শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৬, ১০:৪২:১৫

জঙ্গি নেটওয়ার্ক ভিন্ন, তাদের আদর্শ-পরিকল্পনা অভিন্ন

জঙ্গি নেটওয়ার্ক ভিন্ন, তাদের আদর্শ-পরিকল্পনা অভিন্ন

জামাল উদ্দিন : লক্ষ্য ও আদর্শ অভিন্ন হলেও নেটওয়ার্ক ভিন্ন। মুফতি জসিম উদ্দিন রাহমানীর প্রতিষ্ঠিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করতে কাজ করছেন সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক। অন্যদিকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম আহমেদ চৌধুরীর হাত ধরে উত্থান ঘটেছে নব্য জেএমবি’র।

ব্লগার ও লেখক হত্যার পেছনে রয়েছে আনসারুল্লাহ। আর ভিন্ন ধর্মাবলম্বি ও ভিন্ন মতাদর্শী হত্যার পেছনে পুরাতন ও নব্য জেএমবিই জড়িত বলে মনে করেন গোয়েন্দারা। দুটি গ্রুপই আবার আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদা ও আইএস-এর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালিয়েছে। ভারত উপ-মহাদেশের জঙ্গি সংগঠন একিউআইএস-এর অনুসারী বলেও দাবি করে এসব সংগঠন। তবে সম্প্রতি গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনাও এই নব্য জেএমবি ঘটিয়েছে এবং কল্যাণপুরে পুলিশের অভিযানে নিহত জঙ্গিরাও নব্য জেএমবি’র সদস্য বলেই মনে করেন গোয়েন্দারা।

গোয়েন্দারা জানান, গত ৬ জুলাই ভারতে গ্রেফতার হওয়া বাংলাদেশি জঙ্গি মোহাম্মদ মসিউদ্দিন মুসা নব্য জেএমবি সম্পর্কে অনেক তথ্য দিয়েছে। আইএস’র সন্দেহভাজন জঙ্গি হিসেবে তাকে গ্রেফতার করে ভারতের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশের তিন কর্মকর্তা বৃহস্পতিবারই বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন।

সূত্র জানায়, মুসার কাছ থেকে নব্য জেএমবি সম্পর্কে অনেক তথ্য পেয়েছেন তারা। গুলশান ও শোলাকিয়াসহ সাম্প্রতিক জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জেএমবি’র নতুন গ্রুপটিই জড়িত বলে গোয়েন্দাদের জানিয়েছে মুসা। তামিম আহমেদ চৌধুরী ছাড়াও নব্য জেএমবি’র আরেক শীর্ষ নেতা আবু সুলেমান ওরফে মোহাম্মদ সুলেমান নামের এক জঙ্গিরও তথ্য দিয়েছে মুসা। ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ’র কার্যালয়ে গত মঙ্গলবার ও বুধবার মুসাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন বাংলাদেশের তিন পুলিশ কর্মকর্তা।

দেশের জঙ্গি কর্মকাণ্ড তদন্তে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ মধ্যরাতে জেএমবি’র প্রতিষ্ঠাতা আমির শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইসহ সংগঠনটির ছয় শীর্ষ নেতার ফাঁসি কার্যকরের পর মাওলানা সাইদুর রহমান ওরফে জাফর নিজেকে জেএমবি’র আমির হিসেবে ঘোষণা করেন। ২০১০ সালের ২৫ মে রাজধানীর পূর্ব দনিয়া থেকে স্ত্রী ও তিনসহযোগীসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় সাইদুর রহমান  ।

মাওলানা মাওলানা সাইদুর গ্রেফতার হওয়ার পর তার ছেলে আবু তালহা মোহাম্মদ ফাহিমের নেতৃত্বে আসে মূল ধারার জেএমবি। ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই তাকেও গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এর আগে ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ভালুকা এলাকায় প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে পুলিশকে হত্যা করে জঙ্গি সালাহ উদ্দিন ওরফে সালেহীন, জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান ও হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাকিব হাসান ওরফে রাসেলকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা। টাঙ্গাইলের সখীপুর থেকে হাফেজ মাহমুদকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও ক্রসফায়ারে মারা যায় সে।

অন্যদিকে সালাহ উদ্দিন ওরফে সালেহীন ও জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে যায় বলে ধারণা গোয়েন্দাদের। সালেহীন ও বোমা মিজানের নেতৃত্বে জেএমবি’র একটি অংশ বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গি তৎপরতা শুরু করে। মাওলানা সাইদুরের পরামর্শে সম্প্রতি জেএমবি’র মূল ধারার ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব দেওয়া হয় সালাহ উদ্দিন ওরফে সালেহীনকে।

গুলশান, শোলাকিয়া ও কল্যাণপুরের ঘটনার পর বিভিন্ন অভিযানে আটক জঙ্গিরা ছাড়াও ভারতে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গি মুসা নব্য জেএমবি সম্পর্কেও অনেক তথ্য দিয়েছে।

মুসা গোয়েন্দাদের জানিয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ এবং ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ এমন তরুণদের নানা কৌশলে জঙ্গি তৎপরতায় সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। এর মূল দায়িত্বে আছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম আহমেদ চৌধুরী। আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠিগুলোর সঙ্গেও তামিম চৌধুরীই যোগাযোগ রাখতো বলে মনে করেন গোয়েন্দারা। তার সহযোগী হিসেবে রয়েছে আবু সুলেমান, তাহজিব করিম, রেজাউর রাজ্জাক ও নুরুল ইসলাম মারজানসহ আরও কয়েকজন।

এছাড়া আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সামরিক কমান্ডার ও জঙ্গিদের প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক। জঙ্গি হামলাগুলোর সঙ্গে তাদের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে বলেও মনে করেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা। দেশে জঙ্গি তৎপরতা বাড়াতে প্রায় দুবছর আগেই একসঙ্গে কাজ করার পরিকল্পনা নেয় জঙ্গি গ্রুপগুলো। এসবের সমন্বয়ের দায়িত্বেও রয়েছে তামিম চৌধুরী ও মেজর জিয়া। ধর্মের বিধি বিধান পালন ছাড়াই শর্টকাট ওয়েতে বেহেশতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে ধর্ম বিষয়ে অজ্ঞ ও শিক্ষিত তরুণদের জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করছে তারা। যে কারণে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান ও ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম জঙ্গি নেতা তামিম চৌধুরী ও মেজর জিয়াকে ‘ড্রিম মার্চেন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

তামিম আহমেদ চৌধুরী ও মেজর জিয়াকে ধরিয়ে দিতে প্রত্যেকের জন্য ২০ লাখ টাকা করে পুরষ্কার ঘোষণা করেন আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক। গত ২ আগস্ট পুলিশ সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি। ওই সময় আইজিপি বলেন, তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করছে তামিম চৌধুরী ও মেজর জিয়া। নব্য জেএমবি’র নেতৃত্বে রয়েছে তামিম চৌধুরী। আর আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছে মেজর জিয়া। -বাংলা ট্রিবিউন
২০ আগস্ট, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে