দীন ইসলাম : ডিপ্লোম্যাটিক পাউচ বা ডিপ্লোম্যাটিক ব্যাগে দেশের জঙ্গিদের কাছে অস্ত্র, অর্থ ও অবৈধ জিনিসপত্রের চালান আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এ মাসের প্রথমদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক বিশেষ প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে দেশের শীর্ষ এক গোয়েন্দা সংস্থা। ওই প্রতিবেদনে জঙ্গিদের অর্থ লেনদেন, ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, আগ্নেয়াস্ত্র সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, দুবাইভিত্তিক কোম্পানি এআরওয়াই-এর মাধ্যমে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র সহায়তায় কিছু কিছু মানি এক্সচেঞ্জ এবং হুন্ডির মাধ্যমে জঙ্গিদের কাছে অর্থ আসে মর্মে তথ্য রয়েছে। বিশেষ প্রতিবেদনে গুলশান কূটনৈতিকপাড়ার নিরাপত্তা বিষয়ে বলা হয়েছে, ১লা জুলাইয়ের ঘটনার পর গুলশান এলাকায় বসবাসরত কূটনীতিকদের সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষায় ১১ই জুলাই থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ৩ পালায় ২৪টি পয়েন্টে চেকপোস্ট স্থাপন, ২৫টি পয়েন্টে ফুট পেট্রোলসহ সাদা পোশাকে পুলিশি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।
এছাড়া, প্রতিদিনই নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুদৃঢ় করা হচ্ছে। এরপরও বেশির ভাগ কূটনৈতিক দপ্তর গুলশানের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় এবং কূটনৈতিক সংশ্লিষ্ট এলাকায় ব্যাংক, বীমা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, রিক্রুটিং এজেন্সির অফিস, শপিংমলসহ নানা ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থাকায় প্রতিদিন ওই এলাকায় প্রচুর লোকের আগমনের কারণে কূটনীতিকদের সার্বক্ষণিক নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেয়া এখনও সম্ভব হয়নি।
বিশেষ প্রতিবেদনে সুপারিশ আকারে বলা হয়েছে, কূটনীতিকদের নিরাপত্তা জোরদার ও নিশ্চিত করতে গুলশানের কূটনৈতিক এলাকাকে একটি সুনির্দিষ্ট বেষ্টনীর (ডিপ্লোম্যাটিক এনক্লেভ) মধ্যে আনা যেতে পারে। এক্ষেত্রে বারিধারা, উত্তর গুলশান (গুলশান-২ গোল চত্বর থেকে ইউনাইটেড হাসপাতাল পর্যন্ত রাস্তার দুই পার্শ্বে) এবং আমেরিকান দূতাবাস ও ভারতীয় হাইকমিশন সংলগ্ন এলাকা নিয়ে ডিপ্লোম্যাটিক এনক্লেভ গঠন করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে রাজউক এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনকে নির্দেশনা দেয়া যায়।
এছাড়া, ঢাকা মহানগরসহ সকল মহানগর, জেলা শহর এলাকায় জঙ্গি আস্তানা, মেস, ছাত্রাবাস, হোটেল, বস্তি এবং আবাসিক এলাকায় সন্দেহজনক ভাড়াটিয়াদের বাসায় অনুসন্ধান ও তল্লাশিসহ জঙ্গিবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখা যায়। একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বাসভবন, হজ ক্যাম্পে আসা বিদেশি নাগরিক, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, শপিংমল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর স্থাপনা ও আবাসস্থল, বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল, বিমানবন্দর, উপাসনালয়, সিনেমা হল, হোটেল, বিদেশি সংস্থা কর্তৃক তাদের অর্থে পরিচালিত এনজিও, বার, রেস্টুরেন্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দাতব্য সংস্থা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন।
বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা মহানগর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল জোরদার করা এবং গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় চেকপয়েন্ট বসিয়ে সন্দেহজনক যানবাহন ও সন্দিগ্ধ ব্যক্তিদের অনগার্ড পজিশনে তল্লাশি করা প্রয়োজন। এছাড়া, ঢাকা মহানগরসহ দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে (কেপিআই) নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দিয়ে তাদের দায়িত্ব, কর্তব্য ও নিজ নিরাপত্তার বিষয়ে ভালোভাবে ব্রিফিংসহ তাদের ডিউটির তদারকি নিশ্চিত করতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চিঠি পাওয়ার পর এনিয়ে কাজ শুরু করেছেন তারা।
২ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি