, ০৭:১৬:৪১

৪ কারণে এবার এইচএসসির ফল ভালো

৪ কারণে এবার এইচএসসির ফল ভালো

সাবি্বর নেওয়াজ : গত বছর চরম ফল বিপর্যয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন যশোর শিক্ষাবোর্ডের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অনেকে।  ইংরেজি প্রশ্নপত্র কঠিন হওয়ায় এবং বেশিরভাগ পরীক্ষার্থী প্রশ্ন ভালোভাবে বুঝতে না পারায় পাসের হার কমেছিল।

সেই যশোর বোর্ড এবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গতবার এই বোর্ডে পাসের হার ছিল ৪৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এবার পাসের হার ৮৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। যশোর বোর্ডের শিক্ষার্থীরা সব বোর্ডকে পেছনে ফেলে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সবাইকে।

এবার পাসের হার ৩৭ ভাগ বেড়েছে এ বোর্ডে। যশোর বোর্ডের এই ফল সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সমকালকে বলেন, 'গতবারের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে আমরা এই বোর্ডের বিষয়ে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। ইংরেজি ও গণিতে বিশেষ নজর দেওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া হয়েছে।'

যশোর বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মজিদ সমকালকে বলেন, গতবার ফল খারাপ হওয়ায় তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তোপের মুখে পড়েছিলেন।

এ ছাড়া অভিভাবক, শিক্ষক সবাই এবার ভালো কিছু অর্জনের চেষ্টা করেছেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলেই তারা সব বোর্ডের মধ্যে প্রথম হতে পেরেছেন। তিনি বলেন, গতবার ৩৫ হাজার পরীক্ষার্থী এক বিষয়ে ফেল করেছিল। তারা এবার পরীক্ষা দিয়ে পাস করায় পাসের হার বেড়েছে।

ফল বিশ্লেষণ এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সব বোর্ড মিলিয়ে চারটি কারণে এবার মূলত ভালো ফল অর্জিত হয়েছে।

যশোর বোর্ডের পাসের হার এ বছর সব বোর্ডের গড় পাসের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয় কারণ, সৃজনশীল প্রশ্ন এবার বেশি ছিল। পরীক্ষার্থীরা গণিতের মতো প্রতিটি প্রশ্নে শতভাগ নম্বর অর্জনের সুযোগ পেয়েছেন। গত বছর ১২টি বিষয়ে ২৩টি পত্রে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল।

এবার ১৯টি বিষয়ে ৩৬টি পত্রে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নতুন করে এ বছর ১৩টি পত্র সৃজনশীলে যুক্ত হওয়ায় এসব বিষয়ে আগের চেয়ে পরীক্ষার্থীদের নম্বর বেড়েছে।

তৃতীয়, গতবার রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে ফল খারাপ হয়েছিল। এ বছর দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকায় পরীক্ষার্থীদের মনোসংযোগে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি বলে মনে করেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মাহবুবুর রহমান।

এ কারণেও ফল ভালো হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। আর ফল ভালো হওয়ার চতুর্থ কারণ হিসেবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন অনেকে।

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল খালেক বলেন, আইসিটি বিষয়ে এবারই প্রথম সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি চালু হয়েছে। দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি শিক্ষা বোর্ডেই এ বিষয়ে পাসের হার ৯০ শতাংশের ওপরে। পাসের হার বৃদ্ধি ও জিপিএ ৫ প্রাপ্তিতে তা সহায়ক হয়েছে। শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানরা এ চারটি কারণকেই মূলত ভালো ফলের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর শাহিদা ইসলাম বলেন, দেশে পড়ূয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। সৃজনশীল প্রশ্নের কারণে দাপট কমেছে মুখস্থ বিদ্যার। কেবল শহরেই নয়, গ্রামেও পাসের হার ও জিপিএ ৫ পাওয়ার হার বেড়েছে। প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী এবার জিপিএ ৪ এর বেশি পেয়ে পাস করেছে। ইংরেজি, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নের মতো অপেক্ষাকৃত কঠিন বিষয়েও সারাদেশে ৮০ ভাগের বেশি শিক্ষার্থী পাস করেছেন। এবারের ফল বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, প্রায় প্রতিটি সূচকে শিক্ষার মান বেড়েছে।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সব বিভাগ মিলিয়ে জিপিএ ৫ প্রাপ্তদের মধ্যে ৮৪ দশমিক ৬১ ভাগই বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী। বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষার্থীরা অনেক ভালো ফল করেছেন। প্রতিযোগিতায় খানিকটা পিছিয়ে মানবিকের শিক্ষার্থীরা।

এবার আটটি শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ ৫ পেয়েছেন মোট ৪৮ হাজার ৯৫০ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৪১ হাজার ৪৬৮ জনই বিজ্ঞান ও গার্হস্থ্য শাখার পরীক্ষার্থী। পাসের হারেও বিজ্ঞান ও গার্হস্থ্য শাখার পরীক্ষার্থীরা এগিয়ে। এই শাখা থেকে এক লাখ ৯০ হাজার ৮৫১ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন এক লাখ ৫৮ হাজার ৪৭৬ জন। পাসের হার ৮৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।

রাজশাহী বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ বলেন, তিন বছরে দেশে শিক্ষা ব্যবস্থায় নীরব বিপ্লব ঘটেছে। এইচএসসির ফল এর উদাহরণ। শিক্ষা খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা সম্মিলিতভাবে কাজ করছেন। টিমওয়ার্কের কারণে গতি বেড়েছে। মনিটরিং ভালো হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, শিক্ষার্থীরা এখন অনেক বেশি সচেতন।

তবে কয়েকটি শিক্ষা বোর্ডে অবশ্য ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের ফল আশানুরূপ হয়নি। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মাহবুব হাসান বলেন, তাদের বোর্ডে আইসিটিতে ৮৯ দশমিক ১৪ ভাগ এবং ইংরেজি প্রথমপত্রে ৯০ দশমিক ৭৪ ভাগ পাস করলেও ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রে পাস করেছে ৬৩ দশমিক ২৩ ভাগ।

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পরীক্ষার্থীরা দ্বিতীয় বর্ষে ওঠার পর জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ৬ মাস ক্লাস করার সময় পেয়েছে। এর পরই শুরু হয়ে গেছে তাদের টেস্ট পরীক্ষা। স্বল্প সময়ের মধ্যে সিলেবাস শেষ না হওয়ার কারণেই তাদের অনেকের প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল।

জানা গেছে, প্রতি বছরই উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় বর্ষে গিয়ে সিলেবাস শেষ করতে পারেন না। এ কারণে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কলেজগুলোর জন্য সম্প্রতি নতুন একটি নির্দেশনা জারি করেছে।

প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের সিলেবাস একই সঙ্গে পড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অধ্যাপক মাহবুব হাসান জানান, চট্টগ্রাম বোর্ডে এ বছর সর্বনিম্ন পাসের হার সমাজবিজ্ঞানে ৫৭ দশমিক ২৭ ভাগ। এই বোর্ডের একাধিক শিক্ষক জানান, সমাজবিজ্ঞানের সৃজনশীল প্রশ্ন এবার জটিল ছিল। শিক্ষার্থীদের বুঝতেই সমস্যা হয়েছে।

তবে সার্বিক ফল ভালো হলেও মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডের পাসের হার এবার যথাক্রমে দুই ও এক শতাংশ কমেছে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ফল দু-এক শতাংশ হেরফের হতেই পারে। প্রতি বছর মেধাবী শিক্ষার্থীর সংখ্যা একই রকম থাকে না। আর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর একেএম ছায়েফউল্ল্যাহ সমকালকে বলেন, এ বছর আইসিটি বিষয়ে সৃজনশীল চালু হয়েছে। অথচ ৬০ ভাগ মাদ্রাসায় এ বিষয়ের কোনো শিক্ষকই নেই। এ বছর তাদের আইসিটি বিষয়ে পাসের হার ৩ দশমিক ৬৫ ভাগ কমেছে। -সমকাল
১৯ আগস্ট, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে