জুবায়ের আল মাহমুদ রাসেল: এমনিতেই ব্যস্ত রাজধানীর প্রায় সবগুলো রাস্তা সকাল থেকে মাঝরাত অবধী ব্যস্ত থাকে তীব্র যানজটে। যানজট থেকে রক্ষা পেতে ও সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে অনেককেই গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হাঁটার পথকেই বেছে নিতে হয়। কিন্তু পথচারিদের এখানেও যেন রক্ষা নেই। কারণ, পায়ে হাঁটার পথে কাঁটা। না না এ কাঁটা আসল কাঁটা নয়। এই কাঁটার নাম ‘দখল’ কাঁটা। ফুটপাত ‘দখল’ কাঁটা।
রাজধানী জুড়ে প্রায় প্রতিটি রাস্তার পাশেই পথচারিদের জন্য ফুটপাত রয়েছে। তবে অধিকাংশ ফুটপাতেই বসেছে স্থায়ী-অস্থায়ী দোকান, কোথাও কোথাও আবার রাখা হয়েছে বাস-ট্রাক। রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম, জিপিও, পুরানা পল্টন, মতিঝিল, দিলকুশা এলাকার ফুটপাতও এর বাইরে নয়। এগুলো বহুকাল থেকে হরেক পণ্যের স্থায়ী বাজারে পরিণত হয়েছে। এরফলে ফুটপাত দিয়ে চলাচল দুঃসাধ্য। কোথাও কোথাও ফুটপাত ছাড়িয়ে মূল সড়কের ওপর বসে গেছে পণ্যের পসরা। ফলে পথচারীদের ভোগান্তি আর সড়কের যানজট তীব্র হলেও প্রতিকার নেই।
শুধু গুলিস্তান নয়, রাজধানীর শ্যামলী রিং রোড, মিরপুর কালসী, বিমানবন্দর সড়ক, খিলক্ষেতসহ পুরো রাজধানীর চিত্র প্রায় এক। কোথাও ফুটপাত ও সড়কের একাংশ দখল করে চলছে নির্মাণসামগ্রীর ব্যবসা, কোথাও আবার রেস্তোরাঁর চুলা জ্বলছে ফুটপাতের ওপর। মোটরসাইকেল সারাই, যানবাহন মেরামতের কাজও চলছে ফুটপাত আর সড়কের ওপরে। পথচারীদের পায়ে চলার যেন উপায়ই নেই। বাধ্য হয়ে সড়ক দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে বেশিরভাগ মানুষকে।
ঢাকার দুই মেয়র এসব অবৈধ দোকান ও মালামাল সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিলেও তা যেন কোনভাবেই কার্যকর হচ্ছে না
বীর উত্তম কাজী নুরুজ্জামান সড়কের পশ্চিম পান্থপথ অংশে দেখা যায়, সড়কের পাশের খাবার হোটেল ও রেস্তোরাঁর সামনে ফুটপাতের ওপর চুলা জ্বলছে। তৈরি হচ্ছে কাবাব, গ্রিল, পরোটা, মাংসের চাপসহ নানা খাবার। চুলা থেকে ধোঁয়া আর আগুনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশে। দিন-রাতের বেশির ভাগ সময়ই চুলা জ্বলতে থাকে। আর সড়কেও সব সময় যানবাহনের ভিড় লেগেই থাকে। এর মধ্যে মানুষজন ফুটপাত ব্যবহার করতে পারে না।
মিরপুরের কালশী সড়কে দেখা যায়, ফুটপাতের ওপরে সিএনজিচালিত অটোরিকশার রংয়ের কাজ চলছে। পাশে চলছে লেপতোশক তৈরির কাজ। এর সামনে করাত কলের কাঠের গুঁড়ি রাখা। আছে লোহালক্কড়, আসবাবের দোকানের বিভিন্ন সামগ্রী। নেই শুধু পথচারীদের হাঁটার জায়গা।
পুরো রাজধানীর প্রায় সব এলাকার চিত্র কমবেশি এ রকম। ফলে পথচারীরা দুর্ভোগে পড়ছেন, তাঁরা বাধ্য হচ্ছেন সড়ক দিয়ে চলতে।
এ অবস্থায় রাজধানীবাসীর জনজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে। এ দুর্ভোগ নগরবাসীর নিত্যদিনের। বর্তমানে এ দুর্ভোগ যেন আরো তীব্র হয়েছে। যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী হেঁটে গৌন্তব্যে পৌঁছাতে চাইলেও তা পারছেন না। তাই নগরবাসীকে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এমনটাই প্রত্যাশা সবার। নগরবাসীর এই আকুতি কর্তৃপক্ষের কানে কী পৌঁছায় না?
লেখক: সাংবাদিক, নিউজ টোয়েন্টিফোর টেলিভিশন
০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস