নিউজ ডেস্ক : মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সফরে জঙ্গি দমনে প্যাকেজ সহযোগিতা এবং বাণিজ্য সুবিধাকে অগ্রাধিকার দিয়ে আলোচনা করবে বাংলাদেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্ডাতেও জঙ্গি দমন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তার মতো ইস্যু বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দেশটি এসব ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করতে চায়।
এদিকে জন কেরির ঢাকা সফর উপলক্ষে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী চলাচল করবেন- এমন পথগুলোতে সাধারণ যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে ‘স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স’ (এসএসএফ)।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি আগামীকাল সোমবার বিশেষ বিমানে প্রায় ১০ ঘণ্টার এক সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় আসছেন। তিনি কেনিয়া, নাইজেরিয়া, সৌদি আরব, জেনেভা হয়ে ঢাকায় আসছেন। ঢাকা থেকে যাবেন দিল্লি। ঢাকায় অবস্থানকালে বেশিরভাগ সময়ই তিনি বৈঠকে অতিবাহিত করবেন। সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে কোনো একসময় ঢাকায় পৌঁছে তিনি প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন তার কার্যালয়ে। এরপর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানে কেরির জন্য মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেছেন মাহমুদ আলী।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকা ত্যাগের পূর্বে অবশিষ্ট সময়ে তার কর্মসূচি নির্ধারণ করছে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস। তবে এ সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার বৈঠক হতে পারে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, জন কেরির সঙ্গে বিএনপির নেত্রীর কর্মসূচি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে এ ব্যাপারে কাজ চলছে। এ ছাড়া আরও বেশ কিছু কর্মসূচি ঠিক করা হচ্ছে। তবে মার্কিন দূতাবাস এসব কর্মসূচি প্রকাশ করছে না। সফরের অনেক বিষয় ও কর্মসূচি গোপন রাখা হচ্ছে।
জঙ্গি দমনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার জন্য একটি প্যাকেজ প্রস্তাব দিতে পারে বাংলাদেশ। এ প্যাকেজের আওতায় আইনশৃংখলা বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ, জিসার্ফসহ বিভিন্ন তহবিল থেকে সহায়তা, সাইবার ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জঙ্গিবাদ প্রসার ঠেকাতে কারিগরি সহায়তা, ডিএনএ পরীক্ষার সরঞ্জামসহ বিভিন্ন চাহিদা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। স্বল্পোন্নত অপরাপর দেশের মতো বাংলাদেশও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাণিজ্য সুবিধা চাইবে।
এ ছাড়া সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত চাইবে বাংলাদেশ। যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত আশরাফুজ্জামান খানকেও ফেরত চাইবে বাংলাদেশ।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্ডার তালিকাও দীর্ঘ। কেরির সফরের আগে শনিবার ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ওপর একটি ফ্যাক্ট শিট প্রকাশ করেছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে- বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক, উদার এবং সহনশীল দেশ হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের সেতুবন্ধ হিসেবে এবং বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির চালিকা শক্তি হিসেবে তুলে ধরতে পারে।
স্পন্দনশীল ও নিরাপদ গণতন্ত্রের জন্য সক্রিয় রাজনৈতিক দল এবং গণমাধ্যমের ও বাকস্বাধীনতা জরুরি। এই ফ্যাক্ট শিটে বাংলাদেশের বছরে ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধি, পোশাক শিল্পে বছরে ২৫ বিলিয়ন ডলার রফতানি, শান্তিরক্ষায় ১০ দেশে সাত হাজার সৈন্য নিযুক্তি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলাসহ বিভিন্ন সামাজিক খাতে উন্নতির জন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়।
এদিকে জন কেরির সফরের প্রস্তুতির লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি অগ্রবর্তী প্রতিনিধিদল ঢাকায় পৌঁছেছে। দলটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করে সফরের প্রস্তুতি সম্পাদন করছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির বাংলাদেশ সফরকে সৌজন্যমূলক সফর হিসেবে অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকে ঘিরে এক সংবাদ সম্মেলনে জন কেরির সফর সম্পর্কে প্রশ্ন করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা একটা সৌজন্যমূলক সফর। এ সফরে যা কিছু হবে তা তিনি আসার পর সবাইকে জানানো হবে।’ অপর একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, কেরি ও ইংল্যান্ডের ক্রিকেট দলের সফরের পূর্বে তামিমসহ তিন জঙ্গি নিহত হয়েছে। আসন্ন সফরে এর কোনো প্রভাব পড়বে কিনা? কেরি এর আগে একজন যুদ্ধাপরাধীর বিচার কার্যকর না করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
এবার তিনি আরেকজন যুদ্ধাপরাধীর বিচার কার্যকর না করার কোনো অনুরোধ রাখলে প্রধানমন্ত্রী কী করবেন? জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিদেশী মেহমানরা আসছেন। এটা একটা আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করবে।’ তবে কারও চাপ তাকে যুদ্ধাপরাধের বিচার থেকে সরাতে পারবে না এমন ইঙ্গিত করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রিত্ব আমার কাছে কিছু না। এ কথাটা শুধু মনে রাখবেন যে, আমি জাতির জনকের কন্যা।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে এক বৈঠকে জন কেরিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তখনই তিনি বাংলাদেশ সফর করবেন বলে জানিয়েছিলেন। এরপর তার কাছে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়। কিন্তু ফ্রান্সে সাইকেল চালাতে গিয়ে কেরি আহত হলে তখন আর তিনি ঢাকায় আসতে পারেননি। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই যেসব দেশ সফর করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন; ওইসব দেশ সফরে বেরিয়েছেন।
গুলশানে গত পহেলা জুলাই জঙ্গি হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করেছিলেন জন কেরি। তখন টেলিফোনে জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্র“তি ব্যক্ত করেছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনের ক্ষেত্রে টেলিফোনে যে বার্তা দিয়েছিলেন; ওই বার্তাই এবার সরাসরি শেখ হাসিনাকে দেবেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি।
কূটনীতিকরা বলছেন, ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে কূটনীতিক ও আমলা পর্যায়ে বেশ ভালো যোগাযোগ আছে। কিন্তু নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসকে ঘিরে রাজনৈতিক পর্যায়ে একটা অবিশ্বাসের ভাব আছে এই দুই দেশের মধ্যে। এ কারণে ২০১২ সালে হিলারি ক্লিনটনের বাংলাদেশ সফরের পর আর কোনো মার্কিন রাজনীতিবিদ বাংলাদেশ সফর করেননি। এখন জন কেরির মতো শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতার বাংলাদেশ সফরের ফলে রাজনৈতিক পর্যায়ে একটা আস্থা ফিরে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। - যুগান্তর
২৮ আগস্ট ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস