মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৬, ০২:৪৪:২০

জনপ্রতিনিধিদের ভোটে জেলা পরিষদ নির্বাচন

জনপ্রতিনিধিদের ভোটে জেলা পরিষদ নির্বাচন

নিউজ ডেস্ক : ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন ২০১৬’-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সংশোধিত আইন অনুযায়ী পরিষদ গঠিত হবে ২১ সদস্যের প্রতিনিধি নিয়ে। আর তাদের নির্বাচন করবে একটি ইলেক্টোরাল কলেজ। জেলার বিভিন্ন স্থানীয় সরকার কাঠামোর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ইলেক্টোরাল কলেজ গঠিত হবে।

সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে সংশোধন আইনের খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠেকর পর দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সম্মেলন কক্ষে বৈঠকের বিষয়বস্তু সাংবাদিকেদের সামনে তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম শফিউল আলম।
তিনি বলেন, আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অধ্যাদেশ জারি করে আইন কার্যকর করা হবে।

একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সাধারণ সদস্য এবং ৫ জন সংরক্ষিত নারী সদস্য নিয়ে পরিষদ গঠিত হবে। তারা ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে নির্বাচিত হবেন। চার স্তরের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের (সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ) নিয়ে ইলেক্টোরাল কলেজ গঠিত হবে। যেসব জেলায় সিটি কর্পোরেশন নেই, সেসব জেলায় তিন স্তরের জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ইলেক্টোরাল কলেজ গঠিত হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সংশোধিত আইনে নির্বাচনে আচরণবিধি লংঘনের জন্য নতুন করে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। আচরণবিধি ভঙ্গের জন্য ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ৬ মাসের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড রাখা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে এই বিধান ছিল না। তবে নির্বাচনে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণে ৭ বছরের জেল ও জরিমানার ব্যবস্থা ছিল- যা সংশোধন আইনেও রাখা হয়েছে।

তিনি জানান, সংশোধিত আইনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে পরিষদের সদস্য বা সরকার মনোনীত যে কেউ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। ফৌজদারি আইনের মামলায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বা অন্য সদস্য গ্রেফতার হলে অথবা আদালতে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল হলে তাদের বরখাস্ত করা যাবে।

তিনি বলেন, আইন সংশোধন হলেও নির্বাহী ক্ষমতা চেয়ারম্যানের হাতেই থাকবে। তবে পরিষদ চাইলে নির্বাহী ক্ষমতা কোনো অস্থায়ী প্যানেল চেয়ারম্যান বা কোনো সদস্য অথবা সরকার অনুমোদিত কোনো উপযুক্ত কর্মকর্তাকে দিতে পারবে। চেয়ারম্যান না থাকলে এর সদস্য বা সরকারের কোনো মনোনীত কর্মকর্তা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। জেলা পরিষদ প্রতিনিধিদের শপথের সময় পরিচিতির জন্য পিতা বা স্বামীর নামের সঙ্গে মায়ের নাম যোগ করার বিধান রাখা হয়েছে সংশোধিত আইনে।

জেলা পরিষদ নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এটা সরকারের বিষয়। সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে তারিখ নির্ধারণ করা হবে। ১৫ জন সদস্য কিভাবে দায়িত্ব পালন করবেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এলাকা ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে জেলা পরিষদকে ১৫টি ভাগ করা হবে। প্রত্যেককে একটি করে এলাকার দায়িত্ব দেয়া হবে। তবে নারী সদস্যরা একেকজন তিনটি এলাকার দায়িত্ব পাবেন।’

আইন পাসে অধ্যাদেশ জারি করা হবে কেন- এই প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, এখন সংসদ অধিবেশন নেই তাই অধ্যাদেশ জারি করা হবে। প্রসঙ্গত, দেশে বিদ্যমান জেলা পরিষদ আইন ২০০০ সালে প্রণীত হলেও এখনও নির্বাচন হয়নি। এই প্রথমবার নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকার আইন সংশোধন করল। দ্রুত নির্বাচন করার লক্ষ্যেই আইন সংশোধন।

এর আগে ২৭ জুলাই স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে জানান, আগামী ছয় মাসের মধ্যেই জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রয়োজনে অধ্যাদেশ জারি করে নির্বচান করব।

প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ‘আইনের ২০(৩) উপধারায় বলা হয়েছে, জেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো প্রার্থী আচরণবিধি ভঙ্গ করলে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, ৬ মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। ৩১ ধারায় বলা হয়েছে, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নির্বাহী ক্ষমতা থাকবে চেয়ারম্যানের কাছে। তবে তার অনুপস্থিতিতে কাউন্সিলরদের মধ্য থেকে একজন বা সরকারি কর্মকর্তাও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তবে সেটা সরকার কর্তৃক গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে।

শফিউল আলম বলেন, বৈঠকে সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি)-২০১৫-৩৫, আরবান ট্রান্সপোর্ট পলিসি-২০১৫ এবং ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট-২০১৫ এর খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী একুশে পদকপ্রাপ্ত বাংলাদেশের অন্যতম কবি শহীদ কাদরী এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বাদী মুহিতুল ইসলামের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়।

বৈঠক সূত্র জানায়, প্রথমবার জেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে নাও হতে পারে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় এক প্রশ্নের জবাবে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আইন অনুমোদনের পর অনির্ধারিত আলোচনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জানতে চান- জেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হবে কিনা। প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি হ্যাঁ কিংবা না বলেননি। তবে মন্ত্রিসভার এক সিনিয়র সদস্য যুগান্তরকে বলেছেন, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

সূত্র জানায়, অনির্ধারিত আলোচনায় শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু সব জেলাকে ১৫টি ভাগে ভাগ করা প্রসঙ্গে বলেন, ‘কোনো জেলা ছোট আবার কোনো জেলা বড়, তাই বৈষম্য সৃষ্টি হতে পারে।’ জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে তো আসতে হবে। একটি উপজেলায় দু’জন এমপির থাকার উদাহরণও তো আছে।’

ডিসেম্বরে জেলা পরিষদ নির্বাচন : এদিকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, চলতি বছরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠান করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি পাঠানো হবে। - যুগান্তর

৩০ আগস্ট ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস‌‌‌‌

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে