রবিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৬, ১১:২৪:০৮

হে আল্লাহ, ‘আমার মেয়েটারে আমি কই পামু’

হে আল্লাহ, ‘আমার মেয়েটারে আমি কই পামু’

নিউজ ডেস্ক : ‘ওরে বুকে নিয়া আমি হাসপাতাল থেকে বাইর হইছিলাম।  সেই রিশার আজ কী চেহারা দেখাইলো খোদা’! কাঁদতে কাঁদতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের লাশঘর থেকে বের হচ্ছিলেন ইতি ও রিতা।  ইতি রিশার বড় মামি ও রিতা মেঝো মামি।

ইতি বলেন, আমার বিয়ের দুই বছর পর রিশার জন্ম। ওরে আমি কোলের ভেতর নিয়া হাসপাতাল থেকে বের হইছিলাম।  সেই রিশার আজ কী চেহারা দেখলাম।

২৪ আগস্ট বুধবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনে ওভারব্রিজের ওপর সুরাইয়া আক্তার রিশাকে (১৫) ছুরিকাঘাত করে এক বখাটে।  গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।  সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৮ আগস্ট রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় মারা যায় রিশা।

মেঝো মামি রিতা বলেন, রিশা খুবই মিশুক ছিল। ছোটকাল থেকে বড় করলাম। এখন এ অবস্থা! পরিবারের সবার বড়, অনেক আদরের মেয়ে ছিল রিশা! মেয়ের লাশ কেমনে দেখামু তারে।

রিশার বাবা রমজান হোসেন বিলাপ করে বলছিলেন, ঘটনার আগের দিনও স্কুল ভ্যানের পাশে ঘোরাঘুরি করছিল ওই গুণ্ডাটা।  রিশা ওর মাকে সেই কথা জানিয়েছিল।  ওর মা তখন বলেছে, তোর বাবাকে বলি।  কিন্তু ও বলেছে, বাবা শুনলে টেনশন করবে। সে কারণে আমাকে আর জানায়নি।

‘আমি যদি জানতাম, তাহলে আজ আমার মেয়েটারে হারাইতে হতো না।  আমি থাকলে এ রকমটা হইতো না’ কাঁদতে কাঁদতে বলেন রিশার বাবা রমজান হোসেন।  তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই ওরে নিয়ে আসতাম, আর নিয়ে যেতাম।  ওর মা অসুস্থ।  আমিও ঠিকমতো সময় দিতে পারতাম না।  সে কারণে ভ্যান দেয়া হয় মেয়েটারে।

‘ভ্যানে না দিলে আমার মাইয়াটার এ অবস্থা হতো না। পরীক্ষা চলার কারণে ভ্যান দেয়ার পরও এ মাসে কেবল চারদিন ক্লাস করছিল রিশা।  মেয়েটারে কেন আমি দিয়ে আসলাম না’!

রমজান হোসেন বলেন, পাঁচ থেকে সাত মাস আগে টেইলার্সের ছেলেটা রিশাকে ফোনে বিরক্ত করতো। সে কারণে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেই।  এত মাস পরও যে ওই ছেলে এমন করবে তা তো বুঝতে পারিনি।  আমি খেতে বসলেই আমার মেয়ে আমাকে ঠাণ্ডা পানি মিলিয়ে দিতো।

তিনি হোসেন বলেন, হে আল্লাহ, আমার মেয়েটারে নিয়া গেলা। আমার বাচ্চাটারে আমি কই পামু! দুই মেয়ে এক ছেলের মধ্যে রিশাই বড়।

রমজান হোসেন বলেন, স্কুলের সহপাঠীরাই আমাকে ফোন দিয়ে জানায়, রিশা আহত।  তাড়াতাড়ি ঢাকা মেডিক্যালের জরুরি বিভাগে আসেন।  তারপর আমরা এসে দেখি, মেয়ের শুধু চিৎকার করছে।  ওর মাকে শুধু বলছে, টেইলার্সের ওই লোকটা আমাকে মারছে মা।  পুলিশের কাছেও ও জবানবন্দি দিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আইসিইউতে আমার সামনে চোখ খুলেছিল। ওর কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে দেখে আমি কিছু জিজ্ঞাসা করিনি।  শুধু বলেছি, বাবা তুমি ভয় পাইও না।  আমরা তোমার সামনে আছি।  তখন হাত দুটো বাড়ায়ে দিল।  আমি দুই হাত দিয়ে ওর দুইটা হাত ধরলাম।  হাত দুইটা ধরলাম কিন্তু মেয়েটারে বাঁচাইতে পারলাম না।  

যার ছুরিকাঘাতে খুন হয় উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশা (১৫) সেই ঘাতক কাটিং মাস্টার ওবায়দুল খানকে খুঁজছে পুলিশ।

রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে অবস্থিত ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং মলের বৈশাখী টেইলার্সের কাটিং মাস্টার ওবায়দুলই রিশার ঘাতক বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।
 
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার এসআই মোশাররফ হোসেন জানান, বুধবার উইলস লিটলফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে ওভারব্রিজে রিশাকে ছুরিকাঘাতের পর থেকেই পলাতক রয়েছেন কাটিং মাস্টার ওবায়দুল।
 
‌ঘটনার পর তাকে গ্রেফতার করতে বৈশাখী টেইলার্সে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। গত কয়েদিন ধরে সে তার কর্মস্থলে অনুপস্থিত।  তাকে গ্রেফতার করতে সম্ভাব্য সব স্থানে অভিযান চলছে বলে জানান তিনি।
 
এসআই মোশাররফ হোসেন জানান, রিশা মৃত্যুর পর ওবায়দুলকে গ্রেফতার করতে অভিযান জোরদার করা হয়েছে।  এ নিয়ে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। আশা করা হচ্ছে- শিগগিরই তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।
 
 উইলস লিটল ফ্লাওয়ারের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাফি জানায়, সে ফুটওভার ব্রিজের নিচ দিয়ে কলেজে যাচ্ছিল। এ সময় চিৎকার শুনে ফুটওভার ব্রিজের ওপরে গিয়ে রিশাকে আহতাবস্থায় দেখতে পাই।  এ সময় একজনকে দৌড়ে পালাতে দেখেছি।  
 
 রিশার স্কুলের শিক্ষক শরীফুল ইসলাম জানান, রিশা স্কুলে সবসময় হাসিখুশি থাকতো।  মেধাবী রিশা খুবই চঞ্চল প্রকৃতির ছিল।

কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে ফুট ওভারব্রিজের ওপর ২৪ আগস্ট বুধবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশাকে (১৫) ছুরিকাঘাত করা হয়।   

গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে রিশাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।  তার পেটের বাম পাশে ও বামহাতে ছুরিকাঘাত করা হয়।  রিশার বাসা রাজধানীর বংশালের ১০৪ সিদ্দিক বাজারে।
 
ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার স্কুলছাত্রীর মা তানিয়া হোসেন বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ধারায় এবং পেনাল কোডে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করে ওবায়দুল খান (২৯) নামে এক ব্যক্তিকে মামলায় আসামি করা হয়। আসামি ওবায়দুল ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং কমপ্লেক্সের বৈশাখী টেইলার্সের কাটিং মাস্টার।
২৮ আগস্ট, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে