নিউজ ডেস্ক : একটি সফল অভিযান, গুলশান ও শোলাকিয়া মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরীসহ তিন জঙ্গি নিহত। ২৭ আগষ্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় তামিম অধ্যায়ের শেষ করে বাংলাদেশ পুলিশ। সফল অভিযানের পরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ টেলিভিশন, সংবাদপত্রসহ বিভিন্ন মাধ্যমে পুলিশের সফলতার খবর প্রকাশ হতে থাকে।
অভিযানে অংশ নেওয়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. ছানোয়ার হোসেন এমনিই অসংখ্য অভিনন্দন বার্তা পেয়েছেন নিজের ফেসবুকে। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে জঙ্গি আস্তানায় সফল অভিযানের পর ফেসবুকে অসংখ্য অভিনন্দনের বার্তা পাচ্ছে পুলিশ। পুলিশের এই সফলতায় দেশের নাগরিক খুশি হওয়ার পাশাপাশি গর্বিত হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
রবিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে নিজের ফেসবুকে দেওয়া একটি স্ট্যাটাসে এসব কথা লেখেন তিনি। নিন্মে ছানোয়ার হোসেনের দেওয়া স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
“খুশি হতে দেখেছি কিন্তু গর্বিত হতে দেখিনি
গতকালের অভিযান শেষে প্রিয় দেশবাসী ভাই ও বোনেরা আমাদের (পুলিশের) ইনবক্স, টাইমলাইন এবং পোষ্টের নীচে কমেন্ট করে যেভাবে সম্মান এবং অভিনন্দন জানিয়েছেন তা অভাবনীয়।
মনে হচ্ছিল '৭১ -এর বিজয় নিয়ে ফিরেছি...
ক্লান্তি নিয়ে বিকেলে বাড়ি ফিরে দিলাম দুই ঘন্টা ঘুম। সন্ধ্যায় জেগে উঠে দেখি ফেইসবুক ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে। পরিচিত-অরিচিত অসংখ্য মানুষ নানা শব্দ সম্ভারে ছেয়ে দিয়েছে ইনবক্স। টিভি ছেড়ে দেখি সেখানেও শুধু পুলিশের জয়গাঁথা।
সামান্য সরকারী চাকুরে হয়ে আমাদের কাছে এতটা সম্মান অনেক অনেক বড় কিছু। অভিভূত হয়ে যাই আমরা। খুশিতে আত্মহারা হয়ে লেগে যাই পরের এসাইনমেন্টের কাজে।... আগেরবারের প্রশংসা পরবর্তী কোন ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানে গিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে তাড়িত করে।
আর এভাবেই -
- ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫, মিরপুরে জেএমবি ফ্ল্যাটে ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান,
- ২৬ জুলাই ২০১৬, মিরপুরের কল্যাণপুরে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান
- ২৭ আগষ্ট ২০১৬, পাইকপাড়া, নারায়ণগঞ্জে ডেডলি অভিযান
.......... ইত্যাদি অভিযানে আমরা ঝাঁপিয়ে পরি।
পুলিশের হয়তো অনেক বদনাম রয়েছে, অনেক সদস্যের কিছু আচরণগত ত্রুটিও থাকতে পারে। এজন্য অবশ্য আমাদের কম কথা শুনতে হয় না। আবার ছোট-বড় অনেক সাফল্যও রয়েছে, যা মানুষকে অনেক খুশি করে এবং পুলিশকে তারা অভিনন্দনও জানায়।
কিন্তু এদেশের পুলিশকে নিয়ে কখনও কাউকে গর্বিত হতে দেখিনি। হয়তো এবারই প্রথম গর্বিত হতে দেখলাম,
" বাংলাদেশ পুলিশ আমাদের গর্ব।"
"বাংলাদেশ পুলিশ আমাদের অহংকার।"
"যাদের আমরা পুষি, তাদের উপর আমরা অনেক খুশি।"
..... এরকম শতসহস্র বাক্যে ছেয়ে গেছে কোটি মানুষের টাইমলাইন এবং অন্তর। তারা জীবন এবং জীবিকার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চায়। যদি পায় তবে তারা হয় অনন্দে আত্মহারা। এখানে মতাদর্শ, গোষ্ঠী চিন্তা, সুশীল চিন্তাধারা... সবই গৌণ, শুধু প্রশান্তি নিয়ে একসাথে বেঁচে থাকাটাই মুখ্য।
..... তামিমদের ছক্কা আর মুস্তাফিজের উইকেট যাদের আনন্দ দেয়, গতকালের অভিযানের ৩টি উইকেটও তাদেরকে আনন্দে উদ্বেলিত করেছে বলে আমাদের বিশ্বাস।
এ নিয়ে একটা কবিতাও লিখে ফেললাম:
"যাদের টাকায় পাচ্ছি বেতন, যাদের হয়ে খাটছি,
তাদের সাথে বাঁচব বলেই নিজের কথাও ভাবছি।
মরছে শত্রু যুদ্ধ ক্ষেত্রে, মরছে কারও বিবেক,
আমরা মরিনি, শত্রু মরেছে - এতেও দেখছি আবেগ।
যাদের জন্য নিচ্ছি ঝুঁকি, তাদের জন্যই দেশ
তাদের জন্যই বাঁচতে হবে,
যুদ্ধে নেই কোন ক্লেশ।"
সকাল থেকে শুরু হয়েছে পরবর্তী অভিযানের কাজ... তাই আর কথা নয়।
শর্ত সাপেক্ষে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি:
আমাদেরকে মানসিকভাবে ভাল রাখুন.... আপনার জেগে থাকা এবং ঘুমের শান্তি আমরাই এনে দিব... ইনশাল্লাহ।
[যারা এই সাফল্যের দাবিদার:
১. এল আই সি, পুলিশ হেডকোয়ার্টারস, ঢাকা
২. কাউন্টার টেরোরিজম, ডিএমপি, ঢাকা
৩. নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ, নারায়ণগঞ্জ ]”
২৯ আগস্ট, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি