সাহাদাত হোসেন পরশ : নব্য জেএমবির সমন্বয়ক তামিম চৌধুরী নিহত হওয়ার পর সংগঠনের অন্যান্য নেতাকর্মীর ব্যাপারে আরও নিবিড়ভাবে খোঁজ নিচ্ছেন গোয়েন্দারা। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, নব্য জেএমবির দুই শীর্ষ নেতা ভারতে পালিয়েছে।
তারা হলো শরিফুল ইসলাম খালিদ ও মামুনুর রশিদ রিপন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক রেজাউল করিম হত্যার পর পরই একই দিন তারা দেশ ছাড়ে। রেজাউল হত্যায় খালিদ মূল সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছে। রিপনও শিক্ষক রেজাউল করিম হত্যায় সম্পৃক্ত। সে জেএমবির উত্তরাঞ্চল এলাকার একজন শীর্ষ নেতা। খালিদ ও রিপনের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় উত্তরাঞ্চলে আরও একাধিক টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলায় তাদের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জে জঙ্গি আস্তানায় নিহত তামিমের ডিএনএ আলামতের নমুনা কানাডায় পাঠানো হচ্ছে। সেখানে তামিমের মাসহ অনেক আত্মীয়স্বজন রয়েছেন। তাদের রক্তের আলামতের সঙ্গে তামিমের আলামতের নমুনা মিলিয়ে দেখা হবে। এ ছাড়া তামিম নিহত হওয়ার ঘটনায় কানাডার পক্ষ থেকে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটকে আনুষ্ঠানিকভাবে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। গতকাল কানাডিয়ান প্রতিনিধি দল কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। এ ঘটনায় বাংলাদেশের পাশাপাশি তারাও স্বস্তি প্রকাশ করেছে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, তামিমের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিল খালিদ, রিপন, মানিক, মুরাদ ওরফে জাহাঙ্গীর। তামিম নিহত হওয়ায় পর তাদের কেউ আবার সংগঠনের 'হাল' ধরতে পারে। এর বাইরে বসুন্ধরা এলাকার বাসিন্দা বর্তমানে পলাতক ইব্রাহিম হাসান খানও নব্য জেএমবির দায়িত্ব নিতে পারে। তবে বর্তমানে ইব্রাহিম ও তার আপন ভাই জুনায়েন খান পলাতক রয়েছে। তাদের মধ্যে ইব্রাহিম দেশের বাইরে।
দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, তামিম নিহত হওয়ার পর নব্য জেএমবির সঙ্গে কথিত আইএসের যে যোগসূত্র ছিল, তা অনেকাংশে নষ্ট হবে। এ ছাড়া বিদেশ থেকে তামিম জেএমবির জন্য যে অর্থ সংগ্রহ করত, তাতেও ভাটা পড়তে পারে। মূলত তামিম দেশীয় জঙ্গিদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের যোগসূত্র স্থাপনের দায়িত্ব ছিল। গোয়েন্দারা বলছেন, জেএমবির বর্তমান নেতৃত্বের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রিপন। সংগঠনের অধিকাংশ নেতাকর্মী তাকে বেশি মান্য করে।
এর একটি কারণ, বিভিন্ন সময় জেএমবির যে শীর্ষ নেতাদের বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়েছিল, এমন একাধিক নেতা তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। বর্তমানে জেএমবির অনেকে মনে করে, যেহেতু রিপন তার একাধিক স্বজনকে হারিয়েছে, তাই সংগঠনের প্রতি তার কমিটমেন্টও সবচেয়ে বেশি। গোয়েন্দারা বলছেন, তামিম ও রিপন ২০১৩ সালের দিকে নব্য জেএমবির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে 'দুর্বল' জেএমবির পুনর্জন্ম হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সমমনা তরুণ ও যুবকদের একত্র করে দলকে গুছিয়ে নেয় তামিম ও রিপন।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, গুলশানে হলি আর্টিসান বেকারিতে হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে 'চকোলেট' নামে জেএমবির এক নেতাকে খুঁজছে পুলিশ। তার বাড়ি রাজশাহীতে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় হাসনাতের কাছে যেসব সূত্র থেকে টাকা আসত, তার বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে। তবে অধিকাংশ সময় টাকা আসত হুন্ডির মাধ্যমে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে হুন্ডির মাধ্যমে তামিমের কাছে ১৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা আসার তথ্য গোয়েন্দাদের কাছে রয়েছে।
এ ছাড়া মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা বর্তমানে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে কারাবন্দি হাসনাতের মাধ্যমে দেশের বাইরে আরেকটি সূত্র থেকে তামিমের কাছে ৩৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা আসে। যদিও তামিমের হাতে পৌঁছার আগেই তা আটকে দেন গোয়েন্দারা। এ ছাড়া জেএমবির আরেক শীর্ষ নেতা নুরুল ইসলাম মারজান মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা সিরিয়ায় নিহত জঙ্গি সাইফুল ইসলাম সুজনের বাবা হাসনাতের আরেক ছেলের গৃহশিক্ষক ছিল বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র বলছে, উত্তরাঞ্চলে একের পর এক জঙ্গি হামলার ঘটনায় পুলিশি তদন্তে খালিদ ও রিপনের নাম বেরিয়ে আসায় সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা ভারতে পালিয়ে যায়। এপ্রিল মাসের পর গুলশানসহ অন্যান্য জঙ্গি হামলায় ব্যবহার করতে তামিম চৌধুরীসহ একাধিক জঙ্গি নেতার কাছে অস্ত্র ও বিস্ফোরকের চালান আসে। ওই অস্ত্র ও বিস্ফোরক ভারত ও নেপাল থেকে বাংলাদেশে পাঠাতে রিপন ও খালিদ মুখ্য ভূমিকা রাখে বলে সন্দেহ তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের। - সমকাল
০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি