সিরাজুল ইসলাম : গত কয়েক বছরে রাজধানীর বাড্ডা-ভাটারা, মিরপুর, দক্ষিণখান ও রাজধানীর অদূরে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জে জঙ্গিবিরোধী অনেকগুলো সফল অভিযান করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
জনবসতিপূর্ণ এসব অঞ্চলে ধরা হয়েছে শীর্ষ জঙ্গিদের। পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাও ঘটেছে, যাতে নিহত হয়েছে নব্য জেএমবির সদস্যরা। কিন্তু কেন এসব এলাকাগুলোকেই নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নিচ্ছে জঙ্গিরা?
পুলিশের মতে, তিন কারণে রাজধানীর বাড্ডা-ভাটারা, মিরপুর, দক্ষিণখান এবং নারায়ণগঞ্জে জঙ্গিরা আস্তানা গাড়ে। ঘনবসতিপূর্ণ এসব এলাকায় বাড়ীভাড়া কম, ঝুটঝামেলা ছাড়াই ঠাঁই পাওয়া এবং সহজেই গ্রেফতার এড়ানোর সুবিধা থাকায় এসব এলাকায় বার বার জঙ্গি আস্তানা মিলছে।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ছানোয়ার হোসেন সোমবার জানান, বাড়ীওয়ালাদের দুর্বলতার সুযোগে ওইসব এলাকায় আস্তানা গাড়ে জঙ্গিরা।
তিনি জানান, ভাড়াটিয়ার তথ্য সংশ্লিষ্ট থানায় দেয়ার কথা থাকলেও কয়েকটি এলাকার বাড়ীওয়ালারা এতদিন বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি। তারা বাড়ীভাড়া দেয়ার আগে ভাড়াটিয়াদের বিষয়ে তেমন কোনো খোঁজ-খবর নিতেন না।
এ বিষয়টি এখন পুলিশ সিরিয়াসলি দেখছে। তাই এখন ঢাকায় জঙ্গিদের আস্তানা কমে গেছে। তারা এখন ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোকে বেছে নিচ্ছে।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, জঙ্গিরা সব সময় আড়ালে থেকে তাদের শক্তি বাড়াতে করতে চায়। তারা ধরা পড়তে চায় না। যেসব এলাকাকে তারা নিরাপদ মনে করে সাধারণত তারা ওইসব এলাকাতেই আস্তানা তৈরি করে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজধানীতে গত দেড়-দুই বছরের যে কয়টি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়া গেছে সব ক'টিই বাড্ডা, মিরপুর এবং দক্ষিণখানে। তবে মোহাম্মদপুরেও জঙ্গিদের একটি বোমা তৈরির কারখানা পাওয়া গিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ সাধারণত কূটনৈতিক এলাকা, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং ভিআইপি এলাকাগুলোর নিরাপত্তাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। যেসব এলাকায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তৎপরতা তুলনামূলক কম জঙ্গিরা সাধারণত ওইসব এলাকাকেই বেছে নেয়।
মাসুদুর রহমান জানান, গুলশানের হলি আর্টিজানে যেসব জঙ্গিরা হামলা করেছিল তাদের সর্বশেষ অস্তানাও ছিল ভাটারা থানাধীন একটি এলাকা। তার আগে তুলনামূলক রিমোট এরিয়ার কয়েকটি বাসায় তাদের অবস্থান ছিল। পুলিশের তৎপরতার কারণে তারা কয়েকবার বাসা বদলেছিল।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় বাড়ীভাড়া নিতে কড়াকড়ি আরোপ করায় তারা ঢাকার আশ-পাশের এলাকায় আশ্রয় নিচ্ছে বলেও জানান মাসুদুর রহমান।
শনিবার ভোরে নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার কবরস্থান এলাকার নূরুউদ্দিন দেওয়ানের তিনতলা বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা। ওই অভিযানে গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরীসহ তিন জঙ্গি নিহত হয়।
‘অপারেশন স্ট্রং হিট টোয়েন্টি সেভেন’ নামে এই অভিযান পরিচালনা করে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিটি), স্পেশাল উইপন্স অ্যান্ড ট্যাক্টিক (সোয়াট) ও নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ।
গত ২৬ জুলাই মিরপুরের কল্যাণপুরে এক জঙ্গি আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নয়জন নিহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে একজনকে আটক করা হয়।
‘অপারেশন স্টর্ম টোয়েন্টি সিক্স’ নামে ওই অভিযানের পর পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক জানিয়েছিলেন, হতাহতরা সবাই জেএমবির সদস্য। কল্যাণপুরের ওই ভবন থেকে জিহাদি বই, বোমা ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় একটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় ডিবি। এ আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও তাজা বোমা উদ্ধার করা হয়। দক্ষিণখান থানার দলিয়ার ২৪২ নম্বর বাড়ীতে চালানো এ অভিযানে বিপুল পরিমাণ বোমা ও বিস্ফোরক দ্রব্য পাওয়া যায়।
এর কয়েক দিন আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি উত্তর বাড্ডার সাতারকুলের পূর্ব পাড়ায় বায়তুল মামুর জামে মসজিদ এলাকার ৫৭৭ নম্বর বাসার নিচতলায় প্রায় ৭ ঘণ্টা অভিযান চলে। এ সময় ধারালো অস্ত্র, বোমা, বোমা তৈরির সরঞ্জাম-বিস্ফোরক এবং বিভিন্ন ধরনের আলামতসহ দু’জনকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ (ডিবি)।
পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই বাড়ী থেকে আরও ৭ নারীসহ ৯ জনকে বাড্ডা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযানে ডিবির পরিদর্শক বাহাউদ্দিনকে জখম করে ‘জঙ্গি’ সদস্যরা। এ সময় ডিবি পুলিশ ও জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর শাহ আলী থানার মিরপুর-১ এলাকার একটি ভবনে জেএমবির আস্তানার সন্ধান পায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। শ্বাসরুদ্ধকর ১৪ ঘণ্টার অভিযানে ওই ভবন থেকে জেএমবির তিন জঙ্গি ও সন্দেহজনক সাতজনকে আটক করা হয়। এ সময় ১৮টি গ্রেনেড-বোমা ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়।
আটকের আগে ছয়তলা ওই ভবনটি বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয় জঙ্গিরা। আস্তানাটি জেএমবির গ্রেনেড-বোমা তৈরির কারখানা ছিল বলে তখন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এর আগে বাড্ডা থেকে ধরা হয়েছিল হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানকে। - যুগান্তর
৩০ আগস্ট ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস