বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০২:৪০:০৩

সেই কারণে ক্ষুব্ধ দলের ত্যাগী বিএনপির নেতাকর্মীরা

সেই কারণে ক্ষুব্ধ দলের ত্যাগী বিএনপির নেতাকর্মীরা

হাবিবুর রহমান খান : ঢাকা মহানগর বিএনপির কোনো কাজ নেই। তারা কোনো কর্মসূচি পালন করছে না। সরকারবিরোধী আন্দোলনে চরম ব্যর্থতার পর সাংগঠনিক তৎপরতাও শূন্যের কোঠায়। সর্বশেষ গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে রাজপথে নামার সুযোগ সৃষ্টি হলেও তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ মহানগর নেতারা। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতেও কোনো কর্মসূচি পালন করেনি দলের এ ইউনিট। জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুতে কর্মসূচি দিয়ে নেতাকর্মীদের সক্রিয় করার উদ্যোগ নেই তাদের।

গুলশান কিংবা নয়াপল্টন কোথাও দেখা মিলছে না মহানগর শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের। দীর্ঘদিন ধরেই মহানগর কার্যালয়টি বন্ধ। আগে বিভিন্ন কর্মসূচি উপলক্ষে গণমাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হলেও এখন তাও আসছে না। গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে কোনো বিবৃতিও পাঠায়নি সংগঠনটি। সরকারের জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ দূরে থাক, নিজ দলের কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রেও নিশ্চুপ বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিটটি। প্রতি বছর রমজানে মহানগরের উদ্যোগে ইফতার মাহফিল হলেও এবারের রমজানে তাও হয়নি। সব মিলিয়ে চরম বেহাল বিরাজ করছে মহানগর বিএনপিতে।

জানা গেছে, গত জানুয়ারিতে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে মহানগর আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস, সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এখনও তাদের প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। কে কোথায় আছেন তা জানে না কর্মীরা। ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা অন্ধকারে। আন্দোলনে চরম ব্যর্থতার পরও মহানগর পুনর্গঠনে নেই কোনো উদ্যোগ। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। অবিলম্বে ব্যর্থ ও নিষ্ক্রিয় নেতাদের সরিয়ে ত্যাগী, তরুণ ও সংগঠনে সময় দিতে পারবেন এমন নেতাদের দিয়ে কমিটি পুনর্গঠনের জোর দাবি জানান।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সাঈদ খান খোকন প্রতিবেদককে বলেন, মহানগরের কার্যক্রম শুধু ঝিমিয়ে পড়েছে। নেতাদের সঙ্গে কারও কোনো যোগাযোগ নেই। বিগত আন্দোলনে ব্যর্থতার পর পরবর্তী করণীয় নিয়ে এখনও কোনো আলোচনা হয়নি। হাইকমান্ড থেকে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনাও নেই। আন্দোলনের আগে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া যে পর্যায়ে ছিল সেখানেই আছে। মহানগরের শীর্ষ নেতা এমনকি চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে এ ব্যাপারে কোনো ইশারা-ইঙ্গিতও তারা পাচ্ছেন না।

তিনি বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্যি বিগত আন্দোলনে কেন ব্যর্থ হলাম এই জবাবদিহিটুকু কেই জানতে চাইল না। যদিও এই সংগঠন অনেকটা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকনির্ভর। আহ্বায়ক হিসেবে মির্জা আব্বাস ও সদস্য সচিব হিসেবে হাবিব-উন-নবী খান সোহেল আছেন তারা কোনো জবাবদিহি করছেন কিনা জানা নেই।

মহানগর নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, ৬ জানুয়ারি থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের পর থেকেই শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। থানা ও ওয়ার্ডের নেতারা চেষ্টা করেও অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। আন্দোলনের করণীয় নিয়ে মাঠপর্যায়ের নেতাদের কোনো নির্দেশনাই ছিল না। আন্দোলনের শুরুর দিকে নিজেদের মতো করে থানার নেতাকর্মীরা কর্মসূচি পালন করে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে তারা আত্মগোপনে চলে যেতে বাধ্য হন। নেতাকর্মীদের রাজপথে নামতে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান মহানগর নেতাদের বারবার নির্দেশ দেন। কিন্তু কোনো নির্দেশনাই কাজে আসেনি। ফলে ব্যর্থ হয় এ আন্দোলন।

সূত্র জানায়, এবারের ঢাকার আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পেছনেও খোকা-আব্বাসের কোন্দলকে দায়ী করছেন অনেকে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে আন্দোলন শুরু হয় তাতে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে আব্বাস সমর্থকরা। ওই সময় আহ্বায়ক ছিলেন সাদেক হোসেন খোকা। আব্বাসকে আহ্বায়ক করায় বেঁকে বসে খোকা সমর্থকরা। বিগত আন্দোলনে তারা নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মির্জা আব্বাস আত্মগোপনে যান।

জানা গেছে, গত এপ্রিলে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মির্জা আব্বাস দীর্ঘদিন পর প্রকাশ্যে আসেন। তিনি আদালত থেকে জামিন নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তার পক্ষে স্ত্রী আফরোজা আব্বাস ভোটারদের বাড়ি বাড়ি চষে বেড়ান। নির্বাচনের পর আবার নিশ্চুপ হয়ে পড়েন তিনি। বর্তমানে বাসায় থেকেও রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন না। সময়-সুযোগ বুঝে ব্যবসায়িক কাজে সময় দিচ্ছেন। এড়িয়ে চলছেন সংবাদকর্মীদের। সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে এখনও তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। মহানগরের অন্য নেতারা যে যার মতো ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত আছেন। সংগঠনকে নিয়ে কোনো ভাবনা-চিন্তা নেই তাদের।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল এই প্রতিবেদককে বলেন, বর্তমানে সাংগঠনিক কাজকর্ম তেমন নেই। এ ব্যাপারে দলের চেয়ারপারসনের কাছ থেকে কোনো নির্দেশনাও পায়নি। তবে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড না থাকলেও থানার নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, আন্দোলনে চূড়ান্ত সফলতা আসেনি বলেই অনেকে তাদের দিকে ব্যর্থতার আঙুল তুলছে। কিন্তু মহানগর নেতাকর্মীরা যে আন্দোলন সংগ্রামে ছিল না এটা বলা যাবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেভাবে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়েছে, ধরে নিয়ে নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে তাতে প্রকাশ্যে রাজপথে নামা কঠিনই ছিল। তারপরও তারা চেষ্টা করেছেন।

খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু প্রতিবেদককে বলেন, একমাত্র ঢাকা মহানগর বিএনপির ব্যর্থতার কারণে পুরো আন্দোলন ব্যর্থতায় রূপ নেয়। ঢাকা মহানগর চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেয়ার পরও কেন তাদের এখনও পদে রাখা হয়েছে তা বোধগম্য নয়। দ্রুত ব্যর্থদের সরিয়ে ত্যাগী বিশেষ করে যারা দলের জন্য সময় দিতে পারবেন তাদের নেতৃত্বে আনা উচিত।

জানা গেছে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারবিরোধী আন্দোলনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেয় ঢাকা মহানগর বিএনপি। মহানগর কমিটি ঢেলে সাজানোর জোরালো দাবি ওঠে। এরই অংশ হিসেবে গত বছরের ১৮ জুলাই খোকা-সালাম কমিটিকে বাদ দিয়ে মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে সদস্য সচিব করে ৫২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। আব্বাস ও সোহেলের নেতৃত্বে মহানগর বিএনপি ঘুরে দাঁড়াবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।-যুগান্তর
১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে